মাযহাব মানা সম্পর্কে কুর’আন যা বলে

হাকীমূল উম্মত শায়খ আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহু আলাইহি

ওয়েব সম্পাদনায়ঃ মুহাম্মদ গোলাম হুসাইন

 

মাযহাব মানা বা তাকলীদ করা যে ওয়াজিব, তা কুরআনের আয়াত, সহীহ হাদীস, উম্মতের কর্মপন্থা এবং তাফসীরকারকদের উক্তি সমূহ থেকে প্রমাণিত। সাধারণ তাকলীদ হোক বা মুজতাহিদের তাকলীদ হোক উভয়েরই প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। তাই যেনে নেওয়া যাক

 

  • আয়াত নং- ১

  اِهْدِ نَاالصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ-صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

অনুবাদঃ আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করুন। উনাদের পথে যাঁদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন।

ব্যাখ্যাঃ এখানে সোজা পথ বলতে ওই পথকে বোঝানো হয়েছে, যে পথে আল্লাহর নেক বান্দাগণ চলেছেন। সমস্ত তাফসীর কারক, মুহাদ্দিছ, ফিকহবিদ ওলীউল্লাহ গাউছ-কুতুব ও আবদাল হচ্ছেন আল্লাহর নেক বান্দা। তারা সকলেই  মুকাল্লিদ বা অনুসারী ছিলেন। সুতরাং তাকলীদই হলো সোজা পথ।

 

  • আয়াত নং- ২

اَطِيْعُوا للهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ

অনুবাদঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ প্রদানকারী রয়েছে তাদেরও।

ব্যাখ্যাঃ এ আয়াতে তিনটি সত্বার আনুগত্যের নির্দেশ  দেয়া হয়েছে –

(১) আল্লাহর (কুরআনের) আনুগত্য,

(২) রসুলের (হাদীছের) আনুগত্য এবং

(৩) আদেশ দাতাগণের (ফিকহাবিদ মুজতাহিদ আলিমগণ) আনুগত্য। اُوْلِى الْاَمْرِ (উলিল আমর) হলেন মুজতাহিদ আলিমগণই।মনে রাখতে হবে যে, এ আয়াতে আনুগত্য বলতে শরীয়তের আনুগত্য বোঝানো হয়েছে।

এ আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিও পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে যে অনুশাসন তিন রকমের আছে, কতগুলো সরাসরি কুরআন থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত। যেমন, অন্তঃসত্ত্বা নয়, এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে, তাকে ‘ইদ্দত’ পালন করতে হয়, এদের প্রতি  আল্লার নির্দেশ اَطِيْعُوْا اللهَ (আতীউল্লাহ) থেকে এ অনুশাসন গৃহীত হয়েছে। আর কতগুলো অনুশাসন সরাসরি হাদীছ থেকে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত। উদাহরণ স্বরূপ, সোনা-রূপা নির্মিত অলংকার ব্যবহার পুরুষের জন্য হারাম। এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য اَطِيْعُوْا الرَّسُوْلُ (আতীউর রসুল) বলা হয়েছে। আর কতকগুলো অনুশাসন আছে যেগুলো স্পষ্টভাবে কুরআন বা হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় না। যেমন স্ত্রীর সঙ্গে পায়ুকামে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারটি অকাট্যভাবে হারাম হওয়ার বিধান। এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য اُوْلِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ (উলীল আমরে মিনকুম) বলা হয়েছে। এ তিন রকম শরীয়ত বিধির জন্য তিনটি আদেশ দেয়া হয়েছে।

 

  • আয়াত নং- ৩

فَاسلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ  

অনুবাদঃ হে লোক সকল! তোমাদের যদি জ্ঞান না থাকে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।

ব্যাখ্যাঃ এ আয়াত থেকে বোঝা গেল, যে যেই বিষয়ে অবহিত নয়, সে যেন সেই বিষয়ে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জেনে নেয়। যে সব গবেষণালব্ধ মাসাইল বের করার ক্ষমতা আমাদের নেই, ঐগুলো মুজতাহিদগনের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে। সুতরাং যে বিষয়ে আমরা জানি না, সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা একান্ত প্রয়োজন।

 

  • আয়াত নং- ৪

وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ

অনুবাদঃ যিনি আমার দিকে (আল্লাহর দিকে) রুজু করেছেন তার পদাঙ্ক অনুসরন কর।

ব্যাখ্যাঃ এ আয়াত থেকে এও জানা গেল যে আল্লাহর দিকে ধাবিত ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ (তাকলীদ) করা আবশ্যক।

 

  • আয়াত নং- ৫

وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا

অনুবাদঃ এবং তাঁরা আরয করেন- হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের দ্বারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দাও এবং আমাদেরকে পরহেযগারদের ইমাম বানিয়ে দাও।

ব্যাখ্যাঃ ‘তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীলে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

فَنَقْتَدِىْ بِالْمُتَّقِيْنَ وَيَقْتَدِى بِنَا الْمُتَّقُوْنَ

অনুবাদঃ যাতে আমরা পারহেযগারদের অনুসরণ করতে পারি, আর পারহেযগারগণও আমাদের অনুসরণ করার সুযোগ লাভ করতে পারেন।

এ আয়াত থেকেও বোঝা গেল যে, আল্লাহ ওয়ালাদের অনুসরণ বা তাকলীদ করা একান্ত আবশ্যক।

 

  • আয়াত নং- ৬

يَوْمَ نَدْعُوْا كُلُّ اُنَاسٍ بِاِمَامِهِمْ

অনুবাদঃ যে দিন আমি প্রত্যেক দলকে নিজ নিজ ইমাম সহকারে ডাকবো….।

ব্যাখ্যাঃ তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ এর ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে,

اَوْمُقَدَّمٍ فِى الدِّيْنِ فَيُقَالُ يَا حَنْفِىُّ يَاشَافِعِىُّ

অনুবাদঃ কিংবা ইমাম হচ্ছেন ধর্মীয় পথের দিশারী, তাই কিয়ামতের দিন লোকদিগকে ‘হে হানাফী ! হে শাফেয়ী! বলে আহবান করা হবে।

এ থেকে বোঝা গেল যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ইমামের সাথে ডাকা হবে। ডাকা হবে, হে হানাফী মতাবলম্বীগণ ! হে মালিকী মযহাবের অনুসারীগণ ! চলো। এখন প্রশ্ন হলো, যে ইমাম মানেনি, তাকে কার সাথে ডাকা হবে ? এ সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে কবীর” এর প্রণেতা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, যার ইমাম নেই, তার ইমাম হলো শয়তান।

 

  • আয়াত নং- ৭

  وَاِذَاقِيْلَ لَهُمْ امنُوْا كَمَا اَمَنَ النَّاسُ قَالُوْا اَنُؤْمِنَ كَمَا اَمَنَ السُّفْهَاءُ

অনুবাদঃ এবং যখন তাদেরকে বলা হয়- ‘তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেরূপ সত্যিকার বিশুদ্ধ চিত্ত মু’মিনগণ ঈমান এনেছেন। তখন তারা বলে- আমরা কি বোকা ও বেওকুফ লোকদের মত বিশ্বাস স্থাপন করব?

ব্যাখ্যাঃ বোঝা গেল যে, ঐ ধরনের ঈমানই গ্রহনযোগ্য, যে ঈমান নেককার বান্দাগণ পোষণ করেন। অনুরূপ, মাযহাব ওটাই যেটার অনুসারী হচ্ছে নেক বান্দাগণ।  সেটাই হলো তাকলীদ।

 

  • তথ্যসূত্র

১। সূরা ফাতেহা আয়াত –  (৫-৬)

২। সূরা নিসা আয়াত – ৫৯

৩। সূরা আম্বিয়া  আয়াত – ৭

৪। সূরা লোকমান আয়াত – ১৫

৫। সূরা ফুরক্বান – ৭৪

৬। সূরা ইসরা – ৭১

৭। সূরা বাকারা – ১৩

 


Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading