সাম্প্রতিক আপডেটঃ

রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পিতা-মাতা ঈমানের উপর(মু’মিন)ছিলেন।

শায়খ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আব্দুল হালিম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পিতা মাতা তৌহিদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর একত্ববাদে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে তদানুযায়ী জীবন যাপন করতেন। এমনকি তাঁদের উভয়ের বংশীয় পূর্ব পুরুষ ও মহিলাগণও তৌহিদে বিশ্বাসী ছিলেন। শির্ক কুফরের অপবিত্রতা তাঁদের কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁরা তা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্রই ছিলেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপন হাবীবের পবিত্র নূরকে পাক পবিত্র পুরুষগনের ঔরসেই এবং পবিত্র মহীয়সী মায়েদের মাধ্যমে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।কারন, কোন কাফির পুরুষ কিংবা নারীর এহেন সৌভাগ্য হতে পারেনা।

সুতরাং,রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর সম্মানিত পিতা-মাতা তাঁদের জীবদ্দশায় যেমন তৌহিদ-এ বিশ্বাসী ছিলেন,তাঁদের ইন্তিকালও হয়েছিল ঈমানের উপর।এ অকাট্য সত্য তথ্যের স্বপক্ষে নিম্নে কতিপয় অকাট্য প্রমাণ পেশ করার প্রয়াস পেলাম।

 

পবিত্র কুরআনের আলোকে

(এক) পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান-

وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ

উচ্চারণঃ ওয়া তাক্বাল্লুবাকা ফিস্‌ সাজিদীন।

অর্থাৎ,হে নবী!আমি আপনাকে সিজদাকারীদের পৃষ্ঠের মাধ্যমে(ঔরসে)স্থানান্তরিত করেছি। (সূরা শু’আরা-২২৯)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে,হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে আরম্ভ করে হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত সকল পূর্বপুরূষই মু’মিন ছিলেন।(তাফসীরে মাদারিক)

(দুই) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ۔۔۔۔۔الایۃ

উচ্চারনঃ-লাক্বাদ জা’আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা’আনিত্তুম।

অর্থঃ-নিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরিফ আনয়ন করেছেন,তোমাদের মধ্যে থেকে ঐ রাসূল,যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক। (সুরা তাওবা-১২৮)

এ আয়াতের انفسکم শব্দটির আরবী অক্ষরটিতে ‘যবর’ ও বর্ণিত হয়েছে। তখন আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়- তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বো্কৃষ্ট,অভিজাত ব্যক্তিবর্গ থেকে এক মহান রাসূল তাশরীফ আনয়ন করেছেন(খাসায়িসুল ক্বুবরা,তাফসীরে-ই-নঈমী)।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নিজেও উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করার সময়।‘ف’ তে যবর দিয়ে তিলাওয়াত করার পর ইরশাদ করেন,

انا انفسکم

উচ্চারনঃ-(আনা আনফাসূকুম)

অর্থাৎ,আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম বংশোদ্ভূত।

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু পর্যন্ত কেউ মন্দ ও অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হননি। (খাসায়িসুল ক্বুবরা)

(তিন)পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ

উচ্চারনঃ- ইন্নামাল মুশরিকুনা নাজাসুন।

অর্থঃ-নিসন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র। (সূরা তাওবা-২৮)

কুরআন মজীদে যেহেতু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুশরিকদেরকে অপবিত্র বলে ঘোষনা করেছেন,সেহেতু তিনি তাঁর প্রিয় নবীর নূরকে যেকোন নাপাক ব্যক্তির ঔরসে রাখবেন না,তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

এ কথার সমর্থনে রাসূলে পাকের এ হাদীস শরীফটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।তিনি ইরশাদ করেন-আল্লাহ তায়ালা আমাকে সর্বদা পূত-পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র গর্ভেই স্থানান্তরিত করেছেন। পবিত্র পরিচ্ছন্ন-দুটি বংশীয় ধারার উভয়টির মধ্যে আমি উত্তম বংশের অন্তর্ভূক্ত। (খাসাইসুল ক্বুবরা)

 

হাদীস শরীফের আলোকে

রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর সম্মানিত পিতা-মাতা, পিতামহ ও মাতামহগন, যাঁদের মাধ্যমে তাঁর পবিত্র ও বরকতময় নূর স্থানান্তরিত হয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাঁদের সম্পর্কে খোদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করছেন-

(এক) “আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠদেশ সমূহ থেকে পবিত্র মাতৃগর্ভ সমূহে স্থানান্তরিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে আবির্ভূত হয়েছি। (দালায়েলুন্‌ নবুয়্যত)”

(দুই) আমি প্রতিটি যুগে মানবজাতির সর্বস্তরের সর্বশ্রেষ্ঠ বংশে আবির্ভূত হয়েছি। (বুখারী শরীফ,সীফাতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা শীর্ষক অধ্যায়)

(তিন) আল্লাহ তায়ালা ধারাবাহিকভাবে পবিত্র পৃষ্ঠদেশ ও পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করে ভূ-পৃষ্ঠে আমার বরকতময় আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। (কিতাবুশ্‌ শেফা)

উপরোক্ত হাদীস শরীফগুলো থেকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর সম্মানিত পিতা-মাতা এবং পিতামহ ও মাতামহগনের সব ধরনের পাপ-পঙ্কি্লতা থেকে পবিত্রতারই প্রমাণ মিলে।

হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে আরম্ভ করে হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা পর্যন্ত যারা যথাক্রমে আপন আপন ঔরস ও গর্ভে নূরনবীর নূর বহন করেছেন,তাঁদের চারিত্রিক পবিত্রতা প্রসঙ্গে আরো কতিপয় হাদীস শরীফ দেখুন-

(এক) রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ ফরমায়েছেন,জাহেলি যুগে “সিফাহ” নামে যেসব অপকর্ম চলত সেগুলোর কোনটার মাধ্যমেই আমি দুনিয়াতে আসিনি।(বায়হাকী শরীফ)

উপরোক্ত হাদীসে “সিফাহ” শব্দটির অর্থ হচ্ছে-ব্যাভিচার। ইসলামী পরিভাষায় সেটাকে যিনা বলা হয়।

অন্ধকারযুগে যিনা-ব্যাভিচার ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল, কিন্তু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পিতৃপুরুষগণ আইয়ামে জাহেলিয়ার কু-প্রথা উক্ত “সিফাহ”রুপী অপকর্ম হতে পাক পবিত্র ছিলেন।যেমন-হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন আমি পবিত্র নিকাহ এর মাধ্যমে আগমন করেছি।  “সিফাহ” এর মাধ্যমে নয়।”

(দুই) হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগ থেকে অদ্যাবধি আমার পিতা-মাতা ও পূর্বপূরুষগনের ঔরসে পবিত্র নিকাহ এর মাধ্যমেই আমার আগমন হয়েছে। অপবিত্র সিফাহ এর মাধ্যমে নয়। আমার পিতৃপূরুষগন আজীবন “সিফাহ” থেকে পবিত্র ছিলেন। (তাবরানী শরীফ)

(তিন) হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম স্বয়ং বর্ণনা করেছেন,আমি সমগ্র জাহান তদন্ত করে দেখলাম, আমি কোথাও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা অপেক্ষা উত্তম পূরুষ দেখিনি, তাঁর বংশ ও গোত্র অপেক্ষা উত্তম কোন বংশ বা গোত্র আমার নজরে পরেনি, আর বনূ হাশেম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোন গোত্রই আমি দেখিনি। (তাবরানী শরীফ)

হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম যেই বনূ হাশেম গোত্র সম্পর্কে “সেটাই সর্বোচ্চ বংশ ও গোত্র” বলে মন্তব্য করেছেন, বাস্তবতাও যে বংশের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। সেই উচ্চতর বংশেই আমাদের আক্বা ও মাওলা বিশ্বকূল সরদার হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বেলাদত শরীফ হয়েছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নিজেও বহুবার আপন যবানে পাকে আপন বংশপরিচয় দিয়ে ইরশাদ করেছেন, “আমি হলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দিল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ”। অনুরুপভাবে,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কখনো কখনো ‘আদনান’পর্যন্ত নিজের বংশ সূত্র বর্ণনা করেছেন।

 

Check Also

হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর স্ত্রীগণ সমগ্র জাহানের স্ত্রীলোকদের চেয়ে উত্তম।

*হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বিবিগণের ভিন্ন ভিন্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *