মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের নিকট আসে খুশির ঈদ । ঈদ আমাদের মাঝে অনাবিল মুক্তি ও কল্যাণ নিয়ে আসে । বেশিরভাগ মানুষই ঈদের রাতকে আনন্দের রাত হিসেবে উদ্যাপন করেন, সারা মাসের সিয়াম ও ইবাদতের পর আরাম করেন এবং ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে যান । অথচ ঈদের রাতও তাৎপর্যপূর্ণ রাত সমূহের মধ্যে একটি রাত । এ রাতকে লায়লাতুল জাযা বা পুরস্কারের রাত বলা হয় । সারা বছরের দু’আ কবুলের রাতসমূহের মধ্যে ঈদের রাতও অন্তর্ভুক্ত । সরকারে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ রাতে ইবাদত করেন এবং ইবাদতের কথা বলেছেন । এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হল ।
- হযরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন –
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
যে ব্যক্তি সাওয়াব লাভের আশায় দু’ঈদের রাতে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) আল্লাহর ইবাদতে জাগ্রত থাকবে । ক্বিয়ামতের দিন তার প্রাণের মৃত্যু হবেনা , যেদিন সকল প্রাণের মৃত্যু হবে অর্থাৎ আতঙ্কিত থাকবে ।
সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সিয়াম, হাদীস নং-১৭৮২, কানযুল উম্মাল- ২৪১০৫।
- হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ لِلَّهِ مُحْتَسِبًا لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ حِينَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
যে ব্যক্তি সাওয়াব লাভের আশায় দু’ঈদের রাতে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) আল্লাহর ইবাদতে জাগ্রত থাকবে,ক্বিয়ামতের দিন তার প্রাণের মৃত্যু হবেনা , যেদিন সকল প্রাণের মৃত্যু হবে অর্থাৎ আতঙ্কিত থাকবে।
সূত্রঃ বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান, কিতাবুস সিয়াম, হাদীস নং- ৩৪৩৮, আস সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী – ৬২৯৩ ।
- হযরত মু’আজ বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন –
من أَحْيَا اللَّيَالِي الْخمس وَجَبت لَهُ الْجنَّة لَيْلَة التَّرويَة وَلَيْلَة عَرَفَة وَلَيْلَة النَّحْر وَلَيْلَة الْفطر وَلَيْلَة النّصْف من شعْبَان
যে ব্যক্তি এই পাঁচ রাতে আল্লাহর ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব । সেগুলো হল – ১. জিলহজ্বের ৮ম রাত, ২. জিলহজ্বের ৯ম রাত , ৩. ঈদুল আযহার রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫. শাবানের পনেরতম রাত (শবে বরাত) ।
সূত্রঃ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২:৯৮, হাদীস- ১৬৫৬।
- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
خَمْسُ لَيَالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءَ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَأَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ
এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় কৃত দু’আ ফেরত দেওয়া হয়না । সেগুলো হল-জুমু’আর রাত,রজব মাসের প্রথম রাত,শ’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত ।
সূত্রঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক,কিতাবুস সিয়াম হাদীস নং-৭৯২৭, বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান-৩৪৪০, ফাজায়িলুল আওকাত-১৪৯ ।
- হযরত আবু উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
خَمْسُ لَيالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدَّعْوَةُ أوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبانَ وَلَيْلَةُ الجُمُعَةِ وَلَيْلَةُ الفِطْرِ وَلَيْلَةُ النَّحْر
এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না।ওইগুলো হল-জুমু’আর রাত,রজব মাসের প্রথম রাত,শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত) এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত ।
সূত্রঃ সুয়ূতী জামেউল আহাদীস-১১৯৭৯, দায়লামী মুসনাদ,২:১৯৬ হাদীস-২৯৭৫, ইবনে আসাকীর তারিখে দামেশক,১০:৪০৮।
- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন যে,
يفتح الله الْخَيْر فِي أَربع لَيَال لَيْلَة الْأَضْحَى وَالْفطر وَلَيْلَة النّصْف من شعْبَان ينْسَخ فِيهَا الْآجَال والأرزاق وَيكْتب فِيهَا الْحَاج وَفِي لَيْلَة عَرَفَة إِلَى الْأَذَان
চারটি রাতে মহান আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কল্যাণের বারিধারা অঢেল করে দেন, তা হল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা, শা’বানের মধ্য রাত্রি এবং আরাফার রাত । এ রাতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও রিযিকের ব্যাপার এবং হাজীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, আর তা আযানের সময় পর্যন্ত চলতে থাকে ।
সূত্রঃ কানযুল উম্মাল-৩৫২১৫, মুসনাদে দায়লামী ৫:২৭৪।
- ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
بَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ : إِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ : فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى ، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ ، وَأَوَّلِ لَيْلَةِ مِنْ رَجَبٍ ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ
আর আমাদের নিকট এরূপ বর্ণনা এসেছে যে, নিশ্চই পাঁচটি রাতে বান্দার দুআ’র জবাব দেয়া হয় অর্থাৎ দু’আ কবুল করা হয়, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর ,ঈদুল আযহার রাত, রজবের প্রথম রাত এবং শাবানের মধ্য রাত (শবে বরাত) ।
সুত্রঃ আল উম্ম, ১:২৩১/২:৪৮৫, ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১৩৭, বায়হাক্বী আস সুনানুল কুবরা, বাবু ইবাদাতি লায়লাতিল ঈদাইন,হাদীস-৬১৫৯।
- খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি বসরায় তাঁর গভর্নরকে লিখেন,
عليك بأربع ليال من السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة إفراغا أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة الأضحى
বছরে চারটি রাতের ব্যাপারে তোমার সতর্ক থাকা প্রয়োজন।কেননা আল্লাহ্তা’আলা ঐ রাতগুলোতে তাঁর রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন।সে রাতগুলো হল- রজবের প্রথম রাত, শাবানের মধ্য রাত এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত ।
সূত্রঃ ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১।
এমন একটি ফজিলতপূর্ণ রাতকে হেলায় কাটানো কোন ভাবেই উচিত হবেনা । পরিতাপের বিষয় বর্তমানে আমরা অনেকেই এই রাতকে হেলায়, হাসি আনন্দ, রং-তামাশায় কাটিয়ে দেই । অথচ এটিই ইবাদতের রাত সমূহের একটি , দু’আ কবুলের রাত সমূহের একটি । আল্লাহ্ আমাদের হেদায়াত নসীব করুন এবং এ রাতে ইবাদত, ইস্তেগফার ও যিকির-আযকারে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন ।আমিন,বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন ।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.