সাম্প্রতিক আপডেটঃ

হযরত জীবরাঈল আলাইহিস সালাম হয়েছিলেন যাঁদের দর্জি

আল্লামা সায়েম চিশতী, পাকিস্তান

দিনটি ছিল রমজানুল মুবারকের ২৯ তারিখ। হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র বয়স তখন পাঁচ এবং হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র বয়স চার বছর দুই মাস। হযরত ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা গম ভাঙানোর যাঁতাকল পিষে কিছুক্ষণের জন্যে অবসর নিচ্ছিলেন। মা ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন নামাযের জন্য জায়নামায বিছালেন, তখনই হযরত ইমাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এসে জায়নামাযের উপর শুয়ে পড়লেন। হযরত সাইয়্যেদা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তখন তাঁদের দু’জনকে উঠতে বললেন। শাহজাদাদ্বয় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগলেন, আম্মিজান ! আগামীকাল সকালে তো ঈদ হবে। ঈদের দিন সব বাচ্চা নতুন কাপড় পরবে, আমাদেরকেও নতুন কাপড় এনে দিন না। ধৈর্য্য এবং রাযা(আল্লাহ প্রদত্ত সকল বিষয়ের উপর সন্তুষ্ট থাকা) রাজ্যের সম্রাজ্ঞী সাইয়্যেদা মা ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র অন্তর কেঁপে উঠলো। তিনি তাঁর বাচ্চাদেরকে নিজ সিনা মুবারকের সঙ্গে লাগিয়ে বললেন, হে আমার চাঁদ ! আমাকে এখন নামায তো পড়তে দাও, আগামীকাল তোমাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ্। শাহজাদাদ্বয় বললেন, আম্মিজান ! আগামীকাল তো ঈদ। কাপড় যদি কাল আসেও, তবে সেলাই করবেন কখন ? হযরত মা ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, হে আমার সোনামনি ! দর্জি তোমাদের জন্য সেলাই করা কাপড়ই নিয়ে আসবেন।

অতঃপর তিনি নামায পড়া শুরু করলেন। নামাযের পরে তিনি খোদা তায়ালার দরবারে হাত উঠালেন এবং আরয করলেন, ইয়া বারে ইলাহি ! আপনি তো সব কিছুই জানেন। আপনার এই আবিদা তাঁর বাচ্চাদের সাথে শুধু এই জন্যই ওয়াদা করেছে যে, তাঁদের অন্তর যেন ভেঙ্গে না যায়। হে আমার প্রতিপালক ! আপনি অধিক ভালো জানেন যে, ফাতিমা কখনোই মিথ্যা বলেনি। হে আল্লাহ ! আপনার বারেগাহে উঠা আমার হাত দুটির সম্মান আপনি রাখুন। হে রাব্বুল আলামিন, আমি আপনার রহমতের উপর ভরসা করে আমার সন্তাদেরকে নতুন কাপড় এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছি। হে আল্লাহ, আমার প্রতিশ্রুতিকে আপনি পূর্ণ করে দিন। অতঃপর ইফতারীর সময় হতে না হতেই মদীনার আকাশে ঈদের চাঁদ উঁকি দিলো। মদীনা মুনাওয়ারাতে ঘোষণা হচ্ছিল যে, কাল সকাল ঈদুল ফিতর হবে। সবাই ঈদের আগমনের খুশিতে তখন একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। শিশুরা তখন থেকেই ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রাতের বেলা শোবার সময় মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র দুই শাহজাদা পুনরায় তাঁদের নিকট করা ওয়াদা তাকে মনে করিয়ে দিলেন।

জান্নাতী মহিলাদের সর্দার আগে থেকেই রাতের বেলা জাগ্রত থাকতেন। পুরো রাত নফল ইবাদতে মশগুল থাকতেন। ফযরের নামাযের পর যখন তিনি দু’আ করছিলেন, তো এমতাবস্থায়ই দরজার মধ্য কেউ একজন কড়া নাড়লো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এসেছেন? আওয়াজ আসলো যে, হে আল্লাহর রাসূলের শাহজাদী, আমি আপনার দর্জি, শাহজাদাগণের পোষাক নিয়ে এসেছি। মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এটিকে গায়েবী সাহায্য মনে করে তা গ্রহণ করলেন। পোষাকগুলো ভীষণ সুন্দর এবং দামী ছিল। অতঃপর তিনি যখন বাচ্চাদেরকে কাপড় পরিধান করাচ্ছিলেন, তখনই ইমামুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা তাঁর ঘরে তাশরীফ আনলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাকে নতুন পোষাকে দেখে অনেক খুশি হলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা জিজ্ঞাসা করলেন, ফাতিমা ! এই পোষাকগুলো কোথা থেকে এসেছে ? হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন- আব্বাজান ! এক দর্জি এসে এগুলো দিয়ে গিয়েছেন। আমি বাচ্চাদের সাথে নতুন পোষাক এনে দেয়ার ওয়াদা করেছিলাম, যা আল্লাহ তায়ালা পূর্ণ করে দিয়েছেন। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বললেন- ফাতিমা, তুমি কি জানো সেই দর্জিটি কে ছিল? হযরত মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন- আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। এ কথা শুনে সরকারে দো আ’লম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বললেন- আমার হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা’র জন্য দর্জি সেজে আসা ব্যক্তিটি ছিলেন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম। এবং এই পোষাক জোড়া তিনি আল্লাহ তায়ালা’র আদেশে জান্নাত হতে এনেছিলেন। একথা শুনে সাইয়্যেদা মা ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহার চক্ষুযুগল দিয়ে কৃতজ্ঞতার অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়লো। অতঃপর তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আল্লাহর দরবারে সিজদা করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ ! আপনার দরবারে হাজার হাজার শোকরিয়া যে, আপনি ফাতিমার উত্তোলন করা হাতের সম্মান রেখেছেন।

[রওযাতুশ শোহাদা, পৃষ্ঠা ৮০]

দেখুন,আছে কি কোন দুনিয়ার বাদশাহ, যার দর্জি হয়েছেন স্বয়ং ফেরেশতাকূল সর্দার হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম, আর তার পোষাক জান্নাতুল ফিরদাউস হতে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন? এটাই হচ্ছে আহলে বাইতে রাসূল এর শান এবং মর্যাদা। রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হৃদয়াঙ্গম করার সামর্থ্য দান করুন। আমিন, বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরাসালিন।

আল্লামা সায়েম চিশতীর “শহিদ ইবনে শহিদ” কিতাবখানা হতে লেখাটি অনূদিত।

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন

 

Check Also

জান্নাতের সর্দার ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কারামত – দ্বিতীয় পর্ব

মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ যিয়াউদ্দীন নক্সবন্দী (দাঃ বাঃ) কারামত – ০৩ গাল মুবারক আহতকারীর মৃত্যু ইমাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *