শাহেনশাহ এ সিরিকোট রহমাতুল্লাহি আলায়হির জীবন দর্শন

নূরে জান্নাত নাছরিন

মহান রাব্বুল আলামিন দুনিয়াবী আকাশকে যেমন সাজিয়েছেন অসংখ্য নক্ষত্রের মাধ্যমে তেমনি আধ্যাত্মিক আকাশকে সুশোভিত করেছেন তার প্রিয় বান্দা তথা গাউস, কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নুক্বাবা, নুজাবা প্রমুখের মাধ্যমে। তাঁর সেই আধ্যাত্মিক আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন যুগশ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামেল, কুতুবুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে আহলে সুন্নাত, হযরত শাহানশাহে সিরিকোট, গাউছে জামান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি।

  • জন্ম ও বংশ পরিচয়

আঠারশ’ সালের ষাটের দশক ইংরেজ শাসিত এ উপমহাদেশে মুসলমানদের আজাদী আন্দোলনের এক ব্যর্থ অভিযান সিপাহী বিপ্লবের স্মৃতি বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাল। নির্যাতিত, মুক্তিকামী অসহায় মুসলমানদের এমন এক দুঃসময়ে বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাজারা জেলার সিরিকোট শরীফের সুউচ্চ পাহাড় শীর্ষের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পেশোয়ায়ে আউলিয়া, গাউসে জামান কুতুবুল আক্বতাব আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি।
তাঁর বুযুর্গ পিতা ও মাতামহ ছিলেন হুযূর করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের ৩৭ ও ৩৮ তম বংশধর, যথাক্রমে হযরত সৈয়্যদ ছদর শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি ও হযরত সৈয়দ খানী জামান শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি। সৈয়্যদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর পিতৃ ও মাতৃবংশের পূর্বপুরুষ। সে হিসেবে তিনি নবী বংশের হোসাইনী ধারার অন্তর্ভুক্ত। তাঁর পূর্বপুরুষগণ আপন আপন সময়ের ইসলাম-প্রচারক খ্যাতনামা আউলিয়া-দরবেশ ছিলেন।

  • অনুসৃত পথ ও মত

হুজুর সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন শরীয়তের ক্ষেত্রে ইমাম আ’জম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলায়হির হানাফী মাযহাবের অনুসারী। আক্বায়েদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একান্ত অনুসারী ও নেতৃত্বদাতা। ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাযী আজিজুল হক শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এ প্রসঙ্গে বলেন, বু’দ বাহারে আহলে সুন্নাত রুক্নে আ’যম বেগুমা, মউতে উঁ শুদ মউতে আলম ঈঁ হাদীস আকনূ বখাঁ। অর্থাৎ তিনি সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের জন্য এক সুদৃঢ় ও বিশাল স্তম্ভ সদৃশ। তাঁর ইন্তেকাল মূলত গোটা পৃথিবীর মৃত্যু সমতুল্য- এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, আল্লামা শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ‘মাওতুল আলিমে মাওতুল আলম’ অর্থাৎ একজন হক্কানী আলেম (ওলী)’র ইন্তেকাল পৃথিবীর মৃত্যু সমতুল্য। (আলহাদীস) এর প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি সুন্নিয়তের জন্য সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বলেন, ‘আজ বরায়ে আহলে সুন্নাত মাদরাসা করদাহ্ বেনা- বাহরে এস্তিসালে ওহাবী গস্ততীরে বে-খাতা।’ অর্থাৎ তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের জন্য মাদরাসা (জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া)’র বুনিয়াদ স্থাপন করেছেন। এ প্রতিষ্ঠান সত্যিই ওহাবীবাদের মূলোৎপাটনে নির্ভুল তীর সদৃশ। তাঁর অনুসৃত ত্বরীক্বত বা সিলসিলা হচ্ছে কাদেরীয়া। গাউসে দাঁওরা খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে বায়‘আত গ্রহণ করে তিনি কাদেরিয়া ত্বরীকাভুক্ত হন এবং প্রধান খলিফার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। কাদেরীয়া সিলাসিলার যে শাখাটি সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক প্রচারিত হয়, তা ‘সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়া নামে পরিচিত লাভ করে।

  • শিক্ষা তথ্য

হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি মাত্র বার বছর বয়সেই পরিপূর্ণ হাফেযে ক্বোরআন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। হেফয শেষ করেই হুজুর কেবলা শুরু করলেন দীর্ঘমেয়াদী মাদরাসা শিক্ষা জীবন। ইসলামী শিক্ষার এক একটি স্তর বা শ্রেণি অতিক্রম করতে করতে স্বদেশের মাদরাসা অঙ্গনের সর্বোচ্চ সনদ অর্জন করলেন। এতেও সন্তুষ্ট নন জ্ঞানপিপাসু সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি, এবার ছুটলেন জ্ঞানার্জনের জন্য দিল্লী শহরে। ভারতের বেশ কয়েকটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ক্বোরআন, হাদীস, উসূল, ফেক্বাহ্, তাফসীর, আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্জন শেষে সুদূর আফ্রিকা মহাদেশে রওয়ানা হয়ে যান।

  • পেশাগত জিন্দেগী

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শেষে হুযুর কেবলা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি হুজুর করীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণে রোজগারের ভিত্তি হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর ব্যবসার বিস্তৃতি শেষ পর্যন্ত সুদূর আফ্রিকা পৌঁছে যায়। সে সময়কার একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি এক নামে ‘আফ্রিকা ওয়ালা’ উপাধিতেও সর্বজন পরিচিত ছিলেন। একজন প্রভাবশালী আলেম- হাফেজ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের বংশধর এক মহান ওলী আফ্রিকার ক্যাপ্টাউন, মোমবাসা, জাঞ্জিবার শহরগুলোতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বহু বছর অতিবাহিত করেন এবং সেখানে ব্যবসার সাথে সাথে দ্বীন-ইসলামের প্রচার-প্রসার ও তালিমের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর নিরলস দ্বীনি খিদমত ও জনহিতকর কাজের জন্য সমগ্র আফ্রিকায় তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

  • আফ্রিকায় মুসলমানদের জন্য প্রথম জামে মসজিদ নির্মাণ

ডা. ইব্রাহিম এম. মাহদী রচিত A short history of Muslims in South Africa নামক একটি প্রামাণ্য ইতিহাস গ্রন্থে আছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন ভারতবর্ষ হতে আগত একদল ব্যবসায়ী এবং সুফী সাধক। এসব ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার সাথে সাথে দ্বীন প্রচারের কাজেও নিয়োজিত ছিলেন এবং এভাবে প্রত্যেক এলাকার মধ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত গ্রন্থের এক পর্যায়ে বলা হয়েছে-১৯১১ সালে ক্যাপ্টাউন এলাকায় ভারতীয় ব্যবসায়ী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ পেশোয়ারীর অক্লান্ত পরিশ্রমে মুসলমানদের প্রথম প্রার্থনা গৃহ বা জামে মসজিদ তৈরি হয়। ‘পরবর্তীকালে তিনি এখানে মুসলমানদের হানাফী মাযহাবে দীক্ষিত করার প্রয়াস পান। এ সময় পারস্য হতে আগত কিছু মুসলমান দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের মধ্যে শিয়া মতবাদ প্রচারেও নিয়োজিত হয়। তবে ভারতীয় মুসলমান ব্যবসায়ীর মধ্যে সে সময় যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলাম প্রচার-প্রসারে লিপ্ত ছিলেন, কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের কাছে তাঁদের প্রভাবই বেশি ছিল। উল্লেখ্য, সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘পেশোয়ারী ছাহেব’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

  • চৌহর শরীফ অভিমুখে

আফ্রিকা হতে দেশে ফিরলেন হযরত সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি। একদিন তাঁর সহধর্মিনী তাঁকে তৎকালীন বিখ্যাত ওলীয়ে কামিল গাউসে দাঁওরা হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করলেন এবং আল্লাহর এ মহান ওলীর সান্নিধ্যে যাবার অনুরোধ করলেন। হুজুর কেবলা উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘দেশে কি বর্তমান সময়ে সত্যিকার পীর আছেন?’’ প্রত্যত্তুর এল, একবার অন্তত সেখানে গিয়ে দেখুন। আপনার মনপূত হলেই তো গ্রহণ করবেন। অন্যথায় বাড়ির রাস্তা তো আপনার অচেনা নয় কিংবা নিজ ঘরের দরজাও তো বন্ধ নয়। মনপুত না হলে ফিরে আসুন।’’ সুতরাং এবার আর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। তাই মনস্থির করলেন, চৌহর শরীফ সংলগ্ন হরিপুর বাজারে একটি দোকান নেবেন এবং দরবারে যাবেন, পীর সাহেবকে পরীক্ষা করে দেখবেন। শুরু হল যাত্রা। দোকান নিলেন ছরিপুর বাজারে।

  • পীর সাহেবের সাথে প্রথম সাক্ষাত

চৌহর শরীফ হয়ে যেতে তয় হরিপুর বাজারে। দোকানে যাওয়ার পথে চৌহর শরীফে নিমর্ধানাধীন মসজিদটির সামনে খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হিকে দেখে চিনতে পারলেন ইনিই সেই পীর সাহেব। প্রথম সাক্ষাত হয়ে গেল। দেখাতেই সালাম দিলেন ওই পীর সাহেবকে। অমনি উচ্চস্বরে এক বিশেষ ভঙ্গিতে ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম বললেন হযরত চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি। পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন পীর সাহেব। উত্তরে বাজারের নতুন দোকানদার বলে জানালেন, পীর সাহেব বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমার কাছে আগত লোকজনদের বলে দেব যে, বাজারে আমার একটি নতুন দোকান আছে। ওখান থেকে তারা যেন মালামাল কিনে’। সিরিকোটি সাহেব মসজিদের পার্শ্বে রক্ষিত কিছু কাঠের সরঞ্জাম দেখে পীর সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন এ সরঞ্জামগুলো কি জন্য রাখা হয়েছে? পীর সাহেব ক্বেবলা উত্তরে মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে, এটা শুনে সিরিকোটী সাহেব নিজ পকেট থেকে একটি টাকা দিয়ে এ মহতি কাজে তাঁকে শরীক করতে অনুরোধ জানান। টাকা গ্রহণ করে পীর সাহেব মুনাজাত করার পর তিনি দোকানের দিকে চলে যান।

  • শুরু হলো আলোর পথে যাত্রা

প্রথম দর্শনে যেন অন্তরের অন্তস্থলের পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দিলেন পীর সাহেব কেবলা। একদিন তিনি দোকানে বসে দেখলেন পীর সাহেবের ভক্তগণ নিজ কাঁধে বোঝাই করে মসজিদের সরঞ্জামাদি অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। কোন অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণে যেন তিনিও স্থির থাকতে পারলেন না। বিলম্ব না করে নিজ কাঁধে তুলে নিলেন সরঞ্জামাদি অন্যদের সাথে। উপস্থিত লোকেরা হতবাক। এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন! নতুন দোকানদার এ বিখ্যাত ব্যবসায়ী হাফেজ ক্বারী ও বিখ্যাত মওলানা সাহেবের। নিশ্চয় হুজুর চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির বিশেষ সুদৃষ্টি পড়েছে তাঁর উপর। সত্যিই তাই। যতই দিন যাচ্ছে ততই ক্রমশ তিনি দরবারমুখী হচ্ছিলেন, আর ততই ব্যবসা বিমুখ ও সংসারে অনাসক্ত হচ্ছিলেন তিনি। দিন দিন অবনতির দিকে সওদাগরী। শেষ পর্যন্ত দোকান বন্ধ করে দিলেন এবং একাধারে দরবারের খেদমতে আত্মনিয়োগ করলেন।

  • চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে বায়আত গ্রহণ

যতই পীর সাহেব কেবলার সান্নিধ্য পাচ্ছেন ততই যেন এক একটি নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হচ্ছিল হযরত সিরিকোটীর অন্তরে। শেষতক আবেদন জানালেন তাঁকে বায়আত করে মুরিদ বানিয়ে নিতে। মুরিদ হবার আবেদনের উত্তরে হযরত চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বললেন, কেন? আপনি কি একবার মুরিদ হননি? সাথে সাথে স্বীকার করে নিলেন, হ্যাঁ! একবার হয়েছিলাম, দিল্লীর এক পীর সাহেবের কাছে। তাঁর সিলসিলার কার্যক্রম, আক্বিদা ও আমল আমার পছন্দের নয়। শেষ পর্যন্ত গাউসে দাঁওরা খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে মুরিদ হয়ে এক নতুন উৎসাহ্ উদ্দীপনা নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি।

  • শুরু হল এক নজীরবিহীন সাধনা

মুরীদ হওয়ার পর পীরের সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ্ রসূলকে সন্তুষ্ট করতে দৃঢ়সংকল্প হলেন তিনি। চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে আল্লাহর মা’রিফাত লাভ করা যাবে। একবার চিন্তা করলেন নির্জন কোন পাহাড়, পর্বতে গিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল হবেন। তাই অনুমতি চাইলেন পীর সাহেব ক্বেবলার কাছে। পীর সাহেব খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি উপদেশ দিলেন, নির্জনে আল্লাহর ধ্যান, ইবাদত করার চেয়ে জনসমাজে আল্লাহর বান্দাদের সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্ধানই শ্রেয় এবং সুন্নাতে রসূলের প্রতিফলন। মুর্শিদে বরহক্বের ইশারা বুঝতে পেরে দরবারের লঙ্গরখানা, মাদরাসা ও মসজিদের খিদমতে আত্মনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। দেখলেন, দরবারের ভক্তগণ নিজ নিজ রুচি ভেদে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তাই চিন্তা করতে লাগলেন কোন দায়িত্বটি হাতে নেবেন। চৌহর শরীফে লাকড়ির খুব অভাব। হঠাৎ করে তাঁর মাথায় এল এ কাজটি আনজাম দেবেন তিনি। যেখানে দুনিয়ার মানুষেরা মর্যাদা ও আমিত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ, সেখানে তিনি এমন একটা অমর্যাদাকর নি¤œমানের অথচ দুষ্কর কাজ হাতে নিলেন, যা কিনা তাঁর আত্মমর্যাদা, আমিত্ব ও অহংকারের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা। নিজ বাড়ি সিরিকোট শরীফ সংলগ্ন পাহাড় হতে দিনভর লাকড়ি যোগাড় করে, নিজ কাঁধে বোঝাই করে, সুদূর চৌহর শরীফ পর্যন্ত ১৮ মাইল পথ পায়ে অতিক্রম করে, নিয়মিত লাকড়ি পৌঁছাতে লাগলেন, বিখ্যাত ব্যবসায়ী, আফ্রিকা ওয়ালা, নামজাদা মাওলানা সাহেব, হাফেজ সাহেব, অধিকন্তু, সিরিকোটের বিখ্যাত বুযুর্গ পরিবারের সুপরিচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, আউলাদে রসূল, হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি। সবাই অবাক বিস্ময়ে শুধু ভাবছেন কি হলো এ মহান ব্যক্তিত্বের। এভাবে অতিবাহিত হলো একাধারে বিরতিহীন ১২টি বছর।

  • আধ্যাত্মিক উন্নতি নিয়ে ভাবনা

এবার ভাবতে লাগলেন নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতির দিক নিয়ে। একদিন খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির সাথে বসে আছেন আর মনে মনে ভাবছেন হুজুরের কাছে তো অনেক দিন কাটালাম। কিন্তু আধ্যাত্মিক উন্নতি তো এখনো হয়নি? আর খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁকে লক্ষ করে নির্মাণাধীন মসজিদটি দেখিয়ে বললেন, দেখ! মসজিদকে বাহের চুনা লাগানে কাম হো রাহা হ্যায়, মগর আন্দর রাহ্ গেয়া। অর্থাৎ দেখ মসজিদের বাইরে (দেওয়ালে) চুনা লাগানোর কাজ চলছে; কিন্তু মসজিদের ভিতরে এখনো কাজ বাকী রয়ে গেছে। তিনি বুঝে নিলেন যে, এ উদাহরণটি হুজুর তাঁর উদ্দেশ্যেই বলেছেন চৌহর শরীফের নির্মাণাধীন মসজিদটির ন্যায়ই তাঁর বাইরের শরীয়তী আমল ইত্যাদি ঠিকঠাক থাকলেও অন্তকরণ কাজ এখানো বাকী আছে।
সুতরাং আত্মশুদ্ধির কঠিন রেয়াজত শুরু করে দিলেন। প্রবৃত্তির কু-প্ররোচনার ব্যাপারে আরো সতর্ক হলেন। নিজের পীরের প্রতি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস আরো বাড়তে লাগলো।

  • হিংস্র বাঘের সূরতে শয়তানের আক্রমণ

হযরত শাহানশাহে সিরিকোট রহমাতুল্লাহি আলায়হি একবার চৌহর শরীফ হতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যেই রাত গভীর হয়ে যায়। ফলে মাঝপথে এক বাড়ীতে রাত কাটালেন। শেষ রাতে হুজুর তাহাজ্জুদ নামাযের উদ্দেশ্যে ওই বাড়ী থেকে বের হয়ে পাশে এক মসজিদে গেলেন। মসজিদে পৌঁছে যে নামাযের নিয়্যত করলেন অমনি দেখলেন যে, পুরো মসজিদটাই হঠাৎ করে আলোকিত হয়ে গেল। হুজুর চমকে উঠলেন। আলো যে দিক থেকে আসছিল সে দিকে তাকালেন। দেখলেন মসজিদের সামনে বামদিকের কোণায় এক বাঘের মুখের ভিতর থেকেই এ আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। অনেকগুলো ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হুজুর কেবলার বুঝতে অসুবিধা হল না যে, এটা বাঘের সূরতে শয়তানের আক্রমণ। দেরী না করেই, নিজের দিকে অগ্রসরমান বাঘটির মুখে থুথু নিক্ষেপ করে দিলেন। থুথু নিক্ষেপের সাথে সাথেই শয়তানটি অদৃশ্য হয়ে গেল। মসজিদ আবার পূর্বেকার মতো অন্ধকার হয়ে গেল। হুজুর কেবলা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘‘এটা শয়তানের সাথে আমার প্রথম প্রকাশ্য মোকাবেলা।

  • দিন দিন রূহানী শক্তি বৃদ্ধি

যতই দিন যাচ্ছে হুজুর ক্বেবলা নিজের রূহানী তরক্কি উপলব্ধি করছেন। তিনি চৌহর শরীফ যাওয়ার পথে অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখতে লাগলেন। যখন চৌহর শরীফের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে রওয়ানা হতেন রাস্তার দু’পাশের গাছপালা, পাথর তাকে সালাম জানাতো। পরপর দেখতেন চাঁদ-সূর্যও তাকে বলছেন ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্’। হুজুর ক্বেবলা বলেন, আমি প্রথম প্রথম এসব কান্ড দেখে অভিভূত হয়ে যেতাম। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন মশগুল হয়ে গেলাম। কিন্তু পরে আমার চৈতন্যোদয় হলো যে, এসব নিয়ে বিভোর হওয়ার কি দরকার? শুরুতেই যেন রিয়া, ফখর, আমিত্ব স্থান পেয়ে না যায় এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেলেন হুজুর ক্বেবলা। ছেড়ে দিলেন নিজের এসব আধ্যাত্মিক সুখবর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা।

  • মাতৃগর্ভের ওলি তৈয়্যব শাহের জন্ম

শাহানশাহে সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি রেঙ্গুন যাওয়ার চার বছর পূর্বে ১৯১৬ সালে, মাতৃগর্ভের ওলি হুযুর কেবলা গাউসে যামান হযরত তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি জন্মগ্রহণ করেন। সাহেবযাদা তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি জন্মের পূর্বে হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তার বুযুর্গ বিবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন চৌহর শরীফে। এ সময় খাজা চৌহরভী সিরিকোটি সাহেবের শাহাদত আঙ্গুলি নিজের পৃষ্ঠদেশে রেখে ঘর্ষণ করতে করতে বলেন, ‘ইয়ে পাক চিজ তোম লে লো’। অর্থাৎ এ পবিত্র উপাদানটি তুমি নিয়ে নাও।
উল্লেখ্য, ‘তৈয়্যব’ শব্দের অর্থ পবিত্র (পাক)। পরবর্তী সাহেবজাদার শুভ জন্ম হলে নাম রাখা হয় সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্। শাহানশাহে চৌহর খাজা চৌহরভীর উপরোক্ত মন্তব্য গভীর রহস্যময়। সাহেবযাদা হুজুরের জন্ম ও নামকরণ ছাড়াও এতে রয়েছে অনেক আধ্যাত্মিক ইশারা। এ ঘটনার সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে- বিশ্ববিখ্যাত সুফি স¤্রাট হযরত মুহীউদ্দীন ইবনুল আরবী রহমাতুল্লাহি আলায়হির জন্মের সাথে। এ সুফি স¤্রাটের পিতা গাউছে বাগদাদ রহমাতুল্লাহি আলায়হির কাছে সন্তানের আবেদন করলে গাউছে পাক বলেছিলেন যে, তোমার অদৃষ্টে কোন সন্তান নেই। আর আমার ঔরসে আরো তিনটি সন্তান রয়েছে। এর একটি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। এ কথা বলে গাউছুল আযম জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি উক্ত ব্যক্তির পিঠের সাথে নিজের পিঠ ঘর্ষন করে দিয়েছিলেন। গাউসে পাক রহমাতুল্লাহি আলায়হি সাথে সাথে এ কথাও বললেন যে, ‘‘তোমার ঔরসে যে সন্তানটি জন্মগ্রহণ করবে তাঁর নাম রাখবে ‘মুহিউদ্দীন’। এ মুহিউদ্দীন ইবনুল আরবীও ছিলেন মাতৃগর্ভের ওলি এবং তাঁর সময়ে এক অতি উচ্চস্তরের অলিয়ে কামেল। এ ঘটনার সাথে হুবহু মিল রয়েছে, মাতৃগর্ভের অলি, শতাব্দি শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব রাহনুমায়ে শরীয়ত ও ত্বরীকত হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হির জন্ম, নামকরণ ও পরবর্তী আধ্যাত্মিক সফলতার সাথে।

  • ১৯২০ সালে রেঙ্গুনের উদ্দেশে মাতৃভূমি ত্যাগ

যুগে যুগে সম্মানিত আওলাদে রসূল মাতৃভূমি জাজিরাতুল আরব ছেড়ে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে সফর করেছেন দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে একইভাবে দ্বীন ও ত্বরীকত প্রচারের উদ্দেশ্যে হুযুর কেবলার পূর্বপুরুষগণও মাতৃভূমি মদীনায়ে মোনাওয়ারা ত্যাগ করে আফগানিস্তান হয়ে বর্তমানে পাকিস্তান উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশস্থ সিরিকোট নামক স্থানে এসেছিলেন। তাঁরাও ছিলেন আওলাদে রসূল, আউলিয়া, গাউস, কুতুবগণ, যেমন, গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি, হযরত বায়েজিদ বোস্তামী, হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামেনী, হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া, হযরত শাহ বদর আউরিয়া, চট্টগ্রামের বার আউলিয়াসহ বেলায়তের অসংখ্য ধারক-বাহক এ উপমহাদেশে সুদূর মাতৃভূমি ছেড়ে এসেছিলেন, ঠিক সে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটল না হযরত শাহানশাহে সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হির জীবনেও। ফানাফিশ শায়খের প্রতিটি পরীক্ষায় সফলতার মাধ্যমে উচ্চ স্তরের বেলায়ত লাভে ধন্য হওয়ার পর সঙ্গত কারণে তিনি আর নিজ দেশে থাকতে পারলেন না। এ ‘খোদায়ী শক্তি’ বেলায়ত দ্বীন ইসলাম ও ত্বরীকায়ে ক্বাদেরিয়ার কাজে লাগাতে হবে আল্লাহর হুকুম যেখানে হয়েছে সেখানে। তাই ১৯২০ সালে তাঁর পীর সাহেবের নির্দেশে সুদূর রেঙ্গুনে চলে গেলেন। হুজুর কেবলা যখন রেঙ্গুনে চলে আসলেন তখন তাঁর বয়স ষাটের কম নয়। প্রৌড় বয়স সত্ত্বেও দ্বীন ও ত্বরীক্বতের সকল উদ্দেশ্য তাঁর মাধ্যমে সফল হয়েছিল ওই অঞ্চলে।

  • আনজুমান প্রতিষ্ঠা

হুজুর কেবলা ১৯২৫ সালে বার্মার রেঙ্গুনে অবস্থানকালীন মাযহাব ও মিল্লাতের কর্মকান্ড পরিচালনার্থে ‘আনজুমান-এ শুরায়ে রহমানিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। হুজুর কেবলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি চট্টগ্রামে এসে এ সংগঠনকে পরিবর্ধিত করে ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ নামে পুনপ্রতিষ্ঠিা করেন। যা আজ শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বে সুন্নী মুসলমানদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য দ্বীনি কল্যাণ ট্রাস্ট হিসেবে স্বীকৃত। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেক মসজিদ-মাদরাসা, খানক্বাহ্, এতিমখানা নির্মিত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অধুনা এসব প্রতিষ্ঠান কেবল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানাচর্চার কেন্দ্ররূপে সুপরিচিত।

  • জামেয়া প্রতিষ্ঠার ইতিকথা

চট্টগ্রাম অবস্থানকালে হুজুর কেবলা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করতেন এবং উপস্থিত জনসমক্ষে অতি সারগর্ভ চিত্তাকর্ষক ওয়াজ-নসিহত করতেন। সুতরাং ১৯৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে মাওলানা এজাহার সাহেবের সবিনয় আহ্বানে তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল নামক গ্রামে সফর করেন। বাঁশখালীর ওই অঞ্চলে হুযূর ক্বেবলার শুভাগমন উপলক্ষে ওয়ায-মাহফিলের আয়োজন করা হলো। মাহফিলে হুজুর কেবলা প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তকরীরের প্রারম্ভে ক্বোরআন করীমের আয়াত ‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু… তাসলীমা’ পাঠ করলেন। তাও এ উদ্দেশ্যে যে, সমবেত শ্রোতাগণ নবী করীমের উপর দুরূদ-সালাম পড়বেন। কিন্তু দেখা গেলো বিপরীত। সমবেত কেউ দুরূদ শরীফ পড়লোনা। আওলাদে রসূল, হুজুর কেবলা ওই ঘটনায় এত বেশি মর্মাহত ও রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, তিনি ওই রাতে এবং পরদিন কোন পানাহার পর্যন্ত করেননি। চট্টগ্রামে এসে পীরভাইদের ডাকলেন এবং এসব দ্বীনের দুশমনদের বিরুদ্ধে আদর্শিক প্রতিরোধের আহ্বান করেন। ঘোষণা দেন যে, ‘এহাঁ এক মাদরাসা হোনা চাহিয়ে’ অর্থাৎ এখানে একটি মাদরাসা হওয়া প্রয়োজন। ‘এয়সা জাগাহ্ হো, কেহ্ গাঁও ভী না হো, শরহছে দূর ভী না হো, মসজিদ ভী হো, তালাব ভী হো, আ-নে জা-নে মে তাকলীফ ভী না হো, অর্থাৎ এমন জায়গায় হবে যে, তা গ্রামও নয়, শহর থেকে দূরেও নয়, মসজিদও থাকবে, পুকুরও হবে, আসা-যাওয়ায়ও যেন কষ্ট না হয়।’’ তৎকালীন পীর ভাইয়েরা কুতুবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) ফরমায়েশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বেশ কিছু জায়গা হুজুর কেবলাকে দেখান। অবশেষে শাহানশাহে সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হিকে আনজুমানের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের পিতা মরহুম আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম সওদাগর আলক্বাদেরী ষোলশহরের নাজিরপাড়ায় বর্তমান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার স্থানটি দেখান। কুতুবুল আউলিয়া জায়গাটি দেখার সাথে সাথে অত্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটিই। হুজুরের এ অভিব্যক্তি দেখে উপস্থিত মুরীদগণ বুঝতে পারলেন, এ জায়গাটি হুজুর কেবলার পরম কাক্সিক্ষত।

  • কাঙ্খিত স্বপ্নের জামেয়া প্রতিষ্ঠা

১৯৫৪ সালের এক শুভক্ষণে ওই নির্ধারিত স্থানটিতে এশিয়া খ্যাত সুন্নী মতাদর্শের দ্বীনি শিক্ষা-নিকেতন ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া’ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা আজো দুশমনে রাসূলের বিরুদ্ধে আদর্শিক মোকাবেলায় কালজয়ী ভূমিকা পালন করছে। হুজুর কেবলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি ঘোষণা করেন যে, ‘ইয়ে জামেয়া কিসতিয়ে নূহ হ্যায়’ এই জামেয়া হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর কিসতি তুল্য’। নিজ মুরীদদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘মুঝেহ্ দেখনা হ্যায় তো মাদরাসা কো দেখো, মুঝছে মুহাব্বত হ্যায় তো মাদরাসা কো মুহাব্বত করো।’ অর্থাৎ যদি আমাকে দেখতে চাও, তবে মাদরাসাকে দেখ, আমার প্রতি মুহাব্বত থাকলে মাদরাসাকে মুহাব্বত করো। হুজুর কেবলার প্রেমিক ভক্তরা এ নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করছেন। জামেয়ার প্রতি মুহাব্বত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহির প্রতি মুহাব্বতের নামান্তর।

  • ওফাত

১৯৬১ সালের ১ শাওয়াল ঈদের জামাতে ইমামতির দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে হুজুর কেবলা সিরিকোটী তাঁর সাহেবজাদার উপর অর্পিত বিশাল দ্বীনি নেতৃত্বের অভিষেক করান। ১ শাওয়াল থেকে ১০ যিলক্বদ পর্যন্ত এ চল্লিশ দিনে সাথে থাকতেন হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি। প্রকৃতপক্ষে হুজুর সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে গাউসিয়াতের মহান দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন এ চল্লিশ দিনে। এভাবে চল্লিশতম দিবসে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরক্ত মুরীদান অসংখ্য দ্বীনদার অনুসারীদের শোক সাগরে ভাসিয়ে, এ উপমহাদেশের সিলসিলায়ে কাদেরিয়া আলীয়ার প্রবর্তক আওলাদে রসূল, শরীয়ত ও তরীকতের আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৯৬১ সালে ১০ যিলক্বদ ১৩৮০ হিজরীর রোজ বৃহস্পতিবার রাত বারোটায় শত বছরের কঠিন পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে সিরিকোট শরীফের রওযা মোবারকে চির বিশ্রামের জন্য এ জাহেরী হায়াতের ইতি টানেন এবং পরদিন ১১ যিলক্বদ জুমা দিবসে রওজা মোবাকে চিরশায়িত হন

-মাসিক তরজুমান


Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading