সাম্প্রতিক আপডেটঃ

নবী বংশের পবিত্রতা

মূলঃ হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁ নঈমী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি।
অনুবাদঃ আল্লামা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান হাবিবী।

প্রশ্নঃ ওলামায়ে দ্বীন এ মাসয়ালার ব্যাপারে কি অভিমত প্রকাশ করেন যে, যায়েদ নামক ব্যক্তি বলেছে, ইসলামের মধ্যে সকল বংশ,গোত্র সমপর্যায়ের।কেউ কারো থেকে উত্তম নয়।এ জন্য সৈয়্যদ, পাঠান,তেলি,নাপিত,ধোপা সবাই এক সমান।অবশ্য পরহেজগার বা খোদা ভীতির দিক দিয়ে উত্তম হতে পারে,তবে বংশের দিক নয়।সে এমনও হতে বলে যে, নিজ আমল ব্যতীত বাপ-দাদার খোদাভীরুতাও কোন কাজ দেবে না।যায়েদ দলিল হিসেবে নিম্নোক্ত আয়াতে করীমা পেশ করেছে,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
অনুবাদঃ এবং তোমাদেরকে শাখা-প্রশাখা ও গোত্র-গোত্র করেছি, যাতে পরস্পরের মধ্যে পরিচয় রাখতে পারো।নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে অধিক সম্মানিত সেই, যে তোমাদের মধ্যে অধিক খোদাভীরু। [সূরা হুজরাত-১৩] এভাবে হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘হে ফাতেমা! আমি তোমার থেকে আল্লাহর শাস্তি উঠিয়ে নিতে পারব না।’

অপর দিকে ওমর নামক ব্যক্তি বলেন যে, না বরং সৈয়্যদ বংশীয়রা (আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা) সকল বংশের মধ্যে উত্তম এবং সম্মানিত (মুত্তাকী) বাপ-দাদার আমল অবশ্যই সন্তানদের কাজে আসবে।উভয়ের মধ্যে কার বক্তব্য সঠিক তা প্রমাণ সহকারে বিস্তারিত বর্ণনা করুন।

উত্তরঃ
উপরিউক্ত উভয় বক্তব্যের মধ্যে ওমর নামক ব্যক্তির বক্তব্যই সঠিক এবং যায়েদ এর বক্তব্য ভুল এবং বাতিল।সা’দাতে কেরাম তথা আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর মর্যাদা সকল বংশ ও গোত্রের চেয়ে উৎকৃষ্ট ও উত্তম।

আর মু’মিনদের মধ্যে যাঁরা সৎকর্মশীল তাঁদের আমলও ইন্‌শাআল্লাহ তাঁদের সন্তানদের কাজে আসবে।উভয় মাসয়ালা কুরআনুল করীম, বিশুদ্ধ হাদীস এবং যুক্তির নিরিখে প্রমাণিত।

কুরআনে পাকের প্রামাণ্য দলিল

দলিল নম্বরঃ ১
أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
অনুবাদঃ (আল্লাহ্ পাক বলেন,) আমি জান্নাতের মধ্যে মু’মিনদেরকে তাদের সন্তানদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের  নেক আমলে কোন ঘাটতি করা হবে না। [সূরা তূর-২১] এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝা গেল যে, কিয়ামত দিবসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর মু’মিন আওলাদগণ নবী আকরামের সাথেই থাকবেন।এর দ্বারা আওলাদে রাসূলের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হল।এবং নেককারদের আমল যে কাজে আসবে তাও জানা গেল।

দলিল নম্বরঃ ২
قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ
অনুবাদঃ হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, আমি এ (পথ প্রদর্শন ও ধর্ম প্রচার)’র বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার আহলে বাইত তথা আওলাদে রাসূলের ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চা‌ই না। [সূরা শুরা-২৩] এ আয়াতের এক তাফসীরে এমনও আছে যে, নবী আকরাম  সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেন, ‘হে উম্মতগণ! আমার হক্বের কারণে আমার আওলাদকে ভালবাস।’ তাহলে বুঝা গেল যে, নবী আকরামের কারণেই আহলে বাইতে রাসূলকে ভালবাসা অপরিহার্য, যা অন্য কোন বংশের মধ্যে  নেই।

দলিল নম্বরঃ ৩
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ
অনুবাদঃ জেনে রাখ, গণিমতের সম্পদ হিসেবে তোমরা যা কিছু পাবে তার পাঁচটি অংশ আল্লাহ্, রাসূল, আহলে বাইতে রাসূল, এতিম এবং মিসকিনদের জন্য। [সূরা আনফাল-৪১] তাহলে প্রতীয়মান হলো যে, নবী-ই আকরাম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামানায় গণিমতের মালের মধ্যে আওলাদে রাসূলের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা অংশ ছিল।

ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি- এর মতে, শুধু সে সময় নয় বরং অদ্যবধি আওলাদে রাসূলগণ তাঁদের অংশ পাবেন, সে সম্মান অন্য কোন বংশের প্রাপ্তি হয়নি।

দলিল নম্বরঃ ৪
وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنْزلَهُمَا
অনুবাদঃ হযরত খিজির আলাইহিস সালাম হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন, এই দেয়ালের নিচে দু’টো ছেলের গুপ্ত ধনভান্ডার রয়েছে।তাঁদের উভয়ের পিতা সৎ কর্মপরায়ণ ছিলেন, সে জন্য আপনার রবের ইচ্ছা যে, উভয় ছেলে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং তারা তাদের সম্পদ বের করবে। [সূরা কাহ্ফ-৮২] এ আয়াতের মাধ্যমে জানা গেল যে, এ দুই এতিম শিশুর প্রতি আল্লাহ তা’আলা এ কারণে দয়া পরবশ হয়েছেন যে, তাদের পিতা মুত্তাকী-পরহেজগার ছিলেন।প্রমানিত হলো যে, নেককার ব্যক্তির নেক আমলের কারণে সন্তানরাও উপকৃত হয়।সে কারণে নবী-ই আকরামের নেক আমলের কারণে আওলাদে রাসূলগণ অবশ্যই উপকৃত হবেন।

দলিল নম্বরঃ ৫
وَجَعَلْنَا فِي ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ
অনুবাদঃ আমি নূহ ও ইব্রাহীম এর সন্তানদের মধ্যে নবূয়্যত ও কিতাব রেখেছি। [সূরা হাদীদ-২৬] হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম- এর পরে যত নবী এসেছেন সবাই তাঁদের সন্তানদের মধ্যেই হয়েছেন এবং সকল কিতাব সহীফা তাঁদের উপরই এসেছে।হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম- এর কারণেই তাদের সন্তানদের এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন হয়েছে।

দলিল নম্বরঃ ৬
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
অনুবাদঃ হে ইয়াকুবের সন্তানগণ! ঐ সকল নে’মাতকে স্বরণ কর, যা আমি তোমাদের দান করেছি ।এবং সে সময়ে পৃথিবীর মধ্যে তোমাদেরকেই শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। [সূরা বাকারা-৪৭] এ আয়াতে কারীমা দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, সে সময়ে হযরত ইয়াকুব আলাইস সালাম- এর কারনে তাঁর বংশধরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্মান দান করেছিলেন আর আজ বিশ্বে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর কারণেই আওলাদে রাসূল সকল বংশের উপর উঁচু মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।

দলিল নম্বরঃ ৭
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاء وَجَعَلَكُم مُّلُوكاً وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَداً مِّن الْعَالَمِينَ
অনুবাদঃ এবং যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললো স্বীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরণ করো যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে পয়গাম্বর করেছেন, তোমাদেরকে বাদশা করেছেন এবং তোমাদেরকে তাই দিয়েছেন যা আজ সমগ্র জাহানের মধ্যে কাউকেও দেননি। [সূরা মাইদাহ-২০] এ আয়াতের মাধ্যমে প্রতীয়মান হলো  যে, কোন গোত্রের মধ্যে নবীর আগমন হওয়াটা আল্লাহ তা’আলার একটি বিশেষ নে’মাত।যার থেকে অন্যান্য গোত্র বঞ্চিত।এ কারণে আওলাদে রাসূলের উপর বিশেষ রহমত হচ্ছে নবীজী তাশরীফ এনেছেন।

দলিল নম্বরঃ ৮
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ
অনুবাদঃ হে নবীর বিবিগণ! যদি তোমরা খোদাভীরুতাকে অর্জন করো, তাহলে তোমরা অন্য নারীর সমতুল্য নও। [সূরা আহযাব-৩২] প্রমাণিত হলো যে, নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর নেককার বিবিগণ পৃথিবীর সকল নেককার বিবিগণের চেয়ে উত্তম।কেননা তাঁরা নবীর বিবি।এ কারণেই আহলে বাইতে রাসূলের মধ্যে যারা মুত্তাকী-পরহেজগার তাঁরা পৃথিবীর সকল নেককার পরহেজগার অপেক্ষা শ্র্র্র্রেষ্ঠ।কেননা তাঁরা নবী-ই আকরামের আওলাদ।

দলিল নম্বরঃ ৯
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيراً
অনুবাদঃ হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পূতঃপবিত্র রাখতে চান। [সূরা আহযাব-৩৩] এ আয়াতে কারীমা দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আহলে বাইতে রাসূলকে পুতঃপবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন।কেননা তাঁদের সম্পর্ক রাহমাতুল্লিল আলামীনের সাথে হয়েছে।এ বৈশিষ্ট্য অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি এবং জুটবেও না।অন্যথায় আওলাদে রাসূলের বৈশিষ্ট্যই বা কি রইলো ?

দলিল নম্বরঃ ১০
وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ
অনুবাদঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর দরবারে প্রর্থনা করেছিলেন হে মা’বুদ! আমার সন্তানদের মধ্যে এক দলকে তোমারই অনুগত কর। [সূরা বাক্বারা-১২৮] এ দোয়ার মাধ্যমে বুঝা গেল যে, নবীর আওলাদগণ কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।পক্ষান্তরে, ইসলামের অন্যান্য গোত্রসমূহ পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দলিল নম্বরঃ ১১
لَا أُقْسِمُ بِهَٰذَا الْبَلَدِوَأَنْتَ حِلٌّ بِهَٰذَا الْبَلَدِ وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ
অনুবাদঃ হে মাহবুব! আমি ঐ শহরের শপথ করছি, যে শহরে আপনি তাশরীফ এনেছেন । আর আপনার পিতা (পূর্ব পুরুষ) ইব্রাহীমের এবং তাঁর সন্তানের শপথ। [সূরা বালাদ-১,৩] এ আয়াতের অন্যতম ব্যাখ্যা হচ্ছে, এখানে ‘পিতা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আর ‘সন্তান’ দ্বারা বুঝায় আওলাদে রাসূল।প্রতীয়মান হলো যে,নবী-ই আকরামের শহর সকল শহর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদা সম্পন্ন এবং নবীর বংশ সকল বংশ অপেক্ষা সর্বোৎকৃষ্ট,যা আল্লাহ তায়ালা শপথের মাধ্যমে ফরমায়েছেন।অথবা এটাও হতে পারে যে,ওয়ালেদ তথা পিতা দ্বারা হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উদ্দেশ্য আর সন্তান দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

হাদীসে পাকের আলোকেঃ
এ প্রসঙ্গে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অসংখ্য হাদীস বিদ্যমান। তিনি এরশাদ করেছেন – হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা জান্নাতী যুবকদের এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জান্নাতী রমনীদের সরদার।এ ধরনের কিছু হাদীস শরীফ নিম্নে পেশ করা হল।

হাদীস- ১
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله اصطفى كنانة من ولد إسماعيل واصطفى قريشاً من كنانة واصطفى من قريش بني هاشم واصطفاني من بني هاشم
অনুবাদঃ হযরত রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান –নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈল আলায়হিস সালাম– এর সন্তানদের মধ্যে কানানাকে নির্বাচিত করেছেন এবং বনী কানানা-এর মধ্যে কুরাইশকে এবং কুরাইশদের মধ্যে বনী হাশেমকে বেছে নিয়েছেন আর বনী হাশেম থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন। (মুসলিম, তিরমিযী এবং মিশকাত শরীফ-ফাযায়েলে সৈয়্যদিল মুরসালিন অধ্যায়)
প্রতীয়মান হল যে,উল্লেখিত বংশগুলো পৃথিবীর অন্যান্য সকল বংশ অপেক্ষা উত্তম ও সম্মানিত ।

হাদীস- ২
وأنا تارك فيكم ثقلين، أولهما كتاب الله فيه الهدى والنور، فخذوا بكتاب الله واستمسكوا به ” فحَثَّ على كتاب الله ورغَّبَ فيه، ثم قال :” وأهل بيتي، أذكِّرَكُمُ الله في أهل بيتي، أذكِّرَكُمُ الله في أهل بيتي، أذكِّرَكُمُ الله في أهل بيتي
অনুবাদঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান-আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী ও সর্বোত্তম জিনিস রেখে যাচ্ছি।এক. আল্লাহ তা’আলার কিতাব যার মধ্যে হেদায়াত এবং নূর রয়েছে।একে ভালভাবে ধারণ কর।কিতাবুল্লাহর উপর মানুষদিগকে উৎসাহ দিয়েছেন।দ্বিতীয় হচ্ছে,আমার আহলে বাইত।আমি তোমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন করছি।তোমরা আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। [মুসলিম শরীফ] এ হাদীসে পাকের মাধ্যমে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হল যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি  ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বংশধর তথা আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা কুরআনে কারীমের মতই।যেমনিভাবে ঈমানের জন্য কুরআনকে মানা অপরিহার্য,তেমনিভাবে নবীজীর আহলে বাইতকেও মানা অপরিহার্য।দ্বিতীয় কোন বংশ এ মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

হাদীস- ৩
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احبونى لحب الله واحبوا اهل بيتى لحبى
অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আালায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান,আল্লাহর ভালবাসার কারণে আমাকে ভালবাস আর আমার কারণে আমার আহলে বাইতকে ভালবাস। [তিরমিযী শরীফ]

হাদীস- ৪
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك
অনুবাদঃ হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হযরত রাসূলে আকদাস সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান- তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বাইত হচ্ছে হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম– এর কিশ্‌তীর মত।যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তিপাবে আর যে দূরে থাকবে সে ধ্বংশ হয়ে যাবে। [মুসনাদে ইমাম আহমাদ শরীফ]

হাদীস- ৫
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى تارك فيكم ماان تمسكتم به لن تضلوا بعدى احدهما اعظم من الاخر كتاب الله حبل ممدود من السماء والارض وعترتى اهل بيتى ولم يتفرقا حتى تردا على الحوض فانظروا كيف تخلفونى فيهما
অনুবাদঃ হযরত যায়েদ বিন আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত,হযরত রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান- আমি তোমাদের মাঝে ওই বস্তু রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না্ ‌।এদের মধ্যে একটি অপরটির চাইতে বড়।এক.আল্লাহর কিতাব যা প্রশস্ত রশি।অপরটি আমার আহলে বাইত।এই উভয়টা একটা অপরটা হতে পৃথক হবে না।এমনকি আমার হাউজের উপরও আমার পাশে থাকবে।অতঃপর তোমরা ভেবে দেখো এ দুটির ব্যাপারে তোমরা কিভাবে অনুসরণ করবে। [তিরমিযী শরীফ]

হাদীস- ৬
قال النبى صلى الله عليه وسلم إن هذه الصدقة إنما هي أوساخ الناس وإنها لا تحل لمحمد ولا لآل محمد صلى الله عليه وسلم
অনুবাদঃ আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, এই সদকাহ (যাকাত) লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দাও।এটা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের জন্য হালাল নয়। [মুসলিম শরীফ] প্রতীয়মান হল,যে এ সমস্ত বরকত অর্জিত হয়েছে এক মাত্র নবীজীর আওলাদ হওয়ার কারণে।আওলাদে রাসূল ব্যতীত অন্যরা যতই পরহেযগার হোক না কেন এ মহত্বতা কখনো সৌভাগ্য হবে না।তাহলে বুঝা গেল,নবীজীর আওলাদগণ কতই না উত্তম।

হাদীস- ৭
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة ، إلا سببي ونسبي
অনু্‌বাদঃ রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক ব্ংশীয় ও আত্মীয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে,তবে আমার বংশ ও আত্মীয়ের সম্পর্ক কাজে আসবে। [দূররে মুখতার ] উপরি্‌উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত কুলসুম বিনতে ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে শাদী করেছেন, যাতে মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে।পক্ষান্তরে, আল্লাহ তা’আলা কালামে পাকে ঘোষণা করেন-
فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ
অনু্‌বাদঃ কিয়ামত দিবসে কোন বংশ পরিচয় কাজে আসবে না। [সূরা মু’মিন-১০] এর ব্যতিক্রম হচ্ছে নবীজীর আহলে বাইত উক্ত আয়াতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়।যেখানে হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত দিবসে সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দেবেন। সেখানে নিজের আওলাদকে ক্ষমা করবেনা, এ কেমন করে হতে পারে?

হাদীস- ৮
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الناس تبع لقريش في هذا الشأن، مسلمهم تبع لمسلمهم، وكافرهم تبع لكافرهم
অনুবাদঃ রাসূলে আত্বহার সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান– সমস্ত মানবজাতি কুরাইশদের অনুসারী।সাধারণ মুসলমান মুসলিম কুরাইশের অনুসারী।আর কাফেরগন কাফের কুরাইশের অনুসারী। [বুখারী,মুসলিম ও মিশকাত-মানকেবে কুরাইশ অধ্যায়]

হাদীস- ৯
قال النبى صلى الله عليه وسلم لا يزال هذا الأمر في قريش ما بقي من الناس اثنان
অনুবাদঃ নবী- এ দোজাহাঁ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান-এই প্রতিনিধিত্ব কুরাইশদের মধ্যেই বিরাজমান থাকবে।যতক্ষণ দু’জন ব্যক্তিও অবশিষ্ট থাকবে। [বুখারী ও মুসলিম] এ হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল যে, পৃথিবীর সকল মুসলিম কুরাইশদের অনুসারী এবং ইসলামী প্রতিনিধিত্ব কুরাইশদের জন্যই নির্ধারিত।

যুক্তিনির্ভর দলিলঃ
যুক্তির দাবিও এই যে, হুযূর নবী-এ দোজাহাঁ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশ পৃথিবীর সকল বংশ ও গোত্র অপেক্ষা শ্র্রেষ্ঠ ও মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া । নিম্নে কয়েকটি যুক্তি নির্ভর দলিল পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি –

দলিল- ১
যেখানে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে কংকর , পাথর এবং জীব জন্তুরা সম্মানের অধিকারী হয়।এমনকি নবীজীর নাক্বা শরীফ(উষ্ট্রী)পৃথিবীর সকল উট থেকে উত্তম।হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র শহর মদীনা মুনাওয়ারার ধুলি-কণা রাজা-বাদশাহর মুকুট থেকে শ্রেয়।
যেমন – আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কুরআনে করীমে সূরা বালাদ-এ নবীজীর সেই শহরের শপথ করে বলেন- لَا أُقْسِمُ بِهَٰذَا الْبَلَدِ
সেখানে আল্লাহর নবীর প্রাণপ্রিয় আওলাদগণ অবশ্যই অন্যান্য সকল বংশ ও গোত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান হবেনই।

দলিল- ২
পৃথিবীর অন্য মানুষ যাকাত ফিতরা খেতে পারবে, কিন্তু আওলাদে রাসূলগণ তা গ্রহণ করতে পারবেনা।কেননা যাকাত হচ্ছে সম্পদের আবর্জনা।আওলাদে রাসূল ব্যতীত অন্যরা উচুঁ বংশীয় হলেও যাকাত গ্রহণ করতে পারবে, যদি তা গ্রহণের উপযোগী হয়।তাহলে বুঝা গেল নবীজীর আওলাদ শুধু উচুঁ বংশীয়ই নয়; বরং তাঁরা পুত:পবিত্র এবং উচুঁ মর্যাদাসম্পন্নও।

দলিল- ৩
আওলাদে রাসূলগণ এমন সম্মানের পাত্র যে, নামাযের মাধ্যেও ‌‘দরুদে ইব্রাহীমী‌’তে হুযূর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর উপর দরুদ পড়ার সাথে সাথে আহলে বায়তে রাসূলের উপরও দরুদ পাঠ করতে হয়। যেমন –
اللهم صلى على سيدنا محمد وعلى ال سيدنا محمد الخ
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যেদিনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আ’লি সাইয়্যেদিনা মুহাম্মাদিন) অথচ অন্য কোন গোত্র বা বংশকে দরুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।এ বিরল সম্মান একমাত্র আওলাদে রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট।তাহলে প্রতীয়মান হয় যে, জাহানের সকল বংশ ও গোত্র অপেক্ষা আওলাদে রাসূলগণই সর্বশ্রেষ্ঠ।

দলিল- ৪
হযরত তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীরের রক্ত মোবারক মাটিতে পরলে বেআদবী হওয়ার ভয়ে পান করে ফেলেছিলেন।এটা দেখে নবিজী ফরমালেন,তোমার কখনো পেট ব্যাথা হবে না।এবং  আল্লাহ তা’আলা তোমাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মোবারক পেটে পৌঁছলে যদি এ অবস্থা হয় তাহলে যে আওলাদে পাক তার নূরানী রক্ত মোবারকেরই অংশ তাদের মর্যাদা কেমন হবে।তা আর বলার অবকাশ রাখে না।

দলিল- ৫
হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত নবীদের সর্দার তেমনিভাবে হুযূরের প্রতিটি কাজ-কর্ম সকল নবী-রাসূলের কাজ-কর্ম অপেক্ষা উওম।নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত অন্যসব নবীর উম্মতদের থেকে উত্তম।আল্লাহ পাক বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ
অর্থাৎ, তোমরা সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। [আলে ইমরান- ১১০] নবীজির বিবিগণ পৃথিবীর সকল বিবি থেকে উওম।আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ
অর্থাৎ, হে নবীর বিবিগণ ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। [সূরা আহযাব – ৩২] হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সাহাবায়ে কেরাম অন্যান্য নবীর সাহাবীদের থেকে উত্তম।উক্ত নিয়মের ভিত্তেতে নবীজীর আওলাদগণ অন্য সব নবী– রাসূলের আওলাদগণ অপেক্ষা উত্তম হওয়া আবশ্যক।কেননা, হুজুর-ই আক্বদাস সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম– এর সাথে সম্পর্কিত সকল বস্তু যদি উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়,তবে আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা  কেমন সম্মানের অধিকারী তা ভেবে দেখা দরকার।

এ প্রসঙ্গে কিছু আপত্তির খন্ডনঃ
এ প্রসঙ্গে প্রশ্নকারীর উত্তর প্রদান করা হয়েছে। এখন যায়েদের উত্থাপিত আপত্তির উত্তর দেয়া হচ্ছে।

আপত্তি- ১
যায়েদ আয়াত পেশ করেছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
অর্থাৎ, আমি তোমাদেরকে গোষ্ঠী ও গোত্রগোত্র করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট বেশী সম্মানিত হচ্ছে তোমাদের মধ্যে বেশী পরহেযগার বা খোদা ভীরুরাই।[সূরা হুজুরাত – ১৩]

আপত্তির জবাবঃ সুতরাং, আওলাদে রাসূলের শ্রেষ্ঠত্বকে আলাদা করার যুক্তি কি ? এর উদ্দেশ্যে এই নয় যা যায়েদ বুঝেছে। কেননা ইসলামের মধ্যে যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব আওলাদে রাসূলের জন্য রয়েছে তা অন্য কোন বংশের মধ্যে নেই।যদি এ আয়াতের উদ্দেশ্য ওটা হত তাহলে অন্যান্য আয়াতের সাথে দ্বন্দ্ব লেগে যেত।যেগুলো আমি (লেখক) নিবেদন করেছি।এই আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে সমস্ত মুসলিমই সম্মানিত, সে যে বংশেরই হোক না কেন।কোন ইসলামী গোত্রকে অসম্মানী বা ছোট মনে করো না।যে রকম আরবদের মধ্যে রীতি ছিল যে, কিছু গোত্রকে তারা হীন মনে করত।অথচ মুসলমাদের মধ্যে কেউ হীন নেই। হ্যাঁ কেউ কারো অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন –
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থাৎ, সম্মান আল্লাহ তা’আলা, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য। [সূরা আল মুনাফিকুন- ৮] এর মধ্যে সকল মুসলিম অন্তর্ভুক্ত।সাদৃশ্য ব্যতিরেকে এটা বুঝানো হয়েছে যে , সকল নবী সম্মানী ও আল্লাহর প্রিয়।কোন নবীর প্রতি সামান্যতম বেআদবী প্রদর্শন করলেও কুফরী।তবে নবীগণ একজন অপরজন অপেক্ষা উত্তম।আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেন-
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ
অর্থাৎ, হলেন রাসূল।তাঁদের এককে অপরের উপর অধিক শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।  [সূরা বাক্বারা – ২৫৩] এর মর্মার্থ এও হতে পারে, আল্লাহ্ কাউকে সম্মানিত করার পর অহংকার বশত যাতে তাক্ওয়া পরহেযগারী ছেড়ে না দেয়।এটা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট সেই-ই বেশী উচুঁ মর্যাদার যে যত বেশী মুত্তাকী।সুতরাং বড় মাপের জাতি হওয়ার জন্য বেশী বেশী খোদাভীরুতার প্রয়োজন।অথবা এর মমার্থ এটাও হতে পারে, যেন কোন মুসলমান কোন মুসলমানকে জাতিগত কারণে ভৎসনা না করে, কাউকে ছোট মনে না করে।প্রত্যেক মুসলমান সম্মান পাবার দাবীদার।
উক্ত আয়াতের তাফসীর হিসেবে এ আয়াত এসেছে –
لاَ يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْراً مِّنْهُمْ
অর্থাৎ, কোন গোত্র যেন অন্য কোন গোত্রের প্রতি বিদ্রুপ না করে।হতে পারে যে গোত্রের প্রতি বিদ্রুপ করা হচ্ছে তারা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা হুজুরাত- ১১] কোন গোত্রের উত্তম হওয়া মানে এই নয়  যে, অন্য কোন গোত্রকে হীন মনে করতে হবে। কেননা মুসলমান সম্মানের অধিকারী।অবশ্য, মুসলমানদের উচিৎ আওলাদে রাসূলকে বেশী বেশী সম্মান করা। কারণ তাঁরা সে-ই আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর আওলাদে পাক, যাঁর কলেমা পাঠ করে আমরা মুসলমান হয়েছি।যিনি আমাদেরকে ঈমান ও কুরআন দান করেছেন।

আপত্তি- ২
কেউ কেউ এ আয়াত উত্থাপন করে-
لَنْ تَنْفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ ۚ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থাৎ, কিয়ামত দিবসে তোমাদের কোন আত্মীয়তা এবং সন্তান-সন্ততি কখনো কোন কাজে আসবে না। [সূরা মুমতাহিনা- ৩] এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, কিয়ামত দিবসে না কোন সম্পর্ক কাজে আসবে, না কোন সন্তান। এ আত্মীয়তা ও সন্তান বলতে সকলই এখানে অন্তর্ভূক্ত।চাই সে নবীদের সন্তান হোক বা অলীদের সন্তান হোক।

আপত্তির জবাবঃ এর জবাব হচ্ছে, এ আয়াতে কারীমায় সমস্ত মুসলিমকে সম্বোধন করা হয়েছে, যাদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন কাফের ছিল এবং ওই মুসলিম-আত্মীয়তার উপর ভিত্তি করে জোর খাটিয়েছিল। তিনি এরশাদ ফরমান- তোমরা ইসলামের মোকাবেলায় ওই কাফের আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা করবে না।এ আয়াতে নবীগণের আত্মীয় ও সুসন্তানদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।কেননা নিম্ন লিখিত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আমার এবং তোমাদের শত্রু তথা কাফেরদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না। [সূরা নিসা – ১৪৪] এ আয়াত হযরত হাতেব বিন বালতা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।তিনি নিজের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য ইসলামের বিজয়কে নিশ্চিত জেনে, মুসলমানদের কিছু গোপন তথ্য তাদের কাছে লিখে পাঠিয়েছিলেন।কেননা তার সন্তান মক্কায় কাফেরদের নিকট ছিল।তিনি মনে করেছিলেন জয় অবশ্যই মুসলমানদের হবে, তবে এ খবর পাচারের বিনিময়ে হয়ত তারা তাঁর সন্তানদের প্রতি জোরজুলুম চালাবে না।আর উপস্থাপিত আয়াতের শেষ ভাগে রয়েছে- يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ  অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে তোমাদের এবং তোমাদের সেই আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন যে, তোমাদের জান্নাতে এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।এ আয়াতের পরক্ষণেই আল্লাহ তা’আলা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম– এর ঘটনা মুসলমানদের অবহিত করেছেন, তারা ইসলামের মোকাবেলায় নিজেদের কাফের গোত্র থেকে সম্পূর্ণ পৃথকতা অবলম্বন করেছেন।
উপরিউক্ত নিদর্শনাবলী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উপরোল্লিখিত আয়াতে কাফের আত্মীয়তার-ই কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতের তাফসীর হিসেবে নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমাও পেশ করা যায়।
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ
অর্থাৎ, তোমরা মু’মিনদের এ অবস্থায় পাবে না যে, তারা আল্লাহ ও তারঁ রাসূলের দুশমনদের সাথে ভালবাসা স্থাপন করবে যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র,সন্তান অথবা আত্মীয় হোক না কেন। [সূরা মুযাদালা-২২] আল্লাহ্ তা’আলা আরো এরশাদ ফরমান-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের কতেক বিবি এবং সন্তান তোমাদের শত্রু, তোমরা তাদেরকে ছেড়ে দাও। [সূরা তাগাবুন-১৪] উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা কাফের আত্মীয় ও তাদের সন্তানই উদ্দেশ্য।

আপত্তি- ৩
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-
فَإِذَا نُفِخَ فِى الصُّورِ فَلاَ أَنسَـبَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَتَسَآءَلُونَ
অর্থাৎ, অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার করা হবে, তখন না তাদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে, না একে অপরের কথা জিজ্ঞাসা করবে। [সূরা মু’মিন- ১০১] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, কিয়ামত দিবসে সমস্ত সম্পর্কই বৃথা।চাই সেটা নবীদের সাথে হোক অথবা অলীদের সাথে হোক, কিয়ামতের ময়দানে কোন কাজে আসবে না। সুতরাং নবী বংশ আর সাধরণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?

আপত্তির জবাবঃ উক্ত আয়াতে কারীমায় কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা ও তার সূচনা লগ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।যখন আল্লাহ্ তা’আলা আদল-ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রকাশ করবেন তখন কোন বংশ পরিচয়, বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সকল সাহায্য-সহযোগীতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।সবাই স্ব-স্ব চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে।কেউ কাউকে নিয়ে ভাববে না।আল্লাহ তা’আলা বলেন-
يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
অর্থাৎ, সে দিন (কিয়ামত দিবসে) মানুষ নিজের ভাই, পিতা ,মাতা, স্ত্রী, সন্তান ও বন্ধু-বান্ধব থেকে পালিয়ে যাবে।সবারই অবস্থা একই হবে।একে অপর থেকে দুরে থাকবে। [সূরা আবাসা, ৩৪-৩৭] এ আয়াতে কারীমায় কতেক বংশের সম্মানকে অস্বীকার করা হয়নি।বংশ মর্যাদা এক জিনিস আর কিয়ামত দিবসে ভয়াবহতা অন্য জিনিস।এমনকি কিয়ামত দিবসের প্রারম্ভে অন্যান্য নবী – রাসূল আলাইহিমুস সালাম এর সুপারিশও গ্রহণ করা হবে না।শুধু গ্রহণযোগ্য হবে আমাদের আক্বা ও মওলা হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসালাম-এর সুপারিশ।তাহলে কি কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলার মহত্বের সামনে সম্মানী ব্যক্তিদের কোন সম্মান থাকবে না ? না এমন কখনো নয়।কেননা মনে রাখতে হবে যে, কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা সাধারণ মানুষের জন্য।এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কিছু বিশেষ বান্দা এমন রয়েছে যাঁরা এর ভয়াবহতা থেকে মুক্ত।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ
অর্থাৎ, তাদের কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতায় বিষন্ন করবে না এবং ফেরেশতারা তাঁদেরকে সম্ভাষণ জানাবেন। [সূরা আম্বিয়া- ১০৩] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থাৎ, সাবধান! সে দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার বন্ধুদের জন্য কোন ভীতি ও পেরেশানী থাকবে না। [সূরা ইউনুস-৬২] বরং কুরআনে কারীম থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, সে দিন আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে এবং অন্যান্য সকল বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হবে।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ, কিয়ামত দিবসে কতেক বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হবে।তবে খোদাভীরুদের অবস্থা ভিন্ন। [সূরা জুখরুফ-৬৭] আপত্তিকারকের উত্থাপিত আয়াতে কারীমা দ্বারা না এটা সাব্যস্ত হয় যে, দুনিয়ায় আওলাদে রাসূলের কোন মর্যাদা নেই, না কিয়ামত দিবসে নবী বংশ কোন কাজে আসবে না।

আপত্তি- ৪
হাদীস শরীফে আছে যে, পৃথিবীর সকর মানব হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি । আর হযরত আদম আলাইহস সালাম এর সৃষ্টি মাটি থেকে।তাহলে প্রতীয়মান হল যে, সকল মানব মর্যাদার দিক দিয়ে বরাবর এবং কেউ কারো উপর মর্যাদাবান বা সম্মানী নয়।

আপত্তির জবাবঃ উক্ত হাদীস শরীফেরও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন । অর্থাৎ কোন বংশ অন্য কোন বংশকে মন্দ বা হীন মনে না করে।কেননা মৌলিক দিক দিয়ে সকলেই মাটি থেকে।আর মাটির মধ্যে রয়েছে অনুনয় ও বিনয়।এই বিনয়ের কারণেই মাটি থেকে ফুল-ফল, ক্ষেত-খামার ও বাগান ইত্যাদি হয়।পক্ষান্তরে, আগুনের মধ্যে রয়েছে গর্ব ও অহংকার।অথচ আগুন থেকে ও রকম কিছুই হয় না।হাদীসের মমার্থ এই নয় যে, এক বংশ অপর বংশ থেকে উত্তম নয়।কেননা মানবজাতি সবা্রই মূল হচ্ছে মাটি এবং মাটির ক্ষেত্রে কিন্তু সে রকম অর্থাৎ এক মাটি অপর মাটি থেকে উত্তম।যেমন মদীনা শরীফের মাটি পৃথিবীর সকল মাটি থেকে উত্তম।মসজিদের মাটি বাজারের মাটি থেকে উত্তম।হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এর ঘোড়ার পদধুলি ফিরআউনের ঘোড়ার পদধুলি থেকে উত্তম (আল কুরআন)।ক্ষার জাতীয় মাটি থেকে উর্বর জমির মাটি উত্তম।কেননা ক্ষার জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। তেমনিভাবে নবী-রাসূলগনের সাথে সম্পর্কিত মাটি অন্যদের সাথে সম্পর্কিত মাটি থেকে উত্তম।আওলাদে রাসূলের এ বিরল সম্মান সত্তাগত নয়।বরং এ জন্য যে, নবুয়তই তাঁদের সম্মান বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

আপত্তি- ৫
হাদীসে পাকে রয়েছে আল্লাহর প্রিয় হাবীব এরশাদ করেন –
يا فاطمة سلينى من مالى ما شيا لا اغنى عنك من الله
অর্থাৎ, হে ফাতেমা ! আমার সম্পদ থেকে তোমার যা ইচ্ছা চাও। তথাপি তোমার থেকে আমি আল্লাহর শাস্তি রহিত করতে পারব না।
এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার কলিজার টুকরা মেয়ে হওয়া সত্বেও তাকে কোন উপকার করতে পারছেন না। সেখানে অন্য আওলাদে রাসূলদের কি কাজে আসবে।তাহলে বুঝা গেল, অন্য বংশের যে অবস্থা নবী বংশেরও সে অবস্থা।

আপত্তির জবাবঃ এ হাদীস শরীফ ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকের।তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের আদেশ দিচ্ছেন।এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, হে ফাতেমা!ঈমান গ্রহণ কর।যদি তুমি ঈমান গ্রহণ না করো তাহলে বংশ কোন কাজেই আসেবে না।আর যে ব্যক্তি নবী বংশের কিন্তু ঈমান গ্রহণ করেনি, তাহলে সে আওলাদে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত নয়।কেননা সে তো  মুসলমানই হয়নি।আল্লাহ তা’আলা নূহ আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করে বলেন-
إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ
অর্থাৎ, হে নূহ! নিশ্চয়ই এ কেনান তোমার বংশের নয়।কেননা সে বেঈমান। [সুরা হুদ-৪৫] তাই কোন রাফেযী, খারেজী,ওহাবী, জামা’আতী সৈয়্যদ তথা আওলাদে রাসূল নয়।কেননা সৈয়্যদ হওয়ার জন্য ঈমান আবশ্যক।আর তারা তো ঈমান থেকে বঞ্চিত।কুফুরীর কারণে সকল প্রকার  সম্পর্ক ও বংশ নষ্ট হয়ে যায়।সে জন্যে কাফেরের সাথে না মু’মিনের বিবাহ হতে পারে না।মু’মিনের সম্পত্তির অংশীদার হয় না শুধুমাত্র মু’মিনের কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।যেখানে কাফের সন্তানগণ মু’মিন পিতার সম্পদের অংশ পায় না, সেখানে কাফেররা বংশীয় মান-মর্যাদা কিভাবে পাবে? আবু লাহাব হাশেমী বংশের কিন্তু তার কোন মর্যাদা নেই।সে কারণেই আওলাদে রাসূলগণ শুধুমাত্র মু’মিন হলেই নবী বংশের কারণে অবশ্যই উপকারে আসবে।নবীজীর সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে সকল মুসলমান উপকার লাভ করবে অর্থাৎ জাহান্নামীরা জান্নাত এবং অপরাধীরা ক্ষমা লাভ করবে।যেই নবীর সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে এত লাভ!তবে কি বংশ কোন কাজে আসবে না ?
আল্লাহ তা’আলা কালামে পাকে এরশাদ ফরমান-
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
অর্থাৎ, হে মাহবুব! যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার দরবারে আসে এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।তাহলে আপনি তাদের জন্য সুপারিশ করবেন এবং তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে। [সূরা নিসা-৬৪] আল্লাহ তা’আলা আরো এরশাদ ফরমান-
وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ
অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।কেননা আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন। [সুরা আনফাল-৩৩] স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা এরশাদ ফরমান –
شفاعتى لاهل الكبائرمن امتى
অর্থাৎ, আমার সুপারিশ আমার উম্মাতের বড় বড় গুনাহগারদের জন্য ।
আল্লাহর প্রিয় হাবীব আরো এরশাদ ফরমান-
يخرج قوم من النار بشفاعة محمد يسمون الجهنمين
অর্থাৎ, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র সুপারিশে অনেক বড় দল দোযখ থেকে বের হবে, যাদেরকে জাহান্নামী বলা হয়।
শাফায়াতে মোস্তফা নিয়ে কুরআন পাকের অনেক আয়াত ও হাদীসে পাক রয়েছে। যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই নবীজীর শাফায়াত নসীব হবে।যদি সে ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করে।সুতরাং সাব্যস্ত হল, আওলাদে রাসূলগণ নবীজীর শাফায়াতের বিশেষ উপকার লাভ করবে।

পরিশিষ্ট এবং আবশ্যকীয় উপদেশঃ
আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত জরুরী পর্যালোচনা এবং বিশেষ উপদেশাবলী স্মরণ রাখা আবশ্যক।

প্রথম উপদেশঃ
মাওলা আলী শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সন্তানগণ যারা মা ফাতেমাতুজ জাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর সাথে সম্পর্কিত, তাদেরকে সৈয়্যদ তথা আওলাদে রাসূল বলে।আর যারা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর অন্যান্য বিবির সন্তানগণ,তাদেরকে আলভী বলে সৈয়্যদ নয়।যেমন মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যাহ প্রমুখ।এ সকল মান-মর্যাদা সেই সন্তানদের জন্য যারা মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর উদর মোবারক থেকে ভুমিষ্ট হয়েছে।কেননা মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র বংশের প্রস্রবণ।

দ্বিতীয় উপদেশঃ
হুযূর নবী-এ আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার নূরানী সন্তানদের সৈয়্যদ বলা হয় দু’টি কারণে।
এক. নবীজী স্বয়ং উভয় শাহজাদাকে তথা ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা কে উদ্দেশ্য করে ফরমান-
الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة
অর্থাৎ, আমার হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা বেহেশতী যুবকদের সরদার।
এমনিভাবে নবীজি আরো এরশাদ ফরমান-
ابني هذا سيد, ولعل الله أن يصلح به بين فئتين من المسلمين
অর্থাৎ, আমার এই সন্তান সৈয়্যদ তথা সর্দার।মহান আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা তার মাধ্যমেই মুসলিম সম্প্রদায় আত্নশুদ্ধি লাভ করবে।
এ কারণেই যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা হাসনাইনে কারীমাইনকে সৈয়্যদ বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেহেতু তাঁদের সন্তানদেরকেও সৈয়্যদ বলা হয়।
দুই. আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা কে এজন্য সৈয়্যদ বলা হয যে, নবী আক্বাদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপাধি হচ্ছে সৈয়্যদুল মুরসালিন তথা নবীকূল সম্রাট।যেহেতু তিনি সমস্ত নবী-রাসূলদের সর্দার।সেহেতু তাঁর নূরানী সন্তানগণ মুসলিমদের সর্দার।
সুবহানাল্লাহ! হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা সকল নবীদের সরদার।মাওলা আলী শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সকল অলীদের সরদার।হযরত মা ফাতেমা যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সকল মুসলিম রমণীর সরদার আর হাসনাঈন কারীমাঈন বেহেশতের সকল যুবকদের সরদার এবং সকল শহীদদেরও সরদার।

তৃতীয় উপদেশঃ
সৈয়্যদ তিনিই হবেন যার পিতা সৈয়্যদ।যদি মাতা সৈয়্যদ হয় কিন্তু পিতা সৈয়্যদ নয়, তাহলে তাকে সৈয়্যদ বলা যাবে না।এবং তার উপর সৈয়্যদ এর বিধানও প্রবর্তিত হবে না।অর্থাৎ, সে যাকাত গ্রহণ করাও বৈধ হবে।কেননা বংশ পরিচয় বাবার দিক থেকে মায়ের দিক থেকে নয়।আর যদি পিতা-মাতা উভয়ই সৈয়্যদ হয় তাহলে দু’ দিক থেকেই ‌‍‌‌‌‍নজীবুত তরফাইন তথা অভিজাত সৈয়্যদ।যেমন- বড়পীর হযরত গাউসুল আজম আব্দূল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।যার পিতা হাসানী এবং মাতা হোসাইনী।ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাতু সালামও হাসানী এবং হোসাইনী।

চতুর্থ উপদেশঃ
আওলাদে রাসুলের সে সমস্ত ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে এর মর্মার্থ এই নয় যে, তাঁরা নেক আমল করবে না তথা নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না। শুধু বংশীয় কারণে তাঁরা স্বতন্ত্র সম্মানের অধিকারী হয়েছেন।কোন আমলের প্রয়োজন নেই, এটা ভুল ধারণা।
আওলাদে রাসুলের জন্য প্রযোজ্য যে, তাঁরা অন্যদের থেকে আরো বেশী নেক আমল করবে। যাতে সকলের জন্য তা দৃষ্টান্ত হয়।প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের চাইতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়।তাই তাঁদের জন্য আবশ্যক যে, তাঁরা তাঁদের পূর্ব পুরুষদের নমুনা হওয়া।ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কারবালার মরু প্রান্তরে যুদ্ধের ময়দানে তলোয়ারের নিচে নামায আদায় করেছেন আর তাঁর সন্তানগণ যদি বিনা কারণে নামায ছেড়ে দেন, তাহলে তা অবশ্যই আফসোসের বিষয়।

পঞ্চম উপদেশঃ
নবী বংশের যে পবিত্রতা বা মহাত্বতা বর্ণনা করা হয়েছে, তা সেই সকল সৈয়্যদের জন্য প্রযোজ্য যাঁরা সত্যিকার বংশীয় সৈয়্যদ।অর্থাৎ, হযরত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে নিয়ে সে পর্যন্ত তার বংশে কোন ব্যক্তি গায়রে সৈয়্যদ তথা সৈয়্যদ নয়,এমন যেন না হয়।তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে বর্তমান সময়ে নকল সৈয়্যদের আধিক্যতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।সৈয়্যদ না হয়ে যারা সৈয়্যদ দাবী করে এটা শুধু হারাম-ই নয় বরং জঘন্যতম মহাপাপ।
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সমস্ত গোলাম তথা দাসকে অভিসম্পাত দিয়েছেন যারা নিজেদেরকে অন্য মুনিবের দিকে সম্পর্কিত করে।আর সে সমস্ত ব্যক্তি অভিশাপ দিয়েছেন যারা নিজেদের অন্য বংশের দাবীদার সাব্যস্ত করে।সুতরাং যারা সৈয়্যদ নয় তবে সৈয়্যদ দাবী করে তারা নবীজীর পক্ষ থেকে অভিসম্পাত প্রাপ্ত।তেমনি সে নিজে সৈয়্যদ না হয়েও সৈয়্যদ দাবী করে, সে তার মাকে গালি খাওয়ানোর সমান।কেননা সে তার মায়ের স্বামী তথা বাবাকে সৈয়্যদ বানালো।অথচ দেখুন ! হযরত যায়েদ বিন হারেছা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তথা হারেছের পুত্রকে নবীজি নিজের ছেলে বলেছেন।এটা দেখে লোক সকল তাকে যায়েদ বিন মুহাম্মদ তথা নবীজির সন্তান বলতে লাগল।সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা  এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আয়াত নাযিল করেন।আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-
وَمَا جَعَلَ أَدْعِيَاءَكُمْ أَبْنَاءَكُمْ ذَٰلِكُمْ قَوْلُكُمْ بِأَفْوَاهِكُمْ
অর্থাৎ, আল্লাহ আপনার পালক পুত্রকে আপনার পুত্র বানায়নি।এটা শুধু আপনার মুখের কথা। [সূরা আহযাব-৪] এবং তাকেও নিষেধ করে আল্লাহ বলেন-
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللَّهِ ۚ فَإِنْ لَمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
অর্থাৎ, তাদেরকে তাদের পিতার নামেই আহবান করো।আল্লাহর নিকট এটাই পছন্দনীয়।যদি তাদের পিতার নাম জানা না থাকে তাহলে ধর্মে তারা  তোমাদের ভাই। [সূরা আহযাব-৫] যেখানে নবীজি স্বয়ং হযরত যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে লালন পালন করেছেন, সেখানে তাঁকে পুত্র বলা হারাম করে দিয়েছেন।তাহলে যারা সৈয়্যদ না হয়েও নিজেদেরকে সৈয়্যদ দাবী করে তারা কত বড় অপরাধী তা উক্ত আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়। তেমনিভাবে যে সমস্ত ব্যক্তি রাগান্বিত অবস্থায় নিজেদের স্ত্রীকে মা সম্বোধন করে, তাদের ব্যাপারে কোরআন মাজীদে এরশাদ হচ্ছে-
وَمَا جَعَلَ أَزْوَاجَكُمُ اللَّائِي تُظَاهِرُونَ مِنْهُنَّ أُمَّهَاتِكُمْ
অর্থাৎ, আর তোমরা যে সমস্ত স্ত্রীগণকে নিজের মায়ের সমতুল্য কর,আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তোমাদের মা বানায়নি। [সূরা আহযাব-৪] কোরআন মাজীদে অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা জিহারকারীদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন,
الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে মায়ের সমতুল্য বলে দেয় তারা তাদের মা নয়।তাদের মা তো তিনিই যার থেকে তারা ভূমিষ্ট হয়েছে।নিঃসন্দেহে তারা মন্দ ও মিথ্যা বলে। [সূরা মুজাদালা-২] যেখানে নিজেদের বিবিকে মায়ের সাথে তুলনা করাকে কোরআন কারীম মন্দ ও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।যেখানে অন্যকে নিজের পিতা সম্বোধনকারী ও কোরআন মাজীদের ফয়সালা অনুযায়ী বড় মিথ্যুক ও দোযখে কঠিন শাস্তির উপযোগী হবে।তাহলে স্পষ্ট হয়ে গেল,  যারা সৈয়্যদ না হয়েও নিজেদের সৈয়্যদ বলে বেড়ায় তারা তাদের মাকে গালি দেয়।এবং তারা সারকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিশপ্ত আর আল্লাহ তা’আলার নিকট মিথ্যুক, ধোকাবাজ  এবং জাহান্নামের খোরাক ।
মুসলিম শরীফের কিতাবুল ঈমানে আছে-
ان ادعى الى غير ابيه وهو يعلم انه غير ابيه فالجنة عليه حرام
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের পিতার দিকে সম্পর্কিত করে অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়  তাহলে তার জন্য বেহেশত হারাম।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে-
ان رغب عن ابيه فهو كفر
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে অস্বীকার করল, সে কাফের।
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
من ادعى أبا في الإسلام غير أبيه يعلم أنه غير أبيه فالجنة عليه حرام
অর্থাৎ, কোনো মুসলিম ব্যক্তি জেনে-বুঝে নিজেকে যদি অন্য পিতার দিকে সম্পর্কিত করে তার উপর জান্নাত হারাম।

ষষ্ঠ উপদেশঃ
যদি কোন সৈয়্যদ বংশের ব্যক্তি ইসলাম পরিত্যাগ করে হিন্দু, শিক, কাদিয়ানী, ওহাবী, রাফেযী ইত্যাদি হয়ে যায় তাহলে সে না সৈয়্যদ থাকবে না এ মর্যাদার অধিকারী হবে।যা ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
কেননা কুফুরীর কারণে নবী করীম  সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং শরীয়তের ফায়সালা অনুযায়ী সে পিতৃ পরিচয়ও দিতে পারবেনা।
কোরআনে কারীমে নূহ আলাইহিস সালাম এর পুত্র কেনানের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে-
قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলল, হে নূহ!এই কেনান তোমার পরিবারের কেউ নয়।নিশ্চয়ই তার আমল বিনষ্ট। [সূরা হুদ – ৪৬] যদি নূহ আলাইহিস সালাম এর পুত্র কেনান কুফুরির কারণে সন্তান না থাকে। তাহলে সে সমস্ত বে-দ্বীনরা কিভাবে নবীজীর আওলাদ হতে পারে ?
তেমনিভাবে কোরআন করীমে আস বিন ওয়ায়েল এর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
অর্থাৎ, হে মাহবুব! নিশ্চয়ই আপনার সাথে বেয়াদবীকারী নির্বংশ। [সূরা কাউসার- ৩] দেখুন ! আস বিন ওয়াসেল সন্তানের পিতা ছিল অথচ আল্লাহ তাকে সন্তানহীন বলল।কেননা তার সকল সন্তান মুসলমান হয়ে গেল আর সে কাফের থেকে গেল।ফলে সে তাদের পিতা রইল না আর তারা তার সন্তান রইল না।অতএব, জানা গেল যে, ধর্মের ভিন্নতার কারণে বংশ পরিচয় নষ্ট হয়ে যায়।তাই বংশ ও ধর্ম এক হওয়া শর্ত।শুধু তাই নয় তাদের উপর শরীয়তের বিধি-বিধানও আরোপ করা যায় না।কেননা মুসলিম পিতার কাফের সন্তানরা মিরাস তথা উত্তরাধিকারী অংশ থেকে বঞ্চিত হয়।ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে কাফের সন্তানকে পিতার কবরস্থানেও দাফন করা যায় না।পিতা তার কাফের সন্তানের  কাফন-দাফনের ব্যাবস্থাও করতে পারে না।বরং অনেক মু’মিন মা আছেন যাঁরা কাফের সন্তান থেকে পর্দা করে চলেন।কাফের সন্তানের সাথে মু’মিনা নারীর বিবাহ পর্যন্ত দূরস্ত নয় ।
অতঃএব  একথা প্রতীয়মান হল যে, মুসলিম পিতার কাফের সন্তানরা জানাযা, উত্তরাধিকার অংশ, বিবাহ, কাফন-দাফন ইত্যাদিসহ শরীয়তের সকল বিধান থেকে বঞ্চিত ।
এমনিভাবে যে ব্যক্তি সৈয়্যদ না হয়েও নিজেকে সৈয়্যদ দাবি করে সে মুরতাদ, সে তো মুসলমানও নয়।সৈয়্যদ হওয়াতো অনেক দূরের কথা !
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি যিনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও এ ফতোয়া পরিপূর্ণ করার তওফিক দান করেছেন।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলা আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করুন।আমিন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

Check Also

জান্নাতের সর্দার ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কারামত – দ্বিতীয় পর্ব

মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ যিয়াউদ্দীন নক্সবন্দী (দাঃ বাঃ) কারামত – ০৩ গাল মুবারক আহতকারীর মৃত্যু ইমাম …

One comment

  1. যে ব্যক্তি সৈয়্যদ না হয়েও নিজেকে সৈয়্যদ দাবি করে সে মুরতাদ, সে তো মুসলমানও নয়।সৈয়্যদ হওয়াতো অনেক দূরের কথা !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *