সাম্প্রতিক আপডেটঃ

জুমআ’র নামাজের আগে-পরে কি কোন সুন্নাত নামাজ আছে?

প্রশ্নঃ

জুমআ’র দিন মসজিদে এসে অনেকে শুধু জুমআ’র ফরয পড়ে। নফল তো দূরে থাক, সুন্নাত-ই পড়তে দেখা যায় না তাদেরকে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ কোন কোন শায়খ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলে থাকে, অমুক শায়খ বলেছে-জুমআ’র নামাজ শুধুমাত্র ২ রাকাত। এর কোন সুন্নাত নামাজ নেই। এই বিষয়টি কতটুকু শরিয়ত সমর্থিত? জানতে চাই। 

মুফতীয়ে আযম পাকিস্তান, আল্লামা মুফতী আব্দুল কাইয়্যুম হাজারাবী রাহিমাহুল্লাহ তায়ালা

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন

 

 

উত্তরঃ

জুমআ’র দিন জুমআ’র (ফরজ) নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত, ফরজের পরে ৪  এবং  ২ রাকাত অর্থাৎ সর্বমোট ৬  রাকাত আদায় করা সুন্নাত।সুতরাং আগের ৪ রাকাত সহকারে মিলালে জুমআ’র সুন্নাত দাঁড়ায় ১০ রাকাত। এগুলো সবই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (যেগুলোকে অস্বীকার করলে গুনাহগার হবে)। এ বিষয়টি সেসব বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত যেগুলো নিয়ে আল্লাহর রহমতে মুসলমানদের মধ্যে কোন ইখতেলাফ বা মতানৈক্য নেই। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। একারণে সে চায় না যে, কোন বিষয়ে মুসলমানগণ ঐক্যমত থাকুক। শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই যে, মুসলমানদের মধ্যে একটা ইখতেলাফ বা মতানৈক্য এবং পারস্পরিক বিবাদ ছড়ানো। প্রকাশ্য দুশমন শয়তানের কাছে এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে?

 

জুমআ’র সুন্নাত সমূহের প্রমাণ

জুমআ’র সুন্নাত আদায়ের ফযিলত সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে-

ان النبی صلی الله عليه وآله وسلم قال من رکع اثنتی عشرة رکعه، بنی له بيت فی الجنة

“নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমআ’র দিন ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর বানানো হবে”।

সাহাবায়ে কিরামগণ এই সুন্নাত পড়েছিলেন মর্মে হাদিসে এসেছে-

عن عطاء انه رای ابن عمر يصلی بعد الجمعة قالفی نماز قليلا عن مصلاة فيرکع رکعتين ثم يمشی انفسی من ذلک ثم يرکع اربع رکعات.

হযরত হযরত আতা- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমাকে জুমআ’র(ফরজ নামাজের) পরে নিজ জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে ২ রাকাত আদায় নামাজ আদায় করতে দেখেছেন। অতঃপর সেখান থেকে আরেকটু দূরে গিয়ে ৪ রাকাত আদায় করেছেন। হযরত আতা বলছেন যে, আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা কে দেখেছি- যখন তিনি জুমআ’র নামাজ শেষ করতেন তখন নিজের নামাজের স্থান হতে কিছুটা সামনে দাঁড়াতেন এবং

فرکع رکعتين ثم تقدم ايضا فرکع اربعا.

আবার ২ রাকাত আদায় করতেন। তারপর আরেকটু আগে বেড়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সম্পর্কে বলা হয়,

 کان يصلی قبل الجمعة اربع رکعات و بعدها اربع رکعات قال ابو اسحاق کان علی يصلی بعد الجمعة ست رکعات.

জুমআ’র(ফরয) নামাজের  আগে তিনি ৪ রাকাত, জুমআ’র নামাজের পরে ৪ রাকাত আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারিম জুমার পরে ৬ রাকাত নামায আদায় করতেন।

আব্দুর রহমান সালমি বলেন যে- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমাদেরকে আদেশ দিতেন-

ان يصلی قبل الجمعة اربعا و بعدها اربعا. حتی جاء نا علی فامرنا ان نصلی بعدها رکعتين ثم اربعا.

যাতে করে আমরা জুমার আগে এবং পরে ৪ রাকাত করে (৮ রাকাত সুন্নাত)  নামাজ আদায় করি। এমতাবস্থায় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমাদের নিকট আগমন করলেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ দিলেন যে, আমরা যেন জুমআ’র পরে ২ রাকাত পড়ে ৪ রাকাত আদায় করি।

[সূত্রঃ মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, “জুম’আর আগে ও পরে নামাজ সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ”, , ৩ঃ ২৪৬-২৪৮]

 

প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এ বিষয়ে বলেন-

عن ابی هريرة رضی الله عنه قال قال رسول الله صلی الله عليه وآله وسلم من کان منکم مصليا بعد الجمعة فليصل اربعا.

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তোমাদের মধ্যে যারা জুমআ’র নামাজের পরে নামাজ পড়বে, সে যেন ৪ রাকাত পড়ে। অর্থাৎ ৪ রাকাত সুন্নাত।

(সুনানে তিরমিযী, ১ঃ৬৯)

আরো ইরশাদ হচ্ছে-

سالم عن ابيه عن النبی صلی الله عليه وآله وسلم انه کان يصلی بعد الجمعة رکعتين.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআ’র পরে ২ রাকাত আদায় করতেন।

(সুনানে তিরমিযী, ১ঃ৬৮)

জুমআ’র পর সুন্নাত আদায় করার বিষয়ে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عن عبدالله بن مسعود رضی الله عنه کان يصلی قبل الجمعة اربعا و بعدها اربعا، وروی عن علی بن ابی طالب انه امر ان يصلی بعد الجمعة رکعتين ثم اربعا.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জুমার আগে ৪ রাকাত পড়তেন এবং পরেও ৪ রাকাত। হযরত আলী বিন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি আদেশ দিয়েছেন- জুমার পর প্রথমে ২ রাকাত অতঃপর ৪ রাকাত নামায যেন আদায় করা হয়।

(সুনানে নাসায়ী, ১ঃ২০১, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ঃ৭৯, জামে তিরমিযী, ১ঃ৬৯, সুনানে আবু দাউদ, ১ঃ১৬৭)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন-

اذا صليتم بعد الجمعة فصلوا اربعا.

যখন তোমরা জুমআ’র (ফরয) নামাজের পর নামাজ পড়বে, তখন ৪ রাকাত পড়বে।

(সহিহ মুসলিম, ১ঃ২৮৮)

তাছাড়া জুমআ’র পরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যে আরো নামাজ পড়তেন সে বিষয়ে এসেছে-

ان النبی صلی الله عليه وآله وسلم کان يصلی بعد الجمعة رکعتين.

নিশ্চয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা জুমআ’র পরে ২ রাকাত নামাজ পড়তেন।

(সহিহ বুখারী, ১ঃ১২৮ ও সহিহ মুসলিম, ১ঃ২৮৬)

সম্মানিত সকল ফকিহগণের মত

فهذا البحث يفيد ان السنة بعدها ست.

উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা গেল, জুমআ’র নামাজের পরে ৬ রাকাত সুন্নাত। আর জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত।

[ফাতহুল ক্বাদির, ২ঃ৩৯, আল মুগনী ওয়াশ শারহুল কাবির লি ইবনে কুদামা, ২ঃ২১০, আল বাহরুর রায়েক্ব, ২ঃ৪৯, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ১ঃ১১২, রদ্দুল মুখতার শারহে দুররুল মুখতার লিশ শামী, ২ঃ১৩, বাদায়েয়ুস সানায়ে, ১ঃ২৩, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়াহ লিল জাযারী, ১ঃ৩২৭]

সুতরাং আমরা জানতে পারলাম জুমআ’র আগে এবং পরের সকল সুন্নাত সমূহ সম্পর্কে, যা আলহামদুলিল্লাহ আমরা অনেক হাদিস ও ফিকহ এর কিতাব হতে প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করেছি। মুসলমানদের উচিত যে, যেভাবে তারা জুমআ’র ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল সমূহ নামাজ আদায় করছে, এভাবেই আদায় করে যাবে। কোন শয়তানি শব্দে তারা যেন কর্ণপাত না করে। শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে নেক আমল থেকে বাধাদানকারী। গুনাহের প্রতি ধাবিতকারী। মুসলমানরা তাঁদের রব তায়ালা, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এবং বুযুর্গানে দ্বীন তথা সালফে সালেহীনদের রাস্তার উপর চলবে। এ রাস্তায়ই হচ্ছে দুনিয়া এবং আখেরাতের সফল হওয়ার রাস্তা এবং এটাই জান্নাতের রাস্তা। যে শয়তানের ফাঁদে পা দিবে, সে জাহান্নামে পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের শয়তানের অনিষ্টতা ও কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা করুন। আমিন

[আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই সব অধিক ভাল জানেন]

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *