মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
অনেক মুসলমানই স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে রোজা রাখেন না,অথচ কুরআনে কারীমে রোজা রাখার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রোজা পালনের ফলেই পাওয়া যায়। সাধারণত “উপবাস” চিকিৎসা পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-ওজন নিয়ন্ত্রণ , পরিপাক নালীর আরাম ও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ইত্যাদি। পরিপূর্ণ উপবাসের নানা বিরূপ প্রভাব রয়েছে এমনিভাবে তথাকথিত ক্র্যাশ ডায়েটেরও ।সাধারণ উপবাসের তুলনায় রমজানের উপবাস তথা রোজা একদমই ভিন্ন পন্থা। কেননা, রমজানের রোজায় কোন অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয় না।রমজান মাসে মুসলমানদের ক্যালোরি গ্রহণ হয় যথাযথ মাত্রায় বা তার চেয়ে নিচে। উপরন্তু,কোন ডাক্তারি নির্দেশনা ছাড়াই রমজানের রোজা স্বেচ্ছায় রাখা হয়,আর এর সুফলও পাওয়া যায় ।
রমজান আত্মসংযম ও আত্মপ্রশিক্ষণের মাস।এই প্রশিক্ষণ রমজানের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে ।রমজানের শিক্ষা ও উপকারিতা সেটা খাবার গ্রহণের নিয়মানুবর্তিতা বা নৈতিকতা হোক, যদি সেটা রমজান পরবর্তী সময়েও চালিয়ে যাওয়া যায়, তবে তা যেকোন কারও জন্যই মঙ্গলকর হবে ।তাছাড়াও রমজান মাসে খাওয়ার জন্য ক্র্যাশ ডায়েটের ন্যায় শুধু প্রোটিন জাতীয় খাবার ও ফলমূল খেতে হবে এমন কোন বাধ্যকতা নেই ; বরং যেকোন অনুমোদিত খাবারই সহনীয় পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে ।
পরিপূর্ণ উপবাস এবং রোজার মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল, খাবার গ্রহণের সময় ।রমজানের সময় আমরা সাধারণত দুপুরের খাবার বাদ দেই ও সকালের খাবারটা (সাহরী) জলদি গ্রহণ করি এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খাই না।এ সময়ের মধ্যে পানি পান না করায় কোন ক্ষতি নেই, আসলে তা শরীরের সব তরলের মধ্যে ঘনত্ব তৈরি করে এবং অতিসামান্য পানিশুন্যতা তৈরি করে ।শরীরের নিজস্ব কিছু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আছে, বস্তুত এটা দেখানো হয়েছে যে,উদ্ভিদ জীবনেও পানি শূন্যতা ও পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা আছে যা তাদের দীর্ঘায়ু দান করে ।
রমজানে রোজার শারীরিক উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হল, এর মাধ্যমে ব্লাড সুগার হ্রাস পায়, কোলেস্টেরল কমে এবং সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার কমে ।আসলে, রমজানের রোজা হল শারীরিক সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা , ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতির জন্য একটি আদর্শ চিকিৎসা ।সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে ক্যাসাব্লাঙ্কায় ‘রমজান ও স্বাস্থ্য’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা পৃথিবী থেকে পঞ্চাশ জন মুসলিম-অমুসলিম গবেষক রমজানের শারীরিক ও নৈতিক উপকারিতা সম্বন্ধে তাদের গবেষণা প্রকাশ করেছেন ।চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতি লক্ষণীয় ছিল, কিন্তু কোন ভাবেই রমজানের রোজা দ্বারা ব্যক্তির স্বাস্থ্যে অথবা মূল মেডিকেল কন্ডিশনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি ।অপরদিকে যারা ডায়াবেটিস বা ধমনীর রক্তপ্রবাহে জটিলতা ও কিডনী ইত্যাদিতে জটিল রোগে ভুগেন, তাদের সহসাই রোজা রাখার প্রয়োজন নেই, তাদের রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত নয়।(যেহেতু তাদের এতে রোগ বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে)
রমজানে রোজার মানসিক উপকারিতাও রয়েছে ।রমজানে যারা রোজা রাখেন তাদের জন্য রয়েছে মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ।অন্তত ব্যক্তিগত শ্ত্রুতা সহ অন্যান্য সকল অপরাধের হার কমে যায় ।এই মানসিক উন্নতি ও আক্রমণাত্মক আচরণের পরিবর্তন রোজা অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজের স্থিতিশীলতার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে ।রমজানে কুরআন তিলাওয়াত শুধু অন্তর ও মস্তিষ্কে প্রশান্তিই দেয় না বরং স্মৃতিশক্তিও উন্নত করে।সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান রোজা রাখার কারনে দুর্বল হয়ে পড়বে এমন ভয় করাটা অর্থহীন , বরং এর মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য ও মনোবল উন্নত হবে ।
[ইন্টারনেট অবলম্বনে প্রবন্ধটি অনুবাদিত]
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.