হজের সফর দোয়া কবুলের অপূর্ব সুযোগ। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে দোয়া কবুল হওয়া শুরু হয়। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যে স্থানগুলোতে নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়। দোয়া কবুলের প্রসিদ্ধ কিছু স্থান উল্লেখ করা হলো।
- হারাম শরিফ: হারাম শরিফের সীমানা বায়তুল্লাহর পশ্চিমে জেদ্দার পথে শুআইদিয়া পর্যন্ত ১০ মাইল, পূর্বে জেরুজালেমের পথে ৯ মাইল, দক্ষিণে তায়েফের পথে ৭ মাইল এবং উত্তরে মদিনা শরিফের পথে ৫ মাইল।
- মসজিদুল হারাম: মসজিদুল হারাম হলো কাবা শরিফের চারদিকের বৃত্তাকার মসজিদ।
- কাবা শরিফ: মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কালো রঙের চতুষ্কোণ আয়তাকার গৃহটিই হলো কাবা শরিফ। কাবা হলো আল্লাহর ঘর।
- হাতিম: কাবা ঘরসংলগ্ন উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থান ‘হাতিম’ ও ‘হুজ্জাতু ইসমাইল’। এই স্থানটুকু আগে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা-এর নবুয়ত প্রকাশের কিছুদিন আগে কাবাঘরের সংস্কার করা হয়। এ সময় হালাল অর্থের অভাবে পূর্ণ কাবা নির্মাণ সম্ভব হয়নি বিধায় হাতিম অংশ বাদ রেখে নির্মাণ করা হয়েছে।
- মিজাবে রহমত: কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য উত্তর পাশে হাতিমের ভেতরে মাঝখান বরাবর সোনার পরনালা হচ্ছে মিজাবে রহমত।
- কাবা শরিফের রোকনসমূহ: কাবাঘরের প্রত্যেক কোণকে রোকন বলা হয়। কাবাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণকে বলা হয় রোকনে ইরাকি, উত্তর-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে শামি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে ইয়ামানি।
- হাজরে আসওয়াদ: কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালে লাগানো জান্নাতি পাথর।
- মুলতাজিম: হাজরে আসওয়াদ ও কাবাঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থান।
- বাবুল কাবা: কাবাঘরের দরজা।
- মুস্তাজার: কাবার বহির্গমন দরজা। বর্তমানে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করা আছে।
- রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যস্থল: তাওয়াফের প্রতি চক্করে এই স্থানে পড়তে হয়, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাছানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাছানা; ওয়া কি না আজাবান নার।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)।
- মাতাফ: কাবা শরিফের চতুর্দিকে তাওয়াফের জন্য খোলা স্থান।
- মাকামে ইব্রাহিম: কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাতাফের মধ্যে যে পাথরখণ্ড সংরক্ষিত আছে, যার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন।
- সাফা: কাবা শরিফের পূর্ব পাশের নিকটতম পাহাড়, যেখান থেকে সাঈ শুরু করতে হয়।
- মারওয়া: সাফা থেকে থেকে ৪৫০ মিটার দূরত্বে মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এখানে সাঈ শেষ হয়।
- মাসআ: সাফা ও মারওয়া এই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী সাঈর স্থান।
- মিলাইনে আখদারাইন: সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে ৫০ গজ গেলে দেয়ালে সবুজ বর্ণের লাইট দ্বারা চিহ্নিত প্রায় ৪০ হাত স্থান।
- আরাফাত: আরাফাত ময়দানে হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া আলাইহাস সালাম-এর পুনর্মিলন হয় এবং এখানেই তাঁদের তওবা কবুল হয়। তাঁরা এই দোয়াটি পড়েছিলেন, ‘রাব্বানা জালামনা আনফুছানা, ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা; লানাকুনান্না মিনাল খছিরিন।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩)।
- জাবালে রহমত: দয়ার পাহাড়, এই পাহাড় আরাফাত ময়দানে অবস্থিত।
- মসজিদে নামিরা: আরাফাতের দিন এখান থেকে হজের ভাষণ দেওয়া হয়।
- মুজদালিফা: এখানে বাবা আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহিস সালাম প্রথম একত্রে রাত যাপন করেন।
- মিনা: আল্লাহ তাআলার আদেশে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম স্বীয় তরুণ পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-কে যে স্থানে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।
- মসজিদে খায়েফ: মসজিদে খায়েফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা পর্যন্ত ৭০ জন পয়গম্বর আলাইহিমুস সালাম আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেছেন।
- জামারাত: মিনাতেই তিনটি জোমরা (স্তম্ভ) অবস্থিত, এগুলোকে একত্রে ‘জামারাত’ বলে। এগুলো ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-কে কোরবানির পথে এই স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করলে তিনি পাথর ছুড়ে তাকে বিতাড়িত করেন।
হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন পর্যন্ত হাজিদের দোয়া কবুল হতে থাকে এবং হাজি যত দিন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হবেন, তত দিন পর্যন্ত তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে।
লিখেছেন,
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.