পেশাগত দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ‘সবর’ করার চেষ্টা রোজাদারগণ সচেষ্ট রয়েছেন। মহানবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের মর্যাদা প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন, এটি সবরের মাস। আর সবরের প্রতিদান জান্নাত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন,
- আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করব এসব অবস্থায় যারা ধৈর্য অবলম্বন করবে, তাদের সুসংবাদ দাও এবং যখনই কোনো বিপদ আসে তখনই তারা বলে : ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে’ [সুরা বাকারা ১৫৫-১৫৬]
- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৫৩)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
- আল্লাহতাআলা স্বীয় কিতাবে (কোরআনে) ৯০ বার সবরের উল্লেখ করেছেন।
সহিহ হাদিসে রয়েছে,
- সবর হচ্ছে জ্যোতিস্বরূপ।
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন :
- সবরের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম জীবন পেয়েছি। ইমাম বুখারি এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।
আলী বিন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন :
- দেহের মধ্যে মাথার স্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ইমানের মধ্যে সবরের স্থান ঠিক সে রকমই। অতঃপর তিনি আওয়াজ উঁচু করে বললেন : যার সবর নেই, তার ইমানও নেই।
জেনে রাখা দরকার, সবর তিন প্রকার।
- প্রথমত: আল্লাহর বিধান ও হুকুম-আহকাম পালন করার ক্ষেত্রে (কষ্টের ওপর) সবর করা।
- দ্বিতীয়ত: আল্লাহর নিষেধ ও হারাম কাজগুলো থেকে বিরত থাকায় সবর করা।
- তৃতীয়ত : আল্লাহতাআলা কর্তৃক নির্ধারিত যে সমস্ত বিপদাপদ আগমন করে তা বরদাশত করতে গিয়ে সবর করা।
ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ আরো বাড়িয়ে বলেন,
- শরিয়তবিরোধী খাহেশাতের (কুপ্রবৃত্তির) অনুসরণ থেকে বিরত থাকাও সবরের অন্যতম প্রকার।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ইমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে হেদায়েত দান করেন’। (সূরা তাগাবুন : ১১)
আয়াতের শুরুতে রয়েছে,
- ‘আল্লাহর হুকুম ব্যতীত মানুষকে কোনো মুসিবতই আক্রমণ করে না। অন্য এক আয়াতে এসেছে, পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখিনি। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ’। (সূরা হাদিস : ২২)
আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
- আয়াতে যার আলোচনা হয়েছে, সে হচ্ছে ওই ব্যক্তি (মুমিন) যে বিপদ আসলে মনে করে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এর ফলে সে বিপদগ্রস্ত হয়েও সন্তুষ্ট থাকে এবং বিপদকে খুব সহজেই মেনে নেয়।
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
- ‘আল্লাহতাআলা যখন তার কোনো বান্দার মঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতেই তার (অপরাধের) শাস্তি দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে তিনি যখন তার কোনো বান্দার অমঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতে তার পাপের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন, যেন কেয়ামতের দিন তাকে পূর্ণরূপে শাস্তি দেন’।
মাহে রমজান সবরের গুণ অর্জনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পানাহার বর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের প্রবৃত্তি দমনের যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা যখন অন্য সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তখন একজন মানুষের চরিত্র হয় উন্নত থেকে আরো উন্নত। নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনে মাহে রমজান এভাবেই প্রভাব ফেলে। সবরের মাহাত্ম্য ও প্রতিদান সম্পর্কে অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে। যেমন সূরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে_ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিদান অভাবনীয় মাত্রায় দেয়া হবে।
হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন যখন সব মানুষ আল্লাহর দরবারে হিসাব দেয়ার জন্য হাজির হবে, তখন একজন ঘোষক বলতে থাকবেন,
শ্রেষ্ঠ মানুষরা কোথায়? তখন ছোট একটি দল উঠে দাঁড়াবে এবং দ্রুতগতিতে জান্নাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদের জিজ্ঞেস করবেন, এত দ্রুত জান্নাতে যাচ্ছেন আপনারা কারা? তারা বলবেন আমরা শ্রেষ্ঠ মানুষ। প্রশ্ন করা হবে, আপনাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ কী? তারা বলবেন, আমাদের ওপর যখন অত্যাচার করা হতো তখন আমরা ধৈর্য ধারণ করতাম। ফেরেশতারা বলবেন, যান আপনারা জান্নাতে চলে যান। আমলকারীদের কী উত্তম পুরস্কার!
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.