আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী
[بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد]
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আরো আনুগত্য কর তোমাদের (উলিল আমর) ইমামদের। তোমাদের মাঝে যখন কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিবে তখন তোমরা তার সমাধানের জন্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দিকে ফিরে আসবে যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। ইহাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর ও পরিণামের দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা নিসাঃ ৫৯)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“তাদের কাছে যখন নিরাপদ বা ভীতি সংক্রান্ত কোন সংবাদ আসে তখন তারা তা প্রচার করে বেড়ায় তারা যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং জ্ঞানীদের কাছে আসতো তাহলে তাদের আলেমগণ অবশ্যই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পারতেন। (সূরা নিসাঃ ৮৩)
এই পার্থিব জগতে মানুষের সামনে বিভিন্ন পথ রয়েছে। যেমন, পূর্বপুরুষরা যে পথে চলেছেন, সমাজ যে পথে চলছে কিংবা ধর্মহীন সেক্যুলার শাসক শ্রেণী মানুষকে যে পথে পরিচালিত করছে, কেউ কেউ দুনিয়ার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য মত্ত আবার অনেকে সমাজ জীবন থেকে বেরিয়ে একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা বেছে নিচ্ছে। কাজেই মানুষের মনে এই প্রশ্ন আসে যে, এতসব পথের মধ্যে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য কি কোন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন নেই ?
হ্যাঁ, মানুষের মনে সুপ্ত এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ। আল্লাহ পাক মানুষকে পথপ্রদর্শনের জন্য নবী রাসূল ও আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ যদি পবিত্র কোরআন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলে বাইত ও সাহাবাগণের মতাদর্শে অটল থাকে এবং তাদেঁর অনুসরণ করে তাহলে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। এজন্যেই আমরা প্রত্যেক নামাজে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে তিনি আমাদেরকে সরল, সঠিক পথে পরিচালিত করেন- যে পথে কোন ক্ষতি ও বিভ্রান্তি নেই, তিনি যাতে ওই পথে আমাদেরকে চলার তাওফিক দেন। সরল পথ হলো মধ্যম পথ। সরল পথ মানে সব কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন এবং যেকোন ধরনের বাড়াবাড়ি বর্জন করা।
পাঠকবৃন্দ ! বাস্তবতা এই যে, মুসলিম সমাজ আজ দলে দলে বিভক্ত, আর মনে হয় সব দলই নিজেদেরকে সঠিকের উপরে রয়েছে বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিভক্ত মুসলিম মিল্লাতে সব দলই কি বাস্তবে সঠিক পথের উপর রয়েছে ? সব দলই কি সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত? না, এরুপ হওয়ার কথা নয়। কারণ, সিরাতুল মুস্তাকীমের ব্যাখ্যায় হাদীসের ভাষায়:“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দীর্ঘ দাগ কেটে বললেন : এটি হচ্ছে আল্লাহর পথ। অতঃপর তিনি তার ডানে এবং বামে অনেকগুলো দাগ কেটে বললেন: এগুলো বহুপথ এগুলোর প্রতিটিতে শয়তান রয়েছে, সে সেদিকে আহ্বান করছে। অতঃপর পাঠ করলেন : “এটাই আমার সরল সঠিক পথ, কাজেই তোমরা তার অনুসরণ কর, আর নানান পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে, তোমরা তাঁকে ভয় করে যাবতীয় পাপ থেকে বেঁচে চলতে পার “। (সূরা আনআমঃ ১৫৩)
অন্যভাবে আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, একই বিষয়ের ক্ষেত্রে একজন বলছেন হালাল আবার অন্যজন বলছেন হারাম, একজন বলছেন গুনাহের কাজ অন্যজন বলছেন নেকীর কাজ। ইসলামী শরী’আতের মধ্যে এত বৈপরীত্য থাকতে পারে না। অতএব দুটি সিদ্ধান্তের যে কোন একটি ভুল হিসাবে গন্য হবেই।
আর যদি সব দলগুলোই সঠিক পথের উপর থাকত তাহলে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীস বলতেন না যে, আর আমার উম্মাত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। যাদের একটি মাত্র দল বাদে বাকী সব দলগুলোই জাহান্নামে যাবে “। (সহীহ তিরমিযী : ২৬৪১)
অন্য এক হাদীসে বাহাত্তর দলের কথা বলা হয়েছে যেগুলোর একটি বাদে বাকী সবগুলোই জাহান্নামে যাবে। (সহীহ ইবনু মাজাহ:৩৯৯৩) আবার তিনি বলতেন না যে, কিয়ামত দিবস পর্যন্ত একটি দল হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন : আমার উম্মাতের একটি দল হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাদেরকে অপমানিত করার প্রচেষ্টা, তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম, সহীহ তিরমিযী : ২২২৯)
সাওবান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন : হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের জন্য আমি পথভ্রষ্ট ইমামদেরকে (আলেমদেরকে) ভয় করছি। অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, সহীহ সুন্নাহ থেকে বিমুখ করার ক্ষেত্রে এক শ্রেনীর ইমামরা (আলেমরা) সচেষ্ট থাকবে এবং তারা সচেষ্ট আছেও বটে। অতএব যে কেউ কোন মত প্রকাশ করুন না কেন এবং তার এ মতের অনুসারীর সংখ্যা যত বেশীই হোক না কেন এবং যে কোন স্থানেই এ মতের উপর আমল করা হোক না কেন, তা বিবেচ্য হতে পারে না। বরং বিবেচ্য বিষয় হতে হবে কার পক্ষে সহীহ এবং সঠিক দলীল প্রমাণ রয়েছে তা অনুসন্ধান করা। মুসলিম সমাজ দলীল প্রমাণ অনুসন্ধান করা থেকে দূরে সরে গিয়ে অনেকের অন্ধ অনুসরণের কারণেই আজ শত দলে বিভক্ত। আর এ বিভক্তি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে অন্ধ অনুসরণকে ত্যাগ করে দলীলের অনুসরণ করা। অতএব আমাদেরকে খুঁজতে হবে সহীহ দলীল, চাইতে হবে সহীহ দলীল, আর ধাবিত হতে হবে সহীহ দলীল ভিত্তিক আমলের দিকে। তাহলেই আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ তরীকাহ এবং তাঁর আহলে বাইত ও সাহাবীগণের পথের উপর নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব এবং সরাসরি যে দল জান্নাতে যাবে সে দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারব ইনশা-আল্লাহ।
এই দলটা কারা?
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি বলেন, “হক পন্থী একমাত্র তারা, যারা রাসূলের হাদীস, সাহাবা ও তাবেঈনের কথা, কর্ম এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের (চার মাযহাবের ইমামগনের) অনুকরণ ও অনুসরণ করে”। [আল-ইনসাফ পৃ:৩৬ এবং হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ খ: ১ পৃ: ১৭০]
আল্লামা কুরতুবী রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি তাঁর তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন- প্রথম উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ(মাজহাব) ছিলনা। তাই ইজতিহাদের(মাজহাবের) দুশমনও ছিলনা। এই উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ(মাজহাব) আছে। তাই ইজতিহাদের(মাজহাবের) দুশমনও আছে। আর এই উম্মতের অতিরিক্ত জাহান্নামী ফিরক্বা হল ইজতিহাদের(মাজহাবের) দুশমন, ফুক্বাহায়ে কিরামের দুশমন দল। এই ফুক্বাহাদের দুশমন জাহান্নামী ফিরক্বা বাড়বে উম্মতে মুহাম্মদীতে। [তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম]
গায়রে মুকাল্লিদরা বা লা-মাযহাবীরা বলে থাকে-সোজা রাস্তা হল কুরআন ও সুন্নাহ, আর বাকি রাস্তা হল ইমামদের রাস্তা। আসলে এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। আমরা বলি-মূলত সোজা রাস্তাটি হল শরীয়তের চার দলিল মান্যকারীদের রাস্তা। অর্থাৎ যারা কুরআনও মানে। হাদিসও মানে। ইজমায়ে উম্মতও মানে। আবার কিয়াসে শরয়ীও মানে। আর বাকি রাস্তাগুলি হল এগুলির অস্বীকারকারীদের রাস্তা। এক রাস্তা হল যারা কুরআন অস্বীকার করে। আরেক রাস্তা হল যারা হাদিস অস্বীকার করে। আরেক রাস্তা হল ইজমা অস্বীকার করে। আরেক রাস্তা হল যারা কিয়াসে শরয়ী অস্বীকার করে। সুতরাং এই সকল অস্বীকারকারীরা হল ঐ আঁকা বাঁকা পথের যাত্রী। চারটি বিষয়কেই যারা মানে তারা নয়।
আমাদের প্রিয় নবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া হতে চলে যাবার পর থেকে হাজারো ফিত্না ইসলামের উপর আঘাত হেনেছে। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহপাক তার দ্বীনকে কোনো না কোনো ভাবে হিফাযত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “মানুষেরা কি ধারণা করে যে, তাদেরকে এ কথা বলাতেই ছেড়ে দেয়া হবে যে, আমরা ঈমান এনেছি? এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছি, যাতে আল্লাহ নির্বাচন করে নেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূতঃ ২-৩)
মু’মিনকে তাঁর ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ যার ঈমান যত মজবুত, তার পরীক্ষাও তত বড় হয়ে থাকে। মানুষের মাঝে নবীদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়ে থাকে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : আখেরী জামানার লোকদেরকে বিভিন্ন রকম ফেতনায় ও বিপদে ফেলে পরীক্ষা করা হবে। শেষ জামানায় ফেতনা এমন ভয়াবহ রূপ নেবে যে আসল-নকল (সত্য-মিথ্যা) পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে। ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মতো ঘন কালো ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে আর বিকালে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তাদের চরিত্র ও আদর্শ বিক্রি করে দিবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের একজন দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে”।
আবু তামীম জায়শানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “অবিরাম বৃষ্টির ন্যায় তোমাদের নিকট ফিত্না প্রবলভাবে বর্ষন হতে থাকবে।“
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দুর্গের উপর আরোহন করে (লোকদেরকে) বললেন, আমি যা দেখছি তোমরাও কি তা দেখছ? নিশ্চয় আমি দেখছি যে, তোমাদের গৃহের ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টির ন্যায় ফিতনা পতিত হচ্ছে।“
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের মধ্যে আল্লাহর কাছে ফিতনা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হায়াত ও মওতের ফিত্না থেকে আশ্রয় চাই।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিতনা ফাসাদের উদ্ভব ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং উদিত হবে। [সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-৩৫১১, ৩১০৪, ৩২৯৬, ৭০৯২, ৭০৯৩]
সর্বপ্রথম হযরত আলী ও মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এর খিলাফাত সম্পর্কিত গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে খারিজী ও রাফেজী দলের উদ্ভব হয়। যা পূর্বদেশ থেকেই ঘটেছিল। অতঃপর যুগে যুগে মুতাজিলা, ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া, জাহমিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী, লা-মাযহাবী, ইলিয়াসী ইত্যাদি যাবতীয় ফিতনার উদ্ভব ঘটেছে, এসব বাতিল শক্তির প্রতিরোধ এবং তাদের নিপীড়ন ও নিষ্পেষণ সত্ত্বেও যারা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারাই শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোয়া ও ধন্যবাদের অধিকারী হবে।
‘ফিতনা’ অর্থ সে সব ‘বিপদ ও পরীক্ষা’ যা যুগে যুগে মুমিনগণকে সম্মুখীন হতে হয়। হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান, যে ফিতনা থেকে মুক্ত রয়েছে। তিনি তিনবার এ কথাটি উচ্চারণ করেন। আর যে ব্যক্তি পরীক্ষার সম্মুখীন অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও ধৈর্যধারন করেছে তার জন্য অশেষ সুসংবাদ। (আবু দাউদ)
ফিতনার সময় মুমিনের করণীয় :
ফিতনার সময় মুসলমানদের জামাআত ও তাদের ইমামকে আঁকড়িয়ে ধরতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযায়ফাকে এই উপদেশই দিয়েছেন। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফিতনার সময় করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “তুমি মুসলমানদের জামাআত ও তাদের ইমামের অনুসরণ করবে। “অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি ফিতনার দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসরমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ ও উত্তম হবে।
হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের পূর্বে এমন দিন আসবে যে তাতে মুর্খতা অবতীর্ণ হতে থাকবে এবং ‘হারজ’ বেড়ে যাবে। লোকেরা প্রশ্ন করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ ‘হারজ’ কী? তিনি বললেন হত্যা।“ তিনি বললেন যখন তোমাদের মধ্যে অজ্ঞব্যক্তিরা ব্যাপকতা লাভ করবে,আর আলেমগণ কমে যাবে। ক্বারী ও নেতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। আখেরাতের আমলের মাধ্যমে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।”
“আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিঃসন্দেহে আমি তাদেরকে এমন সূরতে দেখেছি, যেন তাদের মধ্যে কোনো বোধশক্তি নেই, তারা যেন জ্ঞান-বুদ্ধিবিহীন কিছু শরীর। তাদেরকে দেখলে মনে হয় আগুনের বিছানা এবং লোভী মাছি। সকাল করে দুই দেরহাম দ্বারা, সন্ধ্যা করে দুই দেরহামের মাধ্যমে। তারা নিজেদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে, সামান্য একটা ছাগলের টাকার বিনিময়ে।“
তখন তিনি বললেন, “ তোমাদের মধ্যে নেতারা আধিক্যতা লাভ করবে আর আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। বক্তাবৃন্দ আধিক্যতা লাভ করবে আর দ্বীনের বিজ্ঞ আলেমগন (ফকীহ) কমে যাবে। তার দ্বীন ব্যতিত অন্য কিছু (বদদ্বীন) শিক্ষা করবে এবং তারা আখেরাতের আমলের বিনিময়ে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।“
তাই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জনই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়রা একমাত্র উপায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে শত্রুদের চক্রান্ত, পরিকল্পনা, ও তাদের অবস্থা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে, যাতে তাদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.