ইসলামে রাফেযী তথা শিয়াদেরকে বিবাহ করার বিধান

মূলঃ চতুর্দশ শতাব্দির  মুজাদ্দিদ ইমাম আহমাদ রাযা রাহিমাহুল্লাহু

ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন

‘বিবাহ’ মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেহেতু বিবাহ’র দ্বারা মানব সভ্যতা বিস্তার লাভ করে, তাই ইসলামের মধ্যে ‘বিবাহ’কে একটি পবিত্র কাজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। কারণ মানবজীবনের জন্যই শুধুমাত্র ইসলামকেই একমাত্র ধর্ম হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বিবাহ’র ব্যাপারে স্বয়ং খোদা তায়ালা ইরশাদ করছেন-

فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ

অর্থাৎ তোমরা বিবাহ করে নাও, যেসব নারী তোমাদের ভালো লাগে। (সূরা নিসা, আয়াত-৩)

মুসলমানদের জন্য ইসলাম কর্তৃক বিবাহ’র কিছু শর্তাবলী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরত্বপূর্ণ একটি শর্ত হল, বিবাহের পাত্র-পাত্রী’র একই আক্বিদা বা বিশ্বাসের হওয়া আবশ্যক; অর্থাৎ উভয়কেই মুসলমান(সুন্নী) হওয়া জরুরি। এখানে “সুন্নী” শব্দটি উল্লেখ করলাম এজন্যই যে, হাদিসে পাকের মধ্যে একমাত্র ‘সুন্নী’ ছাড়া বাকীদেরকে বদ-আক্বিদা সম্পন্ন জাহান্নামী বলা হয়েচ্ছে। যেমনটা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলছেন যে, আমার উম্মত(কালেমা পড়া) তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। যাদের একটি মাত্র দল বাদে বাকী সব দলগুলোই জাহান্নামে যাবে। (সহীহ তিরমিযী : ২৬৪১)

এখানে জাহান্নামী বাহাত্তর দল বলতে আইম্মায়ে কিরাম এবং হাদিস বিশারদগণ বলছেন, খারেজী, রাফেজী(শিয়া), মু’তাজিলা, জাহমিয়া, জাবরিয়া, কদরিয়া সহ সর্বমোট ৭২টি পথভ্রষ্ট মতবাদ। আর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নাজাতপ্রাপ্ত দলটি বলতে ‘সুন্নী’ তথা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতকে বুঝিয়েছে; যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এবং সাহাবায়ের কিরামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে আসছে। সকল তাফসীকারক এবং হাদিসবেত্তাগন এই বিষয়ের উপর একমত

আলহামদুলিল্লাহ! মহান রাব্বুল আলামীন এর দরবারে অগণিত কৃতজ্ঞতা যে, আমরা সুন্নী মুসলমান। তাহলে আসুন জেনে নিই মুসলমান(সুন্নী) পুরুষ বা মহিলা অন্য বদ-আক্বিদা সম্পন্ন মহিলা বা পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কি না! [অনুবাদক]

চতুর্দশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ আ’লা হাযরাত ইমাম আহমাদ রাযা খাঁ ফাযেলে বেরেলভী রাহিমাহুল্লাহ’র নিকট এক ব্যক্তি এসে প্রশ্ন রাখলো যে, “মুহতারাম ! রাফেযী’দের সাথে বিবাহ হওয়ার বিধান কি? আজকাল তো এমন এক আজব পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, কোন রাফেযী(শিয়া) হয় কারো সম্পর্কে মামা হয়, নতুবা কারো শ্যালক। মানে কোন না কোন দিক থেকে তাদের সাথে (আত্মীয়তার) সম্পর্ক রয়েছে!”

এর জবাবে মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রাযা রাহিমাহুল্লাহ বললেন, এটা না-জায়েজ তথা অবৈধ। সে (যে এটা করলো) ব্যক্তি ঈমানদার’দের দল থেকে সরে গিয়েছে এবং তাঁর অন্তর থেকে আল্লাহ-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র ভালোবাসা চলে যাওয়ার পথে। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন,

إِمّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطانُ فَلا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْري مَعَ الْقَوْمِ الظّالِمينَ

তোমাকে যদি শয়তান ভুলিয়ে দেয়, তো স্মরণ আসার পর অত্যাচারীদের নিকট বসো না। [সূরা আন’আম, আয়াত-৬৮]

প্রিয় হুজুর আক্বদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেন-

ایاکم و ایاهم لا یضلونکم ولایفتنونکم

অর্থাৎ তোমরা তাদের(বদ-আক্বিদা সম্পন্ন লোকদের) থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকেও নিজ থেকে দূরে রাখো; যাতে তাঁরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে না দেয় এবং তোমাদেরকে যাতে ফিতনায় ফেলে না দেয়!” [সহিহ মুসলিম, মুকাদ্দামাহ বাবুন নাহি আন রিওয়াতিদ্‌ দ্বুয়াফা…, হাদিস-৭, পৃষ্ঠা-৯]

বিশেষ করে রাফেযীদের ব্যাপারেও একটি হাদিস শরিফ রয়েছেঃ

یاتی قوم لھم نبز یقال لھم الرافضۃ لا یشھدون جمعۃ ولا جماعۃ و یطنعون علی السلف فلا تجالسوھم ولا تؤاکلوھم ولا تشاربوھم ولا تناکحوھم واذا مرضوا فلا تعودوھم واذا ماتو فلا تشھدوھم

অর্থাৎ, একটি সম্প্রদায় আসবে; তাদের একটি খারাপ উপাধি থাকবে। তাদেরকে ‘রাফেযী’ বলা হবে। তারা না জুম’আর নামাজে শরিক হবে, না (অন্যান্য নামাজের)জামা’আতের মধ্যে। তারা সালফে সালেহীন(পূর্ববর্তী হক্বপন্থি)দের অপবাদ দিবে। তোমরা তাদের পাশে বসো না! তাদের সাথে খানা-পিনা এবং বিবাহ-শাদী করবে না! অসুস্থ হলে দেখতে যাবে না! মৃত্যুবরণ করলে তাদের জানাযায় উপস্থিত হবে না!

এরপর ইমাম আহমাদ রাযা রাহিমাহুল্লাহ এ সংক্রান্ত একটি ঘটনার অবতারণা করলেন যে,

“ইমরান বিন হিত্বা রাকাশী” পূর্ববর্তী প্রথিতযশা হাদিসবেত্তাগণে’র মধ্যে অন্যতম একজন ছিল। তার এক চাচাতো বোন ‘খারেজী’ ছিলো। তাকে সে বিবাহ করলো। তৎকালীন উলামায়ে কিরামগন এ খবর পেয়ে তাকে(রাক্কাশীকে) তিরস্কৃত করলেন। এর জবাবে ইমরান বিন হিত্বা বললো- “আরে, আমি তো তাকে খারেজী মতাদর্শ থেকে আমাদের (সুন্নী)মতাদর্শে আনার জন্য বিবাহ করেছি।”

এক বছর হতে না হতেই সে(ইমরান বিন হিত্বা) নিজেই খারেজী বনে গেলো। [আল ইসাবাহ ফিত্‌ তাময়িজিস সাহাবা, হরফুল ‘আইন’, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ২৩৩]

ফার্সিতে একটি কবিতা রয়েছে,

شد غلام کہ آب جو آرد

آب جو آمد وغلام ببرد

অর্থাৎ, এক গোলাম নদী থেকে পানি আনতে গেলো, নদীর পানি যখন ভরতে লাগলো, তখন পানি-ই গোলামকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো।

অর্থাৎ, শিকার করতে গিয়ে নিজেই শিকার হয়ে গেলো।

সুতরাং তাদের সাথে ঐ প্রেক্ষিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যেতে পারে, অর্থাৎ যাকে বিবাহ করা হচ্ছে সেই পাত্র বা পাত্রী যদি প্রাথমিক যুগের কতেক রাফেযী(শিয়া) দের ন্যায় হয়, কারণ সে সময়কার কতেক রাফেযীরা খারাপ মতাদর্শের ছিল ঠিক, কিন্তু ইসলাম এর সীমানা থেকে বের হয় নাই। [অর্থাৎ প্রাথমিক যুগের শিয়ারা সকল সাহাবাদেরকে মান্য করতো, যেটা বর্তমান সময়কার শিয়ারা মান্য করে না। ঐ যুগের শিয়ারা সাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’কে হযরত আবু বকর সিদ্দীক, ওমর ফারুক, উসমান যিন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম’দের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। এরকম বিশ্বাস রাখাটা ফাসেকী, কুফরী নয়- অনুবাদক]

কিন্তু বর্তমান সময়কার রাফেযী’রা তো ঢালাওভাবে ধর্মের অকাট্য বিষয় সমূহকে অস্বীকারকারী; এই অস্বীকার দ্বারা তাঁরা অকাট্যভাবে ‘মুরতাদ’(ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের কোন আবশ্যিক বিষয়কে অস্বীকারকারী) হয়ে গিয়েছে। [বর্তমান শিয়ারা ইসলামের অনেক অকাট্য বিষয়াদি অস্বীকার করছে। বর্তমান শিয়ারা সালফে সালেহীন সহ নবীজীর সম্মানিত সাহাবীদেরকে পর্যন্ত গালিগালাজ থেকে রেহাই দেয় নাই। এমনকি তারা নবীজীর শান-মান এর বিষয়েও কতেক স্থানে আপত্তি তুলেছে। নাউজুবিল্লাহ – অনুবাদক]

সুতরাং তাদের কোন পুরুষ বা মহিলার সাথে কোন মুসলমানের বিবাহ হতেই পারে না। এমনিভাবে ওহাবী(খারেজীদের শাখা), কাদিয়ানী, দেওবন্দী(খারেজীদের শাখা), নাস্তিক, চক্রালবী মতাদর্শের সব মুরতাদ হয়ে গিয়েছে [কারণ তারা দ্বীনের অনেক আবশ্যিক বিষয় সমূহকে ইতোমধ্যে অস্বীকার করে ফেলেছে- অনুবাদক] এজন্যই এ সকল মুরতাদ পুরুষ বা মহিলা’দের সমগ্র জগতের মধ্যে যার সাথেই বিবাহ হবে, সে মুসলমান হোক বা কাফিরে আস্‌লী(এমন কাফির যে বিবেকবান হওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ করে নাই) বা মুরতাদ, মানুষ হোক বা পশু; এই বিবাহ অশুদ্ধ এবং (বিবাহ পরবর্তী কার্যাদি) ব্যভিচার এর অন্তর্ভূক্ত হবে। এবং(তাদের) সন্তান যিনার সন্তান বলে পরিগণিত হবে। ফতোয়ায়ে আলমগীরী’র “জ্বহিরিয়্যাহ” তে বলা আছে,

“احکامھم احکام المرتدین”

অর্থাৎ তাদের বিধান সমূহ মুরতাদ’দের বিধানের মতই। [আল ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, কিতাবুস সিয়ার, মাতলাবু মুজিবাতিল কুফর, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬৪]

সেখানে একথাও উল্লেখ আছে যে,

لایجوز للمرتد ان یتزوج مرتدۃ ولا مسلمۃ ولا کافرۃ اصلیۃ و کذالک لایجوز نکاح المرتدۃ مع احد

অর্থাৎ মুরতাদ পুরুষের বিবাহ কেবল মুরতাদ মহিলার সাথেই বৈধ। না কোন মুসলমান মহিলার সাথে বা কাফিরে আসলী’র সাথে। এমনিভাবে মুরতাদ মহিলার বিবাহও (মুরতাদ পুরুষ ছাড়া)কারো সাথে বৈধ নয়। [আল ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, কিতাবুন নিকাহ, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, সপ্তম ভাগ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা-২৮২]

[আল্লাহ্‌ তায়ালা-ই সর্বাধিক জ্ঞাত]

[মাসয়ালাটি আলা হযরত ইমাম আহমাদ রাযা রাহিমাহুল্লা’র “মালফুযাতে আলা হযরত” কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডের ৩০০ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে। কিতাবটির প্রকাশক হচ্ছে “মাকতাবাতুল মাদীনা” করাচী, পাকিস্তান।]

 


Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার

শায়খ সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী বিয়ে হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading