সংকলনঃ মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন
আমাদের সময়ে প্রচলিত তারাবীহ হচ্ছে মূলত বিদ’আতে হাসানা(অর্থাৎ উত্তম বিদ’আত)। কারণ বর্তমানে আমরা রমযানে বিশ রাক’আত তারাবীহ যেভাবে দৈনিক আদায় করি সেটা মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর যুগে ছিলনা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা রমযানে বিশ রাক’আত তারাবীহ আদায় করলেও তা দৈনিক আদায় করতেন না।দৈনিক আদায় করার এই বিদ’আত টি চালু হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে।
আপনারা কি “বিদ’আত” শব্দটি শুনে আতংকিত হয়েছেন নাকি ? না, আতংকিত হবার কিছুই নেই।ইসলামে বিদ’আত হচ্ছে দুই প্রকার। যথা- ১। বিদ’আতে হাসানা(উত্তম বিদ’আত) যা কিনা জায়েয এবং এর প্রচলনকারী নিজের ও তাঁর প্রচলিত কাজের অনুসারীদেরও সাওয়াবের ভাগিদার হবেন,২।বিদ’আতে সাইয়্যে’আহ(মন্দ বিদ’আত) অর্থাৎ যা কিনা নাজায়েয এবং এর প্রচলনকারী নিজের ও তার প্রচলিত কাজের অনুসারীদেরও গোনাহরও ভাগিদার হবে ।সুতরাং তারাবীহ নামায হচ্ছে বিদ’আতে হাসানা।আর তা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কথা এবং কাজ দ্বারাই প্রমাণিত ।
- ইবনে মুনী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন,
أن عمر بن الخطاب أمره أن يصلي بالليل في رمضان فقال: إن الناس يصومون النهار ولا يحسنون أن يقرأوا فلو قرأت عليهم بالليل، فقال: يا أمير المؤمنين هذا شيء لم يكن، فقال: قد علمت ولكنه حسن فصلى بهم عشرين ركعة
অনুবাদঃ হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে (উবাই ইবনে কা’ব) রমযানের রত্রিতে তারাবীহ পড়তে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন, লোকেরা দিনে রোযা রাখার কারণে ভালভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে না। তুমি তাদেরকে রাত্রিতে কুরআন তিলাওয়াত করালে ভাল হয়। তখন উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন ! এ রেওয়াজ তো ইতিপূর্বে ছিলনা। উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন তাতো আমি জানি, কিন্তু এটা তো একটা উত্তম আমল। এরপর হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে বিশ রাক’আত পড়ালেন ।
হাদীস সূত্রঃ কানযুল উম্মাল-২৩৪৭১, মাকদাসী আল মুখতারাহ, ৩:৩৬৭ হাঃ-১১৬১।
- হযরত সায়িব বিন ইয়াযিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ:كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً، وَإِنْ كَانُوا لَيَقْرَءُونَ بِالْمِئِينَ مِنَ الْقُرْآنِ
অনুবাদঃ লোকেরা (সাহাবা ও তাবেয়ীনে কিরাম) হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে পবিত্র রমজান মাসে বিশ রাক’আ’ত তারাবীহ আদায় করত এবং তাতে কুরআন মাজীদের দুইশত আয়াত তিলাওয়াত করত ।
হাদীস সূত্রঃ মুসনাদে ইবনুল জা’দ,হাদীস-২৮২৫/২৪৮১/২৪৮২/২৯২৬, বায়হাক্বী আস সুনানুল কুবরা-৪২৮৮, ফাদ্বায়িলুল আওকাত-১২৭।
- তাবেঈ হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত,
عَنِ الحَسَنِ:أَنَّ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ جَمَعَ النَّاسَ عَلَى أُبَيِّ بنِ كَعْبٍ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، فَكَانَ يُصَلِّي بِهِم عِشْرِيْنَ رَكْعَةً
অনুবাদঃ নিশ্চই উমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু লোকদেরকে উবাই ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পেছনে তারাবীহর নামাজ আদায় করার জন্য একত্রিত করেন । আর তিনি তাদের বিশ রাক’আত তারাবীহ পড়ান ।
হাদীস সূত্রঃ যাহাবী সিয়ারু আ’লামিন নুবলা, ১:৪০০,৪০১, সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস-১৪২৯, বায়হাক্বী আস সুনানুস সুগরা- ৭৮৮]
- ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত,
عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً
অনুবাদঃ নিশ্চয়ই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে সকল লোকদের নিয়ে বিশ রাকা’আত তারাবীহ নামায পড়ানোর আদেশ দিয়েছেন ।
হাদীস সূত্রঃ মুসান্নাফে আবী শায়বাহ ২:১৬৩ হাদীস-৭৬৮২ মাকতাবাতুর রুশদ রিয়াদ।
- তাবেঈ আব্দুল আযীয বিন রুফাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত,
عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ قَالَ: كَانَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِالْمَدِينَةِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ
অনুবাদঃ হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফ-এ রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাক’আত তারাবীহ পড়াতেন এবং বিতর করতেন তিন রাক’আত দিয়ে ।
হাদীস সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ ২:১৬৩ হাদীস-৭৬৮৪, ফাকেহী আখবারে মক্কা-১৩৪৫।
- ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইয়াযিদ ইবনে রুমান হতে বর্ণনা করেন-
كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
অনুবাদঃ হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর জামানায় রমজান মাসে লোকজন বিশ এবং তিন রাকাত অর্থাৎ তারাবীহ ও বিতর সহ ২৩ রাক’আত পড়তেন ।
হাদীস সূত্রঃ মুয়াত্তা ইমাম মালিক, কিতাবুস সালাতু ফি রামাদ্বান,হাদীস-২৫১/৩৮০ , বায়হাক্বী মা’রেফাতুস সুনানি ওয়াল আছার-৫৪৪১, আস সুনানুল কুবরা-৪২৮]
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.