মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
রমযানে প্রচলিত একটি আমল সালাতুত তারাবীহ বা তারাবীহ নামায।কোন কারণ না থাকলে আমরা সাধারণত তারাবীহ’র নামায জামাত সহকারেই আদায় করে থাকি।কিন্তু এর ইতিহাস সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। তাই আসুন তারাবীহ জামাত কিভাবে থেকে শুরু হয়,এই ব্যাপারটি আমরা জেনে নিই।নিম্নে এ সংক্রান্ত কতিপয় হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি প্রদান করা হল।
- সহীহ আল বুখারী শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত-
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي المَسْجِدِ، فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلَّى مِنَ القَابِلَةِ، فَكَثُرَ النَّاسُ، ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ، فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। লোকজনও তাঁর সাথে সালাত আদায় করল । পরবর্তী রাতে তিনি সালাত আদায় করলেন এবং বহু লোকের সমাগম হল । এরপর তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হুজরা মুবারক হতে বের হলেন না । ভোর বেলা তিনি লোকদেরকে বললেন, (গতরাতে) তোমাদের কৃতকর্ম আমি সবই অবলোকন করেছি । তোমাদের উপর (তারাবীহ) ফরজ করে দেয়া হবে বলে আমি আশংকা করেছিলাম। সে জন্যেই আমি আসিনি। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল রমজান মাসে ।[১]
- ইবনে খুযাইমাহ ও ইবনে হিব্বান এতে অতিরিক্ত যোগ করে বলেন –
وَ زَادَ ابْنُ خُزَيْمَةَ وَابْنُ حِبَّانَ: وَ کَانَ رَسُولُ اﷲِ صلی الله عليه وآله وسلم يُرَغِّبُهُمْ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَ بِعَزِيْمَةِ أَمْرٍ فَيَقُولُ: مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَ احْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اﷲِ صلی الله عليه وآله وسلم فَکَانَ الْأَمْرُ کَذَلِکَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَکْرٍ رضي اﷲ عنه وَ صَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ رضي اﷲ عنه حَتَّی جَمَعَهُمْ عُمَرُ رضي اﷲ عنه عَلَی أُبِّيِ بْنِ کَعْبٍ وَ صَلَّی بِهِمْ فَکَانَ ذَلِکَ أَوَّلُ مَا اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلَی قِيَامِ رَمَضَانَ.
আর হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কিয়ামে রমাদ্বান তথা তারাবীহ কে উৎসাহ প্রদান করতেন একে হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করতেন না। যেমন তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের/পূন্যলাভের আশার সাথে রমজানের রাত্রে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেসাল মুবারক পর্যন্ত কিয়ামে রমদ্বানের (তারাবীহ) এ অবস্থা বর্তিত ছিল আর অনুরূপ ব্যবস্থা হযরত আবু বকর সিদ্দীক ও উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এর সময়েও ছিল। এমনকি হযরত উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে তিনি নিজেই হযরত উবাই বিন কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে সকলকে একত্রিত করে তারাবীহ নামাযের ব্যবস্থা করেন । আর এটাই ছিল প্রথম যখন লোকেরা তারাবীহ নামাযের জন্য মসজিদে একত্রিত হতেন ।[২]
- হাফিজ ইবনে হাজর আসকালানী তাঁর ‘তালখীস’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-
أَنَّهُ صلی الله عليه وآله وسلم صَلَّی بِالنَّاسِ عِشْرِيْنَ رَکْعَةً لَيْلَتَيْنِ فَلَمَّا کَانَ فِي اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ اجْتَمَعَ النَّاسُ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ ثُمَّ قَالَ مِنَ الْغَدِ: خَشِيْتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْکُمْ فَلَا تَطِيْقُوهَا
হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের বিশ রাকা’ত তারাবীহ পড়িয়েছেন আর যখন তৃতীয় রাত উপস্থিত হল এবং লোকেরা একত্রিত হল তিনি তাঁর হুজরা মুবারক হতে বের হননি। পরবর্তী দিন সকালে তিনি ইরশাদ করলেন, আমি ভয় করছি যে, এটা (তারাবীহ) তোমাদের উপর ফরজ না হয়ে যায়, আর তোমরা তা আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়বে ।[৩]
- আবু দাউদ শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত –
خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا أُنَاسٌ فِي رَمَضَانَ يُصَلُّونَ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ، فَقَالَ: «مَا هَؤُلَاءِ؟»، فَقِيلَ: هَؤُلَاءِ نَاسٌ لَيْسَ مَعَهُمْ قُرْآنٌ، وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي، وَهُمْ يُصَلُّونَ بِصَلَاتِهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَصَابُوا، وَنِعْمَ مَا صَنَعُوا
একদিন (রমজান মাসে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হুজরা মুবারক হতে বের হয়ে দেখতে পান যে, মসজিদের এক পাশে কিছু লোক নামায আদায় করছে । তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এরা কি করছে ? আরজ করা হল, এদের কুরআন মুখস্ত না থাকায় তারা উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পিছনে (মুক্তাদি) হিসেবে তারাবীহর নামায আদায় করছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তারা ঠিকই করছে ।[৪]
- বায়হাক্বীর বর্ণনায় বলা হয়েছে –
قَدْ أَحْسَنُوا أَوْ قَدْ أَصَابُوا وَلَمْ يَکْرَهْ ذَلِکَ لَهُمْ
তারা কতইনা সুন্দর অথবা ভাল কাজ করছে, আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের এই আমল অপছন্দ করেননি ।[৫]
- তথ্যসূত্রঃ
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.