সাম্প্রতিক আপডেটঃ

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ জালালুদ্দীন

মহান রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে মানুষের পথ প্রদর্শন ও সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের নিমিত্তে অসংখ্য নবী ও রাসুল পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেছেন। একজন নবীর ওফাতের পর যখন মানবসমাজ তাঁর শিক্ষা দীক্ষা সম্পূর্ণরূপে ভুলে অন্যায় অনাচারের দিকে ধাবিত হয়-তথা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র প্রদর্শিত পথ ও মতের বিরোধিতা করে শয়তানের অনুসারী হয়ে যায়। এক কথায় মানব সমাজ ভুল ভ্রান্তির দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে সারা জগত যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন খলকে খোদার পথপ্রদর্শক ও ত্রাণকর্তা হিসাবে নবী ও রাসুলের আবির্ভাব হয়। এইভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত একজনের পর একজন নবী ও রাসুলের আগমনের হক সিলসিলা জারি থাকে। নবী-রাসুলগনের ধারবাহিকতা সমাপ্ত হবার পর আরম্ভ হয় বেলায়তের সিলসিলা। ঠিক তেমনিভাবে পাক-বঙ্গ-ভারত তথা উপমহাদেশে হেদায়তের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খোরাসানের অন্তর্গত সঞ্জর নামক গ্রামে আতায়ে রাসুল, হিন্দল অলী হযরত খাজা গরীব এ-নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। পাক ভারত উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারে যার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে তিনি হলেন সুলতানুল হিন্দ আতায়ে রাসুল গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
জন্ম ও বংশধারা

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১১৩৮ ইংরেজি- ৫৩৭ হিজরীতে মধ্য এশিয়ায় খোরাসানের অন্তর্গত সিস্তান রাজ্যের সানজার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দীন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহেনুর। পিতার দিকে তিনি শেরে খোদা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর চতুর্দশতম এবং মাতার দিকে তিনি খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জোহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর দ্বাদশতম বংশধর। মাতৃকুল হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু ও পিতৃকুল হযরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত যাওয়ায় তিনি বংশে হাসানী-হোসাইনী আওলাদে রাসুলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার অশেষ সৌভাগ্যের অধিকারী। তদুপরি তিনি উভয়দিকে অলিকুল সম্রাট গাউছুল আজম হযরত বড়পীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বংশধর। পিতৃকূল ও মাতৃকূল উভয় দিক থেকে। বস্তুত এসব কারণেই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক শক্তি বলে কামালিয়াতের উচ্চতম শিখরে আরোহণ করেছিলেন। পরে স্বপরিবারে খোরাসান শহরে (বর্তমান আফগানিস্তান) হিজরত করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে বাবা – মা উভয়কেই হারান।
শিক্ষা অর্জন

হুজুর গরীবে নেওয়াজ পিতার সান্নিধ্যে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। ৯ বছর বয়সে তরজমাসহ পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কুরআন, হাদিস, ফিকহ্, উসুল, তাফসীর, আরবী সাহিত্য- ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গভীর বুৎপত্তি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি প্রখ্যাত হাদিস বেত্তা ইমামুল হারামাইন হযরত আবুল মা’আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট শরীয়তের বিভিন্ন সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করেন। সমরকন্দের প্রখ্যাত আলেম হযরত শরফুদ্দীন ও বোখারার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত হুসামুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কৃতিত্বপূর্ণ পূর্ণতা অর্জন করেন।
ইলমে মা’রেফত বা দিব্যজ্ঞানও বাইয়াত গ্রহণ

পিতার ওয়ারিশ সূত্রে তিনি একটি ফলের বাগানপ্রাপ্ত হন। বাগানের পরিচর্যা ও দেখাশোনা করে এর উৎপাদনে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদিন ওই বাগানের পরিচর্যাকালে হযরত ইব্রাহীম কান্দুজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নামে এক মাযযুব কলন্দর অলিআল্লাহ সেখানে উপস্থিত হন। খাজা বাবা দরবেশকে তাজিমের সঙ্গে বসিয়ে তৃপ্তি সহকারে বাগানের ফল খেতে দেন। দরবেশ খুশি হয়ে নিজ ঝুলি থেকে এক টুকরো রুটি বের করে নিজ মুখে চিবিয়ে কিছুটা খাজা মঈনুদ্দীনকে খেতে বললেন। খাজা বাবাও পরম আদব ও ভক্তির সঙ্গে সাগ্রহে তা খেয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনের রাজ্য খোদায়ী নূরে আলোকিত হল। আল্লাহ প্রেমের প্রবল তরঙ্গে তার সব অজুদ প্লাবিত হল। আধ্যাত্মিকতার অদম্য আকর্ষণে তিনি বাগান বিক্রি করে তা আল্লাহর নামে দান করে সামান্য রাস্তা খরচ নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। অভাবনীয় ও অবর্ণনীয় রুহানি আকর্ষণ নিয়ে তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্বেষায় নিমগ্ন হলেন। আল্লাহর ভাবে ব্যাকুল হয়ে তিনি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। বুখারা, ইরাক, নিশাপুর প্রভৃতি জায়গায় যেখানে অলি বুযুর্গ, দরবেশের সন্ধান পান, সেখানেই অবস্থান নিয়ে ইলমে মা’রেফত অর্জনে আল্লাহর সন্ধানে সফর অব্যাহত রাখেন।

এভাবে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। নিশাপুর এসে এখানকার ‘হারূন’ নামক একটি ছোট শহরে সেখানে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী হযরত ওসমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র সন্ধান পান, যিনি হাজী শরীফ জিন্দানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শিষ্য ও প্রধান খলীফা। যিনি ছিলেন তৎকালীন ইলমে মা’ রেফতের রহস্যজ্ঞানী মহান আধ্যাত্মিক তাপস। খাজা গরীব নওয়ায রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ মহাপুরুষের দরবারে উপস্থিত হন। আর একান্ত আগ্রহে তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। গরীব নওয়াযের চেহারায় দৃষ্টি করতেই তিনি বুঝেছিলেন, এ যুবক কালে একজন অসাধারণ কালিন দরবেশ হয়ে উঠবেন। তাই তিনি পরম আগ্রহে তাঁকে শিষ্যত্বে কবুল করে নিলেন।ওলীয়ে কামেল খাজা ওসমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার শিষ্যের মধ্যে বেলায়েতের ঝলক দেখতে পেয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে খিলাফত প্রদান করেন। তখন থেকেই তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনার শুরু হয়। তাঁর জীবনী গ্রন্থে জানা যায়, প্রায় বিশ বছর তিনি পীরের খেদমত করে তাঁর সোহবতে থেকে নিজের আধ্যাত্মিকতার উৎকর্ষ সাধন করেন।
খাজায়ে খাজেগান আপন পীর মুর্শিদের অনুমতিক্রমে জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ওলীর সাথে সাক্ষাত করেন। খাজা বাবা বাগদাদ শরীফে গাউছুল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। এ সময় গাউসে পাক খাজা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সুসংবাদ খাজা বাবা মদীনা শরীফে(অবস্থানকালে) রওজায়ে আকদাস জিয়ারতকালে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন।

প্রিয় নবীর দরবারে খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি: খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মক্কায়। হজ্ব পর্ব শেষ করে মক্কা শরীফ থেকে হযরত খাজা বাবা মদিনা শরীফে আসেন এবং অতি শ্রদ্ধাভক্তি এবং নম্রতার সহিত হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর মাজার শরীফে হাজির হন। প্রত্যেক দিন পাঁচ সময়ের মসজিদে নববীতে উপস্থিত। অতএব খাদিম সাহেবকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা  নির্দেশ করলেন: মঈনুদ্দিন চিশতি কে উপস্থিত কর”। হযরত খাজা গরীব এ নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই শব্দ শুনা মাত্রই তিনি খাদিম সাহেবের নিকটে পৌঁছলেন। খাদিম সাহেব তাকে রওজা শরীফে পৌঁছিয়ে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মঈন উদ্দীন চিশতি উপস্থিত। এ কথা বলা মাত্রই রওজা শরীফ এর দরজা নিজ হতেই খুলে গেল। হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা জ্যোতির্ময় চেহারায় আবির্ভুত হয়ে ফরমান: হে কুতুবে মাশায়েখ, ভিতরে এসো। হযরত খাজা বাবা আত্মহারা হয়ে রওজা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করলেন। তথায় নুর ও জ্যোতি দেখে তিনি বিমুগ্ধ ও বিমূঢ় হয়ে যান। যখন খাজা বাবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর হুশ অর্থাৎ জ্ঞান ফিরল তখন হুকুম হল, “হে, মঈনুদ্দিন, তুমি আমার দ্বীনের মঈন (সাহায্যকারী) আজ আমি তোমাকে হিন্দের বেলায়েত দান করলাম। তুমি হিন্দুস্থানে যাও এবং আজমির নামক স্থানে দ্বীনের প্রচার কর। খোদা তোমাকে বরকত দান করবেন”। সুসমাচার শুনে পরিতৃপ্ত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পরক্ষনেই চিন্তিত হলেন তিনি। কোথায় আজমির? বিশাল হিন্দুস্হানের কোন দেশে আছে রসূল নির্দেশিত আজমীর? চিন্তিত অবস্হায় তন্দ্রাছ্ছন্ন হয়ে পরলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। সেই অবস্হায় তিনি দেখলেন, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা তাঁর শিয়রে উপবিষ্ট। তিনি তাঁকে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে দিয়ে দিলেন প্রয়োজনীয় পথ নির্দেশনা। এরপর দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা তাঁর হাতে দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার।তারপর তাঁর জন্য দোয়ায়ে খায়ের করে যাত্রা শুরু করবার নির্দেশ দিয়ে দিলেন।

আজমিরে শুভাগমন

খাজা গরীবে নেওয়াজ নবীজির নির্দেশেই সুদূর আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে শুভাগমন করেন। ভারতবর্ষে চলছিল তখন অত্যাচারী বিধর্মী শাসকদের কুশাসন। সঙ্গী সাথীসহ দিল্লী এসে উপস্থিত হলেন হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। দিল্লীর শাসক তখন হিন্দুরাজা খান্ডরাও। আজমীর অধিপতি পৃথ্বিরাজের ভাই। রাজমহলের অদুরেই নির্মিত হলো ফকির দরবেশদের ডেরা। নির্ভয়ে শুরু করলেন তাদের নিয়মিত ইবাদত-বন্দগী। ক্রমে ক্রমে ইসলামের আলো প্রসারিত হতে থাকলো। পিতৃ ধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে লোক এসে প্রবেশ করতে থাকলো আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের সুবাসিত কাননে। কিন্তু গন্তব্য তো এখানে নয়। এগিয়ে যেতে হবে আরো সন্মুখে। রসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নির্দেশিত সেই আজমীরের আকর্ষন এক সময় উদ্বেলিত করে তুললো খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অন্তরকে। দিল্লীর কুতুব হিসেবে নির্বাচিত করলেন হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে। দিল্লীর দ্বীন প্রচার ও নওমুসলিমের বিরাট কাফেলার হেফাজতের দায়িত্ব হযরত কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র উপর। আজমীর শহরের উপকন্ঠে এসে উপস্থিত হলেন খাজা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। সফর সঙ্গীগন সবাই পরিশ্রান্ত। বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই হয়। এই সেই বেলায়াতের প্রতিশ্রুত কেন্দ্রভুমি আজমীর। চারিদিকে পাহাড়,পাথর মরুভুমি। নিকটেই বৃক্ষছায়া। এখানেই বিশ্রামের জন্য উপবেশন করলেন দরবেশদের কাফেলা।স্থানটি ছিল রাজা পৃথ্বিরাজের উষ্ঠ্র বাহিনির বিশ্রামস্থল। রাজার লোকেরা কিছুক্ষন যেতে না যেতেই সবাইকে স্থান ত্যাগ করতে বলল। বিস্মিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। উটের দলতো এসে পৌছবে সেই সন্ধাবেলায়। অথচ লোকগুলি তাদেরকে এখনই তাড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বললেন, “ঠিক আছে আমরা চললাম। তোমাদের উটই এখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক”।  সে রাতেই মুখে মুখে আগন্তুক দরবেশের আগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। সকালে মহারাজ পৃথ্বিরাজও শুনতে পেলেন এক অদ্ভুত সংবাদ। উষ্ঠ্রশালার কর্মচারীগন এসে জানালো, গতকাল সন্ধায় যে উটগুলি উষ্ঠ্রশালায় আনাহয়েছিল সবগুলি এখনও শুয়ে আছে।কিছুতেই উঠবার নাম করছে না।সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশদলের ঘটনাও বর্নীত হলো রাজার কাছে।দরবেশ দলের নেতা উষ্ঠ্রশালা পরিত্যাগের সময় বলেছিলেন, ”তোমাদের উটই এখনে বসে বসে বিশ্রাম করুক।”

ইতিপুর্বে বিক্ষিপ্তভাবে মুসলমান ফকিরদের সম্পর্কে এরকম অনেক কথা রাজার কর্নগোচর হয়েছিল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাজা পৃথ্বিরাজ। মনে পড়ে গেল তার রাজ মাতার ভবিষ্যতবানীর কথা। তিনি বলেছিলেন “এক মুসলমান ফকিরের অভিসম্পাদেই পৃথ্বিরাজের রাজ্য ধ্বংস হবে”। একি তবে সেই ফকির? সম্ভবত এই ফকিরের কথাতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদেরকে ফকিরদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন রাজা। রাজ আদেশ পালন করল শ্রমিকেরা। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন: যাও, এ অবস্থা আর থাকবে না। উটশালায় ফিরে এসে বিশ্বয়ের সঙ্গে সবাই লক্ষ্য করল উটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে। ফকিরের কারামতি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। কৌতুহল নিবারনের জন্য লোকজন যাতায়াত শুরু করে দিল হযরত খাজার আস্তানায়।তার পবিত্র চেহারা আর তার সাথীদের প্রানখোলা মধুর চরিত্রের প্রভাবে সম্মোহিত হতে লাগলো আজমিরবাসী। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সোহবতের (সাক্ষাৎ) বরকতে তাদের অন্তরের অন্ধকার দুর হতে লাগলো। জেগে উঠলো আজমেরীর সত্যান্বেষী জনতা। কিন্তু আতংকিত হলো পুরোহিতরা, শোষক বর্নবাদী হিন্দু সমাজ। ভীত হলো হিংস্র রাজপুরুষগন এবং সামনতবাদী সম্রাট।
ইসলাম বিদ্বেষী লোকজন রাজদরবারে গিয়ে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর সহচরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। অভিযোগ শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন রাজা পৃথ্বিরাজ। অহংকারের নীচে চাপা পরে গেল মায়ের সদুপদেশবানী। রাজা একদল সৈন্যকে আদেশ দিলেন ফকির দরবেশ দলকে এক্ষনি রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে। রাজার আদেশ পেয়ে ঝাপিয়ে পরলো অভিযানে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নির্বিকার। আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করলেন তিনি। সাথে সাথেই আক্রমনকারীদের কেউ হলেন অন্ধ, কারও শরীর হল নিঃসাড়। কেউ হলো ভুতলশায়ী। নিরুপায় হয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো তারা। দয়ার সাগর গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ক্ষমা করে দিলেন সবাইকে।

রাজা পৃথ্বিরাজ ভেবে কুল পান না কি করবেন তিনি। সমরাস্ত্র, সুসজ্জিত সৈন্যদল কোন কিছুই যে আর কাজে আসছে না। এক দুরাগত যবন ফকিরের নিকট পরাজয় বরন করতে হবে তাকে? ঐশ্বরিক ক্ষমতাধর এই ফকিরের আনুগত্য স্বীকার করবেন নাকি তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। এ কি বিশ্বয়কর সংকট। চুপ করে থাকলেও বিপদ । বিরুদ্ধাচরন করলেও সমস্যা। এদিকে দলে দলে লোকজন গ্রহন করছে ফকিরের প্রচারিত একত্ববাদী ধর্মমত।

রাজা ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন, হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্বিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে। তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত “রামদেওকে” অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই যবন ফকিরকে বিতাড়িত করতে। রামদেও রাজী হলেন। তার দীর্ঘ সাধনালব্ধ আধ্যাত্বিক শক্তিতে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে পরাস্ত করার বাসনায় হাজির হলেন হযরতের দরবারে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন ছিলেন ধ্যানমগ্ন। কিছুক্ষন পর চোখ খুললেন হযরত।দৃষ্টিপাত করলেন রামদেও খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জ্যোতির্ময় চেহারার দিকে। মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামদেও। তার আধ্যাত্বিক শক্তি মুহুর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। অন্ধকারে আলো জ্বললে মুহুর্তেই যেমন করে অন্ধকার অপসারিত হয়। হজরত খাজার কদম মোবারকে লুটিয়ে পড়লেন রামদেও। স্বীকার করলেন ইসলাম। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার নাম রাখলেন মোহাম্মদ সাদী। রামদেও এর ইসলাম গ্রহনের সংবাদ শুনে রাজা ক্ষোভে দু:খে অস্থির হয়ে উঠলেন। কিন্তু বিদূষী মায়ের উপর্যুপরি উপদেশের বাধ্য হয়ে সংযত হলেন রাজা। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা দিল আরেক বিপদ।
আনা সাগর

পরিশ্রান্ত কাফেলা আবার এগিয়ে চললো সামনের দিকে। অদুরে ‘আনা সাগর’। সাগরতো নয় একটি বিশাল হ্রদ। লোকে বলে আনা সাগর। আনা সাগরের পাড় ঘেষে অজস্র মন্দির। আনা সগরের পানি শুধুমাত্র উচ্চ বর্নের হিন্দু এবং পুরোহিত সম্প্রদায় ছারা অন্য কেও ব্যবহার করতে পারতো না। নিম্ন বর্নের হি্ন্দুরা এটা তাদের ধর্মীয় বিধান বলে মনে করত। কিন্তু মুসলমানরা কি আর বর্নভেদের ধার ধারে? একদিন আনা সাগরে অজু করতে গেলন হজরত খাজার একজন সাগরেদ। পুরোহিতরা অপমান করে তাড়িয়ে দিলো তাঁকে। সাগরেদ সমস্ত ঘটনা বর্ননা করলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে। হযরত খাজা মোহাম্মদ সাদীকে “আনা সাগর” থেকে এক ঘটি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ মত মোহাম্মদ সাদী ‘আনা সাগর’ থেকে এক ঘটি পানি আনতেই দেখা গেলো এক আশ্চর্য দৃশ্য। কোথায় সাগর? সব পানি তার শুকিয়ে গিয়েছে একেবারে।

এই আলৌকিক ঘটনা রাজাকে জানালো প্রজারা। বিব্রত বোধ করলো রাজা। রাজা বাধ্য হয়ে আবারও তাদের প্রজাদের দুর্ব্যবহারের জন্য ফকিরের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলেন রাজা। প্রমাদ গুনলেন পুরোহিত সম্প্রদায়। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে তারা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে গিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। মানুষের দুর্দশা দেখে ও পুরোহিতদের ক্ষমার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ সাদীকে পুনরায় ঘটিতে ভরা পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালিত হলো। ঘটির পানি ঢেলে দেয়ার সাথে সাথেই ভরে গেল বিশাল হ্রদ ‘আনাল সাগর’। এই আলৌকিক ঘটনার পর বহুলোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাত ধরে।
পৃথ্বিরাজ ভেবে পাননা কি করে এ মুসলমান ফকিরকে প্রতিহত করা যায়। কেউ কেউ রাজাকে বুদ্ধি দিলেন বিখ্যাত ঐন্দ্রজালিক অজয় পালকে দিয়ে কিছু করা যায় কিনা? রাজা তাকেই ডেকে পাঠালেন এবং রাজকীয় পুরস্কারের প্রস্তাব করলেন। অজয় পাল তার সর্বশক্তি দিয়ে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে ঘায়েল করার চেষ্টা করলেন।অজয় পালও তার ভুল বুঝতে পেরে তার সঙ্গী সাথী সহ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন।খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি অজয় পালের নাম রাখলেন ‘আব্দুল্লাহ বিয়াবানী’।
সংবাদ শুনে মুষড়ে পরলেন রাজা। নিজ রাজ্য রক্ষার কথা চিন্তা করে সংঘর্ষের পথ অবলম্বন করলেন রাজা। রাজদরবারের একজন কর্মচারী ছিলেন মুসলমান, খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একান্ত অনুরক্ত। সেই কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাজা। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে বার বার হেনস্ত হবার সমস্ত ক্ষোভ যেন গিয়ে পড়লো তাঁর উপর। মুসলমান কর্মচারী সমস্ত দুঃখের কথা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে বর্ননা করার পর খাজাকে অনুরোধ করলেন তার জন্য রাজার কাছে একটি সুপারিশ পত্র পাঠাতে। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একান্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে সেই কর্মচারীর পক্ষে একটি সুপারিশ পত্র পাঠালেন। সেই সঙ্গে রাজাকে জানালেন ইসলাম গ্রহনের একান্ত আহ্বান। চিঠি পেয়ে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন পৃথ্বিরাজ। মুসলমান কর্মচারীকে চকুরীচ্যুত করলেন রাজা। সেই সঙ্গে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বিরুদ্ধে উচ্চারন করলেন অশালীন বক্তব্য। সংবাদ শুনে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর প্রেমময় অন্তরেও প্রজ্জলিত হলো রুদ্ররোষের আগুন। তিনি এক টুকরা কাগজে লিখে পাঠালেন রাজা পৃথ্বিরাজকে-“মান তোরা যিন্দা বাদস্তে লশকরে ইসলাম বছোপর্দম”। অর্থাৎ আমি তোমাকে তোমার জীবিতাবস্হাতেই মুসলিম সেনাদের হাতে সোপর্দ করলাম।
ইতিপুর্বে দুই দুইবার হিন্দুস্হান আক্রমন করেও সফল হতে পারেননি সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী। তিনি স্বপ্নে দেখলেন শ্বেত শুভ্র বস্ত্রাবৃত এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, “যাও তোমাকে আমি হিন্দুস্হানের শাসন ক্ষমতা দান করলাম”। এ শুভ স্বপ্ন দেখে সুলতান মনস্হির করলেন হিন্দুস্হান অভিযান শুরু করার। ৫৮৮ হিজরি সালে সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে হিন্দুস্হান অভিমুখে রওয়ানা হলেন। এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক। তারায়েনা প্রান্তরে দুই বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানদের প্রচন্ড আক্রমনের সামনে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল পৌত্তলিক সৈন্যবাহিনী। ক্ষিপ্রগতিতে রাজপুত সৈন্যদের পশ্চাদ্ধাবন করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলো, পালিয়ে গেলো সেনাপতি খান্ডে রাও। রাজা পৃথ্বিরাজও সরস্বতী নদীর তীর ধরে পালাবার চেস্টা করার সময় মোসলমানদের সৈন্যদের হাতে বন্দী হল। শেষাবধি নিহত হল রাজা। ৫৮৮ হিজরী সালে ভয়াবহ এ যুদ্ধে সুলতান সাহাবুদ্দিন ঘোরী নিরংকুশ বিজয় লাভ করলেন। আরো সামনে এগিয়ে চললো ঘোরী বাহিনী। এর পর সহজেই এক এক করে সরস্বতী, সামানা ও হাশিসহ অধিকৃত হল দিল্লী।সুলতান দিল্লীর দায়িত্ব দিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেককে। তারপর সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে।
তাঁর এই অপ্রতিরুদ্ধ অগ্রাভিযানের সামনে অবনত হলো যুদ্ধে নিহত হিন্দু রাজাদের পুত্রগন। দেউল নামক স্হানে সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাত করলো অনেক রাজপুত্রগন। মুসলিম শাসনের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিনিময়ে সম্রাট তাদেরকে দান করলেন বিভিন্ন রাজ্যের জায়গী। সুলতান এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে।

এদিকে আজমীরে ক্রমাগত বেড়েই চলছে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাফেলা। ইসলাম কবুলকারীদের সংখ্যা এখন লক্ষ লক্ষ। শুধু আজমীরে নয় এখন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জামাত এখন ছড়িয়ে পরেছে হিন্দুস্হানের কোনায় কোনায়। দর্শনার্থীদের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে।
সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী অবশেষে আজমীর এসে পৌছলেন। তখন সন্ধা হয়। সুর্যাস্ত হওয়ার পর সচকিত হয়ে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী। দুরে কোথায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়। সেদিকে এগিয়ে যেতেই তিনি দেখলেন একদল নুরানী লোক হাত বেধে দাড়িয়েছেন। দরবেশদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন সুলতান। সালাত শেষে জামাতের ইমামের মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী। এইতো সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ, স্বপ্নে যিনি জানিয়েছেন হিন্দুস্হান বিজয়ের সুসংবাদ।

সুলতান শ্রদ্ধাভরে পরিচিত হলেন হজরত খাজার সাথে। হযরতের মোবরক হাতে বায়াত গ্রহন করে তাঁর সোহবতে তিনদিন অতিবাহিত করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন সুলতান। তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লীতে রেখে গেলেন কুতুবুদ্দিন আইবেক কে। তিনিও বায়াত গ্রহন করলেন খাজার প্রতিনিধি খাজা বখতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র হাতে। এর পর কুতুবুদ্দিন আইবেক ক্রমে ক্রমে প্রসারিত করলেন মুসলিম রাজ্যের সীমানা। কনৌজ, বানারস সহ আরো বহু স্হানে উড়িয়ে দিলেন মুসলমানদের বিজয় পতাকা।
ইন্তেকাল

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৬৩৩ হিজরীর ৫ই রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ই রজব সুবহে সাদেকের সময় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ওফাতের সাথে সাথে তাঁর পবিত্র কপাল শরীফ-এ স্পষ্টভাবে আরবীতে স্বর্ণোজ্বল নুরানী অক্ষরে লিখা হয়ে যায় “হাযা হাবীবুল্লাহ মা-তা ফি হুব্বিল্লাহ” অর্থাৎ ইনি আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহর মুহব্বতেই তিনি বিসাল লাভ করেছেন। গরীবে নেওয়াজের বড় সাহেবজাদা হযরত খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

Check Also

বইঃ পীর, মুরীদ ও বায়আত (ফ্রী ডাউনলোড)

ইমাম আহমাদ রেযা রাহিমাহুল্লাহ চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ(সংস্কারক) ছিলেন। একজন মুজাদ্দিদ হিসেবে তাঁর সংস্কারকর্ম নানান ধারা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *