সংকলনঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় এবং গুরত্বপুর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে ‘সালাত’, যাকে আমরা নামাজও বলে থাকি। ইসলামের অনস্বীকার্য এই স্তম্ভ প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। ফরয নামায ছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় বা বিশেষ দিবস-রজনীতে খোদা তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেও নফল নামায আদায় করে থাকি। ফরয নামায ত্যাগকারী কবীরা গুনাহগার হবেন এবং নামাযকে অস্বীকারকারী ‘কাফির’ হিসেবে ইসলামী শরীয়তে পরিগণিত হবে। এছাড়াও অনিচ্ছা সত্ত্বে কেউ ফরয নামায আদায় না করলে তাকে পরবর্তীতে অবশ্যই আদায় না হওয়া নামাযের কা’যা আদায় করে নিতে হবে। অর্থাৎ নামাজ আমাদের জীবনের দৈনন্দিন এমন একটি আমল, যার আদায় মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিটি আমল আদায়ের যেমন সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান থাকে, তেমনি নামাযের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। নামাজের মধ্যেও রয়েছে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব বিধানসমূহ। নামাজের মধ্যে ভেতর-বাহির মিলিয়ে সর্বমোট ১৩ টি ফরয রয়েছে; যার একটিও যদি নামায থেকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় বাদ পড়ে, তবে ঐ নামায ভেঙ্গে পুনরায় আদায় করতে হবে। এছাড়াও নামাযে রয়েছে কিছু ওয়াজিবসমূহ; যা কিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে নামাযকে পুনরায় নতুন নিয়তের দ্বারা আদায় করতে হবে আর অনিচ্ছায় বা ভূলে হয়ে থাকলে ‘সাজদা-এ সাহু’র মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করতে হবে।
আজ আমরা নামাযের মধ্যে সেসকল ওয়াজিবসমূহ সম্পর্কে জানবো, যেগুলো নামাযে অনিচ্ছায় বাদ পড়লে ‘সাজদা-এ সাহু’ ব্যতীত নামায আদায় শুদ্ধ হবে না।
১। তাকবীরে তাহরীমায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। [দুররে মুখতার]
২। সূরা ফাতিহা পুরো পড়া। অর্থাৎ পুরো সুরার একটি শব্দও বাদ দেওয়া যাবে না। [ফাত্ওয়া-এ রজভীয়্যা]
৩। সূরা ফাতিহার সাথে সুরা মিলানো অথবা বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত মিলানো। [বাহারে শরীয়ত]
৪। ফরয নামাযের প্রথম দু’রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানো ।[বাহারে শরীয়ত]
৫। নফল, সুন্নাত এবং বিতর নামাযের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানো। [বাহারে শরীয়ত]
৬। সূরা ফাতিহা(মিলানো) সূরার পূর্বে পড়া। [বাহারে শরীয়ত]
৭। (মিলানো)সূরার পূর্বে শুধু একবারই সূরা ফাতিহা পড়া। [বাহারে শরীয়ত]
৮। সূরা ফাতিহা এবং সূরার মাঝখানে ব্যবধান না থাকে। অর্থাৎ ‘আমীন’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া কিছু না পড়া। [বাহারে শরীয়ত]
৯। কিরাতের পর পরই দেরী না করে রুকু করা। [রদ্দুল মুহতার]
১০। ‘কাওমা’ অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা দাঁড়ানো। [বাহারে শরীয়ত]
১১। প্রতিটি রাকাতে শুধু একবার রুকু করা। [দুররে মুখতার]
১২। একটি সাজদা আদায়ের পর দেরী না করে অন্য সাজদা করা। অর্থাৎ দু’সাজদার মাঝখানে কোন রুকন পরিমাণ সময় ব্যবধান না হওয়া। [বাহারে শরীয়ত]
১৩। সাজদায়ে উভয় পায়ের তিন তিনটি আঙ্গুলের পেট মাটিতে লাগানী। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
১৪। ‘জালসা’ অর্থাৎ দু’সাজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা। [বাহারে শরীয়ত]
১৫। প্রতিটি রাকাতে দু’বারই সাজদা করা। দুটির চেয়ে বেশী সাজদা না করা। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
১৬। তা’দীলে আরকান অর্থাৎ রুকু, সাজদা, কাওমা ও জালসায় কমপক্ষে একবার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ অবস্থান করা। [সকল ফিকহের কিতাব]
১৭। দ্বিতীয় রাকাতের পূর্বে কা’দা(বৈঠক) না করা। অর্থাৎ এক রাকাতের পর কা’দা না করা বরং দাঁড়িয়ে যাওয়া। [বাহারে শরীয়ত]
১৮। প্রথম বৈঠক করা যদিও নফল নামায হোক। অর্থাৎ দু’রাকাতের পর বৈঠক করা। [মুনিয়্যাতুল মুসাল্লি]
১৯। প্রথম বৈঠক এবং শেষ বৈঠকে ‘তাশাহুদ’ পুরোটা পড়া। [দুররে মুখতার]
২০। ফরয, বিতর এবং সুন্নাত-এ মুয়াক্কাদাহ বিশিষ্ট নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর কোন কিছু না পড়া। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
২১। চার রাকাত বিশিষ্ঠ নামাযের তৃতীয় রাকাতে কা’দা না করা এবং চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া।
২২। উচ্চস্বরে কিরাত বিশিষ্ট নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে কিরাত পড়া। [দুররে মুখতার]
২৩। নিম্নস্বরে কিরাত বিশিষ্ট নামাযে ইমাম নিম্নস্বরে কিরাত পড়া। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
২৪। বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। [ফাতওয়া-এ আলমগীরী]
২৫। বিতর নামাযে দু’আ কুনূত পড়া। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
২৬। ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা। [বাহারে শরীয়ত]
২৭। ঈদের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার জন্য ‘আল্লাহু আকবার’(তাকবীর) বলা। [বাহারে শরীয়ত]
২৮। সাজদার আয়াত পড়লে তিলাওয়াতে সাজদা করা। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
২৯। নামাযে অনিচ্ছাকৃত ভূল হলে সাজদা-এ সাহু করা। [দুররে মুখতার]
৩০। প্রতিটি ফরয এবং প্রতিটি ওয়াজিব স্ব-স্থানে আদায় করা। [রদ্দুল মুহতার]
৩১। দু’ফরয অথবা দু’ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব ও ফরযের মাঝখানে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিরতি না হওয়া। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
৩২। যখন ইমাম কিরাত পড়বেন-উচ্চস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে, তখন মুক্তাদির নিশ্চুপ থাকা। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
৩৩। কিরাত ব্যতীত সমস্ত ওয়াজিব কাজে মুক্তাদির ইমামের অনুসরণ করা। [বাহারে শরীয়ত]
৩৪। উভয় সালামে ‘আস্সালামু’ বলা। ‘আলাইকুম’ বলা ওয়াজিব নয়। [ফাতওয়া-এ রজভীয়্যা]
- সাজদা-এ সাহু যেভাবে আদায় করবেনঃ
এ সাজদা আদায়ের নিয়ম হচ্ছে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ(আত্তাহিয়্যাতু) পড়ার পর ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে দু’টি সাজদা করবে এবং সাজদা শেষে বসে পুনরায় তাশাহুদ থেকে শুরু করে দরুদ শরীফ ও দোয়া-এ মাসূরা পড়ে সালাম ফেরাবে।