ইকামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন তার শরঈ বিধান সুস্পষ্ট । বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে সুন্নাতী পদ্ধতি ব্যবহার না করে মুসল্লিগণ ইকামতের পূর্বে দাঁড়িয়ে যান । খতীব/ইমামগন সঠিকভাবে মাস’আলাটি বর্ননা না করার ফলে হয়ত এ ধরনের প্রথা পৃথিবী ব্যাপী শুরু হয়েছে । তাই ইসলামী শরীয়তের আলোকে হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য ফিকাহ্ গ্রন্থাবলীর উদ্ধৃতিসহ নিম্নে বিষয়টি আলোচনা করা হলো; যাতে মুসল্লিগণ ইকামতের সময় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র সুন্নাত তরীকানুযায়ী দাঁড়াতে পারেন ।
পবিত্র হাদিসের আলোকে ইকামতে কখন দাঁড়াতে হবে
খাদেমে রাসূল হযরত আনাছ বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত। তিনি বলেন-
নামাযের ইকামত হয়ে গেছে, অতঃপর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আমাদের দিকে সামনা-সামনি হয়ে ফিরে গেলেন এবং বললেন, তোমাদের কাতার বা লাইন সমূহ সোজা কর ও একে অন্যের সাথে লাগিয়ে মিলিয়ে দাঁড়াও, কেননা নিশ্চয় আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।
— (বোখারী শরীফ)
বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা গেল, ইকামত বলার পর দাঁড়ানো, তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে কাতার সোজা করা এবং পিছনের দিক থেকেও অদৃশ্য জ্ঞানের বদৌলতে মুসল্লিদের রুকু সিজদা এমনকি অন্তরের অবস্থা পর্যন্ত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কর্তৃক দেখা ।
সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল, ইকামত শুরু করার পূর্বে কাতার সোজা করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে যাওয়া খেলাফে সুন্নাত । বরং ইকামত দেওয়ার পর কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে । অন্য একটি হাদিসে পাকে এসেছে-
হযরত নুমান বিন বশীর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম, তখন প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র আমাদের (নামাজের) কাতার সোজা করতেন । কাতার যখন সম্পূর্ন সোজা হয়ে যেত, তখন তিনি তাকবীরে তাহ্রীমা বলতেন ।
— মিশকাত শরীফ, পৃঃ ৯৮
বর্নিত হাদিসেও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কাতার সোজা করতেন ইকামতের পরে । কাতার সোজা হলেই তিনি তাকবীরে তাহ্রীমা বলে নিয়ত করতেন । আর অসংখ্য হাদিসের আলোকে হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে ইকামতের সময় কখন দাঁড়াতে হবে তা একভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
ফিকহ্’র আলোকে ইকামতের সময় দাঁড়ানোর পদ্ধতি
- ইমাম আযম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহিমা বলেছেন,
মুয়াজ্জিন যখন “হাইয়া আলাছ ছালাহ্” বলবে তখন মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন ।
— আইনী শরহে বোখারী, ফতোয়ায়ে ছালাছা , পৃঃ ২০
মুয়াজ্জিন ইকামত বলার সময় “হাইয়া আলাছ ছালাত” বললে ইমাম ও মুসল্লীগন দাঁড়াবে ।
— শরহে বেকায়া, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৫৮
যখন মুয়াজ্জিন ইকামত আরম্ভ করবে, এমন সময় যদি কোন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে তাঁকে বসে যেতে হবে । “হাইয়া আলাছ ছালাত বা ফালাহ্” পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে পারবে না । কেননা ইহা মাকরুহ । আল্লামা কাহাস্তানীর মুদমিরাত গ্রন্থে এরূপই বর্ণিত রয়েছে । তাহাতাভী প্রণেতা বলেন- কাহাস্তানীর কথা দ্বারা বুঝা গেল, ইকামতের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরুহ কিন্তু লোকেরা এ ব্যাপারে খুবই অমনোযোগী ।
— তাহতাভী আলা মারাকুল ফালাহ, পৃঃ ১৮৫
ইকামতের সময় যদি কোন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে তার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরুহ বরং সে (কাতারে) বসে যাবে । মুয়াজ্জিন যখন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবেন তখনই সে দাঁড়িয়ে যাবেন ।
— ফতোয়ায়ে আলমগীরী
এভাবে আর অসংখ্য কিতাবে ইকামতের সময় “হাইয়া আলাছ ছালাত” অথবা “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।
অতএব, পবিত্র হাদীস ও ফকীহগনের অভিমত থেকে এটাই প্রমাণিত হল- ইকামত বলার পূর্বে দাঁড়ানো মাকরুহ বরং ইকামত আরম্ভ করার পর “হাইয়া আলাছ ছালাত” বলার সময় মুসল্লীগন দাঁড়াবেন আর এরপর কাতার সোজা করবেন । পবিত্র হাদীস মতে কাতার সোজা করতে যতটুকু বিলম্ব হয়, তাতে কোন অসুবিধা নাই ।
আর বর্তমানে কোথাও কাতার সোজা করতে হয় না বরং প্রতিটি মসজিদে কাতার করাই আছে । তাই কাতার সোজা করার অজুহাতে ইকামতের পূর্বে দাঁড়িয়ে না থেকে বরং মুসল্লীগন বসে থাকবেন এবং “হাইয়া আলাছ ছালাত” বললে দাঁড়িয়ে যাবেন এটাই সঠিক সুন্নাত পদ্ধতি । আল্লাহ্ পাক সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন । আমীন
প্রবন্ধ কৃতজ্ঞতাঃ সুন্নী পিডিয়া বিডি
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.