মুহাম্মদ গোলাম হুসাইন
আমাদের জীবনের প্রত্যেকেটি আমলের পেছনে একটি-ই মাত্র উদ্দেশ্য, সেটা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা আজ্জা ওয়া জাল্লা’র সন্তুষ্টি অর্জন। কুরবানি হচ্ছে তেমনই একটি আমল যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা’র সন্তুষ্টি সাধিত হয়ে থাকে। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা ইসলামি শরিয়তে ওয়াজিব। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর তাই আমরা রব তায়ালার সন্তষ্টি কামনার্থে পশু কুরবানির মাধ্যমে ঈদুল আযহা উদযাপন করে থাকি। এ প্রসংগে হাদিসে পাক-এ উল্লেখিত হয়েছে যে,
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে বর্ণনা করেন ।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন যে- “তোমাদের ঈদের দিনে দুম্বা যবেহ করার এই আমলটি দ্বারা তোমাদের পরওয়ারদেগার সন্তুষ্ট হন।“
[শোয়াবুল ঈমান, খন্ড ৫, বাবু ফীল ক্বারাবিন ওয়াল আমানাতি, পৃষ্ঠা ৪৮২, হাদিস নম্বর ৭০৮৫]
তাছাড়া কুরবানির ফযিলত সম্পর্কে অন্যত্র হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন যে,
সাইয়্যেদুনা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। আক্বায়ে নামদার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন- “মানুষের জন্য কুরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার আমলটি অন্যান্য সকল কাজ থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক প্রিয়। নিঃসন্দেহে (কুরবানির পশুটি) কিয়ামতের দিন শিং,চুল এবং খুর সমূহ সহ উঠবে। এবং কুরবানির রক্ত যমীনে অবতরণের পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কুরবানি কর।
(জামে তিরমিযী শরিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭৫, হাদিস নম্বর ১৫৭২)
সর্বোত্তম কুরবানি কোনটি?
প্রায় সময় দেখা যায় কুরবানির পশুর মূল্য বেড়ে যাওয়াতে কতেক ব্যক্তিবর্গ চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন । আর দাম বেড়ে যাওয়াতে কুরবানি করাটা তাদের জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্যও হয়ে পড়ে । এমতাবস্থায় এই কারণে মন খারাপ করা উচিত নয় । বরঞ্চ প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানি করা উচিত। এ বিষয় সম্পর্কিত একটি হাদিস শরিফ কানযুল উম্মাল কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু আসাদ সালমী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজ পিতা হতে তিনি তাঁর পিতামহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- “আমি হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা’র সাথে সাত ব্যক্তির একজন ছিলাম । হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা আমাদেরকে আদেশ দিলেন; তখন আমাদের মধ্যে প্রত্যেকে এক এক দিরহাম একত্রিত করে সাত দিরহামের বিনিময়ে একটি পশু ক্রয় করলাম। অতঃপর আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা’র নিকট আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা ! নিঃসন্দেহে আমরা এই পশুটিকে উচ্চমূল্যে ক্রয় করেছি । তখন হযরত নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা ইরশাদ করলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বোত্তম কুরবানি হচ্ছে সেটাই, যেটা সর্বাধিক মূল্যের এবং সর্বোৎকৃষ্ট। অতঃপর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামা আমাদের মধ্যে থাকা এক ব্যক্তিকে আদেশ দিলেন; তখন সে কুরবানির পশুটির এক হাত ধরলেন, আর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অপর হাতটি ধরার আদেশ দিলেন। তৃতীয় ব্যক্তিকে এক পা এবং চতুর্থ ব্যক্তিকে পশুটি অপর পা ধরার আদেশ দিলেন। অতঃপর পঞ্চম ব্যক্তিকে এক শিং এবং ষষ্ঠ ব্যক্তিকে অপর শিং ধরার আদেশ দিলেন। পরিশেষে সপ্তম ব্যক্তি পশুটিকে যবেহ করলেন এবং আমরা সবাই তাকবির(আল্লাহু আকবার) বললাম। বাকিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি হযরত হাম্মাদ বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র নিকট জিজ্ঞাসা করলাম যে, সেই সপ্তম ব্যক্তিটি কে ছিলেন? সে বললেন, আমি জানি না। তখন আমি বললাম, তিনি হুজুর পূরনূর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ছিলেন।
[কানযুল উম্মাল, কিতাবুল হাজ্ব মিন ক্বিসমিল আফয়াল, বাবু ফী ওয়াজিবাতিল হাজ্ব ওয়া মান্দুবাতিহি, হাদিস নম্বর ১২৬৯৩]
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি কামনার্থে বিশুদ্ধভাবে কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন, বিহুরামতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন।