সাম্প্রতিক আপডেটঃ

ইসলামে সেবার গুরুত্ব

অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান

সেবা মানবতার ধর্ম, জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ সেবা গ্রহণ করে ও সেবা প্রদান করে একে অপরকে। এই সেবার জন্য আদিকাল হতে আধুনিক বিশ্বের আবির্ভাব পর্যন্ত সেবার মাত্রা বিস্তৃত হয়েছে বহুগুণ। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশ্বব্যাপী-অঞ্চল ব্যাপী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। যদিও বা এগুলো অনেকটা রাজনৈতিক, যতোটা না সেবামূলক। তবুও কোন প্রকারে ও ইংগিতে কেউ না কেউ এতে উপকৃত হচ্ছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সেবার মনোভাব। কাফের মুশরিকগণও সেবা প্রদান করে বিভিন্ন উপায়ে। আর্ত-মানবতার সেবার কথা গুরুত্ব পেয়েছে জাতিসংঘের সংবিধানেও। অমুসলিমদের কেউ বলেন, ‘জীবে দয়া করে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর।’ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিপীড়িত নিগৃহীত লাঞ্চিত মানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসে সকল গোত্রের মানুষ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই মানবতার সেবায় এগিয়ে আসে। যদিও এদের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য বিদ্যমান।

সেবার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে বিবৃত পন্থা সর্বোত্তম ও স্রষ্টার নিকট গ্রহণযোগ্য। সর্বপ্রকার সেবাকাজের সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের অধিকারী হলেন আমাদের আক্বা মাওলা রাহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুর নির্দেশিত পথের সঠিক ও সর্বোত্তম প্রয়োগকারী হচ্ছেন আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। যে বৃদ্ধা নবীজিকে গালিগালাজ করেছে তার বোঝা রাহমাতুল্লিল আলামীন বহন করে গন্তব্যে পৌঁছে দেন, ফারুকে আযম হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখা যায় গমের বস্তা কাঁধে বহন করে অভাবীর ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন- এরকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান। আবার নমরূদ, ফেরআউন, কেনানের উত্তরসূরিরও অভাব নেই এ সমাজে। ইসলাম মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পবিত্র ক্বোরআন মজীদে দানকে বলা হয়েছে ‘ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ।’ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। আর এ ব্যয়কে সাদকা অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে। বিশেষক্ষেত্রে ‘সাদকা’ যাকাতকে বোঝানো হলেও ব্যাপক অর্থে শব্দের শব্দমূল হচ্ছে ‘সিদক’। ‘সিদক’র অর্থ সততা, বাস্তবতা, সত্যনিষ্ঠা, যথার্থতা প্রভৃতি আর এই সব অর্থগত কারণেই সাদকার তাৎপর্য বিভাসিত হয়েছে দান-খায়রাতের মতো প্রশংসনীয় কার্যাদিতে যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় অর্থকে ধারণ করেছে।

ইসলামে দান-খায়রাত বুঝাতে ‘ইহসান’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দের প্রয়োগভেদে বিভিন্ন অর্থ রয়েছে, তবে দানের ক্ষেত্রে ‘ইহসান’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সৎকর্ম করা, সদ্ব্যবহার করা, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা, পরোপকার করা বা বদান্যতা। আমাদের পার্থিব জীবনের কাজকর্মের সাথে কি এর সম্পৃক্ততা আছে? হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফরমান, দানশীল ব্যক্তি (আস্-সাথী) আল্লাহর সন্নিকটে জান্নাতের কাছাকাছি এবং মানুষের নিকটবর্তী, আর বখীল (কৃপণ) আল্লাহ থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে এবং দোযখের কাছে। [তিরমিযী শরীফ]

ক্বোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে যতগুলো সৎকর্ম বা ‘আমালুস্ সালিহ’র নির্দেশ রয়েছে তন্মধ্যে দুর্গত ও বিপন্ন মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অর্থকড়ি, খাদ্য, বাসস্থান বস্ত্র চিকিৎসা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা অধিকতর সওয়াবের কাজ। ‘ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ্’ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় অর্থাৎ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দান করার মাহাত্ম্য সম্পর্কে ক্বোরআন মজিদে ইরশাদ হযেছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় (ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ্) করে তাদের উপমা হচ্ছে একটি শষ্যবীজের মতো যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষের একশ শীষ দানা। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে বহুগুণে দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [সূরা বাকারা, আয়াত-২৬১]

ইসলাম বিত্তবান ও সামর্থ্যবানদের ধন-সম্পদে, দুর্গত বিপন্ন ও অভাবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। স্বতঃপ্রণোদিত দান বা বাধ্যতামূলক দান উভয় দান-খায়রাত হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য। এ কর্তব্য পালন করতে গিয়ে দাতা গ্রহীতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করার কিছুই নেই। কারণ দাতা দান করার মধ্য দিয়ে মানবতার দাবী পূরণ করে, আর সেই সাথে লাভ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ। অন্য দিকে দান গ্রহীতা বিপন্নতা হতে মুক্তি পেয়ে মানবতার স্পর্শে ধন্য হয়ে আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হিসেবে গণ্য হতে পারে। প্রিয় নবী ফরমান, ‘আররহিমুনা ইয়ারহামুহুমুর রহমানা’- বদান্যদের প্রতি করুণা বন্টন করেন করুণাময় রহমান। [তিরমিযী শরীফ]

অপর এক হাদীসে আছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না আল্লাহ্ও তার প্রতি রহমত করেন না।’ [তিরমিযী শরীফ]

ক্বোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করার খাতিরে ধন-শস্য ব্যয় করে তাদের উপমা কোন উচ্চভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তাতে দ্বিগুণ ফলমুল জন্মায়, যদি মুষলধারে বৃষ্টি না হয় তাহলে অল্পবৃষ্টিই যথেষ্ট। তোমরা যা করো আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা। [সূরা বাকরা: আয়াত- ২৬৫]

যারা আল্লাহর রাস্তায় ধনশোর্য্য ব্যয় করে কথা বলে বেড়ায় না এবং ক্লেশও দেয় না, তাদের পুরষ্কার তাদের রবের নিকট আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং দুঃখিতও হবে না। যে দানের পর ক্লেশ দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা শ্রেয়। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত ও সহনশীল। হে মুমিনগণ দানের কথা বলে বেড়িয়ো না এবং ক্লেশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল- যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। তার উপমা একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, অতঃপর তার উপর বৃষ্টিপাত হয়ে তা পরিষ্কার করে রেখে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারে না। [সূরা বাকারা: আয়াত-২৬২-২৬৪]

এই সব আয়াতে করীমা হতে বুঝা যায় যে, দান-খায়রাত করতে হবে খাটি নিয়তে ও খালেস অন্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। দান করতে হবে দুর্গত দুর্দশাগ্রস্ত, নিঃস্ব মানুষের দুর্গতি লাঘবে, অসহায়ত্ব ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্য স্থির করে। ক্বোরআন মজীদে সম্মানজনক, উত্তম ও পছন্দসই জিনিষ দান করার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যা ভালোবাস তা হতে ব্যয় (দান) না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় (দান) করো আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। [সূরা আল্ ইমরান: আয়াত-৯২]

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী ফরমান: প্রবঞ্চক, দান করে খোটা প্রদানকারী এবং কৃপণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।[তিরমিযী শরীফ]

কারো পক্ষে ধন-সম্পদ দিয়ে দুর্গত মানুষের সাহায্য করার সামর্থ না থাকে সে যদি দুর্গত মানুষের পাশে গিয়ে সান্তনা দেয়, শ্রম দিয়ে তাকে সাহায্য করে সেটাও সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফরমান, তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি তোমার জন্য সাদকা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া অসৎ কাজে নিষেধ করাও সাদকা, পথ হারিয়ে ফেলেছে এমন ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদকা, দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানো সাদকা, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, (যে কোন ধরনের কষ্টদায়ক প্রতিবন্ধকতা) সরিয়ে ফেলাও সাদকা, তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেয়াও সাদকা। [তিরমিযী শরীফ]

আরো ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো সেটাও ভাল, আর যদি গোপন করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও সেটা আরও ভালো। [সূরা বাকারা: আয়াত-২৭১]

যে নিজের সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য এবং কারো প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়, কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়; সে তো অচিরেই সন্তোষ লাভ করে। [সূরা লায়ল: আয়াত-১৮-২০]

প্রিয় নবীজি আরো ফরমান: আল্লাহ্ পৃথিবী সৃষ্টি করলে তা টলতে লাগালো: তখন তিনি (আল্লাহ্) পাহাড় সৃষ্টি করে পৃথিবীর ওপর বসিয়ে দিয়ে স্থির থাকতে বললেন, পৃথিবী স্থির হয়ে গেলো, ফিরিশতারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে রব! আপনার সৃষ্টিতে এর থেকে শক্তিশালী আর কিছু কি আছে? আল্লাহ্ বললেন, হ্যাঁ লোহা। তারা (ফিরিশতারা) বললো, লোহার চেয়ে আপনার সৃষ্টির মধ্যে অধিক শক্তিশালী আর কিছু আছে? আল্লাহ্ বললেন, মানুষের সে দান যা সে ডান হাতে প্রদান করে, কিন্তু তার বাম হাত তা জানতে পারে না। [তিরমিযী শরীফ]

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে আকরাম ফরমান, আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান (মানুষ) আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমার খোঁজ খবর রাখনি। সে বলবে, আমি কেমন করে আপনার খোঁজ খবর রাখবো, আপনি রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ্ বলবেন: ‘তুমি কি জানাতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিলো অথচ তুমি তাকে সেবা করোনি তাকে সেবা শুশ্র“ষা করলেই তুমি তার কাছে আমাকে পেতে।’ আল্লাহ্ বললেন, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কি করে আপনাকে খাওয়াতে পারি? আপনি তো রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ্ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিলো তুমি কি জানাতে না? তুমি তাকে আহার করাওনি। তুমি যদি তাকে আহার করাতে তাহলে অবশ্যই তার কাছে আমাকে পেতে।’ আল্লাহ্ বলবেন: হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।’ সে বলবে, হে আমার রব আমি কি করে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ্ বলবেন: ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে।’ [মুসলিম মরীফ]

মানুষ আশরাফুল মখলুকাত আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানুষের রোগে শোকে, দুর্যোগে, অভাবে, দুর্দশায় পতিত হলে পরস্পর সাহায্য করবে সেবা দান করবে, তাই বলা হয় মানুষ মানুষের জন্য। এ কথার মর্মার্থ কি আমরা উপলব্ধি করছি? মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র চলছে মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ মহামারী বাস্তু চ্যুতি, পরস্পর হত্যা লুন্ঠন নির্যাতন নিপীড়ন ইজ্জত আব্র“ লন্ঠন করা হচ্ছে, কারা করছে? এক মুসলিম অপর মুসলিম ভাইবোনের উপর চালাচ্ছে নির্যাতন ধ্বংসযজ্ঞ। আর সেবা প্রদান করছে খ্রিস্টান-নাসরা-মুশরিকগণ। এই কি ইসলামের শিক্ষা! এর নাম কি খিলাফত আন্দোলন? এ সকল কার্যক্রম ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের বিরুদ্ধে কলংকজনক অধ্যায় নয় কি? ইসলামী পণ্ডিত, দার্শনিক শক্তিধর ক্ষমতাবান রাজা-বাদশাহ্গণ ওআইসি কি করছে? আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু ও প্রিয় নবীর নির্দেশাবলী আদেশ উপদেশ সবকিছু ভুলে গিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ আর সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে ইহুদি-নাসারাদের নিকট নিরাপত্তা ভিক্ষা করছে। এর চেয়ে অপমানজনক কাজ আর কি হতে পারে। এখনো যদি আমরা প্রিয় নবীর দেখানো পথে চলতে না শিখি, তাহলে সামনে অপেক্ষা করছে আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুর আরো কঠোর অভিসম্পাত। আসুন আমরা নবী-অলী প্রেমিক হই, ক্ষমতা, ধন-সম্পদের প্রেমিক আল্লাহ্-রাসূলের বিরোধীতাকারী হলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। মহান আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু আমাদের সৎপথে চলার তাওফিক এনায়েত করুন। বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম ভাইবোনদের প্রতি রইলো আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। অসহায় ভাইবোনদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা ও সহানুভুতি। আল্লাহ্ আমাদের সংকট থেকে রক্ষা করুন। আমাদের আক্বা মাওলা তাজেদারে মদীনা হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র উধৃতি ‘সেবা’র (ইহসান) সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে সার্বক্ষণিক প্রেরণা যোগায় মুমিন মুসলমানদের হৃদয়ে।

এক. একজন সাহাবী প্রিয় নবীজির সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাকে সৎকাজের নির্দেশ দিন। প্রশ্নোত্তরে হুযূর জানতে চাইলেন তাঁর মাতা-পিতা জীবিত আছেন কিনা! সাহাবা বললেন, তাঁর মাতা-পিতা জীবিত আছেন। প্রিয় নবীজি ফরমান ‘তোমার মাতার সেবা করো, দ্বিতীয় বার পুনরায় সাহাবা বললেন, তাকে আরও একটি সৎকাজের নির্দেশ প্রদান করতে, প্রিয় নবীজি পুনঃবললেন, ‘তোমার মাতার সেবা করো, তৃতীয় বারের মতো সাহাবা আরজ করলেন আমাকে আরও একটি সৎকাজের নির্দেশ দিন, পুনরায় হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন, তোমার মাতার সেবা করো! তিন তিনবার একই উত্তরে সাহাবা চতুর্থবার একই প্রশ্ন করলে প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন ফরমালেন, তোমার পিতার সেবা করো!

দুই, একদা অন্ধ বয়স্ক/যুবক প্রিয় নবীর দরবারে জেহাদে অংশ গ্রহণ করার অনুমতি প্রার্থনা করলে রাহমাতুল্লিল আলামীন ফরমান ‘মাতা-পিতার সেবা করো, জেহাদে যাবার প্রয়োজন নেই।’

সৃষ্টির কল্যাণে পরিচালিত সকল কর্মকাণ্ড সেবার (ইহসান) মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রীয় বা সমাজ ব্যবস্থাপনায় দেশ-জাতির কল্যাণ তথা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রভৃতিও এক ধরনের সেবা, যারা সমাজে ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তারা সবাই সেবক, কেননা তারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মন্ত্রী, আমলা-কর্মচারী সকলেই সেবামূলক কাজের জন্য নিয়োজিত, হউক সে বেতনভূক বা অনারারী। বহির্বিশ্বের কথা নাই-ই বা বললাম আমাদের এই জান্মভূমি বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরে যারা নেতৃত্ব বা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা কি জনগণের সেবা করছেন না নিজেরা জনগণকে নিঙরিয়ে সেবা নিচ্ছেন সেটাই দেখার বিষয়। সেবা বা জনকল্যাণের কথা বলে প্রতিনিধি হয়ে নিজের আখের গোছানোর দিকেই সকলের দৃষ্টি। এজন্য দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও মাস্তান নির্ভর সমাজ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। ফলশ্র“তিতে মুসলিম বিশ্ব (বাংলাদেশসহ) অবক্ষয়ের চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ধ্বংস থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? কোথায় মুসলিমদের মুক্তিনিহিত? একথা যতো শীঘ্রই উপলব্ধি করতে পারবো, তাতোই শীঘ্রই মুক্তি মিলবে। আল্লাহ্ আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পরিচালিত করুন। আ-মী-ন।

Check Also

সৎ লোকদের সান্নিধ্য

শায়খ আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. আত্মশুদ্ধি বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *