ধর্মীয় এবং পার্থিব জীবনে সফলতা লাভের উপায়

আল্লামা মুহাম্মদ তাজ নুর আলী রজভী, ভারত

ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন

দ্বীনি ইল্‌ম তথা ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয করা হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমাদের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানের যে অপূর্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা অবশ্যই দূর করা উচিৎ। তথাপি ইবাদতের সহীহ পদ্ধতি নিজে শিক্ষা করা এবং অপরকে শিক্ষা দেওয়া উচিৎ। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ দুনিয়াবী হয়ে যাওয়ার কারণে ধর্মীয় শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। এজন্যই আমাদের উচিৎ জ্ঞানার্জন করা এবং সেই জ্ঞান এর আলোকে বিশুদ্ধ চিত্ত এবং সুস্থতার সাথে আল্লাহ তায়ালা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইবাদত বন্দেগী করা। সুতরাং আমার পক্ষ হতে উদাত্ত আহবান যে, হাদীসের উপর আমল করা পূর্বক দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করুন এবং অপরকে তা শিক্ষা দিন।

সময়ঃ মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ হতে একটি মহান নেয়ামত স্বরুপ। এবং নেয়ামতও এমন ব্যাপক, যা কিনা রাজা-প্রজা,জ্ঞানী-মূর্খ,দূর্বল-সবল এবং ছোট বড় সবাইকে দান করা হয়েছে।

সময়ঃ অনেক মূল্যবান একটি বস্তু। একে অপচয় করা অনেক বড় বোকামী। সময়কে ধারণ করে এর সঠিক ব্যবহার করা দুনিয়ার মধ্যে প্রত্যেক সফলতার প্রথম সৌন্দর্য।

সময়ঃ নিঃসন্দেহে এমন এক নেয়ামত যা মানুষকে গড়তেও পারে এবং ধবংসও করতে পারে। সময়ের গুরুত্ব যার অনুভব হয়, সৌভাগ্য তার দরজায় অবশ্যই কড়া নাড়বে।

সময়ঃ এর মূল্যায়ন যারা করবে, সময়ও তাদের মূল্যায়ন করবে। সময়কে তাচ্ছিল্যকারী অপরের তাচ্ছিল্যতার শিকার হয়।

সময়ঃ একটি প্রবাহমান নদী। যেমনিভাবে নদীর প্রবাহিত স্রোত পুনরায় ফিরে আসে না, তেমনিভাবে অতিক্রম হওয়া সময়ও দ্বিতীয়বার কখনো হাতে আসেনা।

সময়ঃ এর সাথে যে সম্প্রদায় নিগূঢ় বন্ধুত্ব স্থাপন করে এবং নিজের জীবনের সকাল সন্ধ্যাকে সময়ের সাথে একাকার করে দেয়, তারাই তারকারাজিকে ছুঁতে পারবে, মরুভূমিকে ফূলের বাগানে পরিণত করতে পারবে এবং যুগের নেতৃত্ব তাদেরই হাতে শোভা পায়। সময়ের সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহারকারীরাই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে মুক্ত থাকে। (যে সময় চলে যায়) তা লাখো চেষ্টা করলেও দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনা। ‘সামনে সময় পাওয়া যাবে’ এমন ধারণা রাখাটাই ধোঁকা।

এক ঘন্টাঃ প্রত্যহ ইল্‌ম(জ্ঞান) এর জন্য নির্দিষ্ট করা নেওয়া উচিৎ। তাহলে দশ বছরে অনেক ইল্‌ম অর্জন হয়ে যাবে।

এক ঘন্টাঃ প্রত্যহ একটি কিতাবের দশটি পৃষ্ঠার চর্চা করুন। তাহলে সারা বছরে আপনি ২৬৫০ পৃষ্ঠা পড়তে পারছেন।

এক ঘন্টাঃ প্রতিটি বিভিন্ন বিষয় হতে দৈনিক যেকোন একটি বিষয়ের জ্ঞান দানে নিজ সম্প্রদায় বা সমাজের শিক্ষা বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত করে ফেলুন। এতে করে দেশ ও জাতির প্রতি আপনার দ্বারা ইসলামের সঠিক খিদমাত হবে।

কিছু অমূল্য বাণী

  • সমস্ত উত্তম গুনের সমষ্টি হচ্ছে ইলমে দ্বীন অর্জন এবং তদানুযায়ী আমল করা, অতঃপর অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়া। [গাউছুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি]
  • আমি ইলমে দ্বীন অর্জন করা অবস্থায় আল্লাহর দরবারে কবুলিয়াতের স্তরে পৌঁছে গিয়েছি। [গাউছুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি]
  • ঐ আমল যা কিনা না জেনে করা হয়,তাকে রোগ হিসেবে মনে করো এবং ঐ ইল্‌ম যা কিনা আমলহীন সেটাকে মূল্যহীন হিসেবে মনে করো। [হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু]
  • শিক্ষকের শাসন পিতা-মাতার স্নেহের চাইতেও উত্তম। চাঁদকে ছাড়া যেমন রাত মূল্যহীন,তেমনি ইল্‌মকে ছাড়া মেধা মূল্যহীন। [হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু]
  • ইল্‌ম এমন একটি মাধ্যম যা তোমাকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যাবে। এবং সে তোমাকে ধবংসের হাত থেকেও রক্ষা করতে পারবে। [খাজা গরীব নাওয়াজ রওহমাতুল্লাহি আলাইহি]
  • যার নিকট বিবেক নাই, তার নিকট শিষ্টাচার নাই। যার নিকট প্রজ্ঞা নাই, তার নিকট সফলতা নাই। আর যার নিকট দ্বীন নাই তার নিকট দুনিয়াও নাই। [ইমামুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু]
  • ইল্‌ম অর্জনের চেয়েও অধিক উপকারী হচ্ছে তার উপর আমল করার। এবং সবচেয়ে উত্তম আমল হচ্ছে সেটাই, যা তোমার উপর ফরয করা হয়েছে (যেহেতু ইলমে দ্বীন অর্জন আমাদের উপর ফরয)।  [হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি]
  • ইল্‌ম ছাড়া কোন সম্প্রদায়ই সম্মান লাভ করতে পারেনি। ইল্‌ম হচ্ছে সেই সম্পদ যাকে কিনা কখনো চুরি করা যায় না। [মাওলা আলী শেরে খোদা রাদিয়াল্লাহু আনহু]
  • “ইল্‌মে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর জন্য ফরয” আর এজন্যই নিজের ঘরে একটি পাঠাগার অবশ্যই স্থাপন করুন। এবং দৈনিক এক টাকা করে সঞ্চয় করতে চেষ্টা করুন ,যাতে প্রতি বছর ৩৬৫ টাকার কিতাব আপনার পাঠাগারে জমা হতে পারে। যদি আপনার ঘরের প্রতিটি সদস্য এই আমল শুরু করে,তবে সারা বছরে অনেক কিতাব ক্রয় করা সম্ভব হবে। যেগুলো পাঠ করে আপনার এবং আপনার ঘরের সকল সদস্যদের জ্ঞানের প্রসারতা বৃদ্ধি পাবে এবং ঈমান-আক্বিদারও হিফাযত হবে। কেননা ঈমান-আক্বিদার হিফাযত বর্তমান সময়ের জন্য অধিক আবশ্যক।হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন, শেষ যামানায় একটি দল যারা ধোঁকা দিবে এবং মিথ্যা কথা বলবে। তারা এমন এমন কথা বলবে যেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাও কখনো শুন নাই। এ সকল লোক হতে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকেও তোমাদের হতে দূরে রাখো। এমনকি তুমিও তাদের নিকট যেয়ো না যাতে করে তুমি গোমরাহী হতে রক্ষা পাও। (আনওয়ারুল হাদীস)
  • জাদু শিক্ষা করা এবং এর উপর আমল করা কুফরী। যেহেতু জাদুর মধ্যে ঈমান এবং ইসলামের পরিপন্থী বাক্য ও কার্যাবলী ব্যবহার হয়।
  • কারো যমীন অবৈধভাবে হস্তগত কারীদের জন্য এই হাদীস শরীফটিই যথেষ্ট; যদি সে হেদায়াত চায়। সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি এক চুল পরিমাণ যমীন অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করলো, তবে কিয়ামতের দিন সাত যমীন হতে ঠিক এত অংশ বেষ্টনী বা দড়ি বানিয়ে তার গলায় পরানো হবে।” হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আরো ইরশাদ করেন যে- “যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে হস্তগত করবে,কিয়ামতের দিন কুষ্ঠ রোগী হয়ে সে খোদার দরবারে হাজির হবে।”
  • সরকারে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি অত্যাচারীর শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য তার সহযোগীতা করবে, সে আমাদের অর্থাৎ ইসলামের রাস্তায় নাই। অন্যত্র হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা  ইরশাদ করেন যে, জুলুম(অত্যাচার) কিয়ামতের দিন (জালিমের জন্য) অন্ধকারের কারণ হবে।
  • সরকারে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন যে, সন্তানের জন্য পিতা কর্তৃক সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার এর মধ্যে উত্তম লালন পালন ছাড়া কিছুই হতে পারেনা ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উপরোক্ত কথা সমূহ হৃদয়াঙ্গম করার এবং তার বাস্তবে প্রতিফলন ঘটানোর তাওফিক দান করুন।আমিন,বেহুরমাতি সাইয়্যদিল মুরসালিন।

[মূল প্রবন্ধটি মাহনামা আলা হযরত,মার্চ-এপ্রিল সংখ্যা ২০১৫ হতে সংগৃহীত]


Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading