কোরবানীর জরুরী মাসায়েল

আল্লামা মুহাম্মদ সিরাজুম্মুনীর শোয়াইব

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সাধারণতঃ কোরবানীর ঈদ বলা হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী দিয়ে পরমানন্দ উপভোগ করে থাকেন। আল্লাহর প্রিয়নবী হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তাঁর প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী দেয়ার যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এরই স্মৃতিবাহী এ পবিত্র কোরবানী।

যদিও কোরবানী আল্লাহর ওয়াস্তে করা হয় কিন্তু কোরবানীর মাংস খেয়ে থাকি আমরা নিজেরাই। আল্লাহ পাক সে কোরবানীর মাংস খান না। তাই আল্লাহর প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেভাবে কোরবানী আদায় করার নিয়ম বলে দিয়েছেন সেভাবে যদি আমরা কোরবানী আদায় করি তাহলেই আল্লাহ পাক খুশী হবেন। হযরত রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন, কোরবানীর দিবসে মানুষের কোন নেক কর্মই আল্লাহর নিকট এতটুকু প্রিয় নয় যতটুকু প্রিয় কোরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। কোরবানীর দিন কোরবানীর পশুর রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার নিকট তা কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানী কর।  -(আল্ হাদীস)

হুজূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন- কোরবানীর পশুর প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে একটি করে সাওয়াব পাওয়া যায়। অন্যত্র বর্ণিত আছে হাশরের দিবসে কোরবানীকৃত পশুগুলো কোরবানী দাতাগণকে আপন পৃষ্ঠ করে  পুলছিরাত পার করিয়ে বেহেশ্তে পৌঁছে দিবে। নিম্নে কোরবানীর বিশেষ প্রয়োজনীয় মাসয়ালাগুলো উল্লেখ করা হল।

  • কোরবানী কার উপর ওয়াজিব?

স্বাধীন, অমুসাফির ব্যক্তি যিনি মালেকে নেসাব অর্থাৎ এতটুকু সম্পদের অধিকারী হওয়া যতটুকু সম্পদ হলে সদকায়ে ফিতর ও যাকাত প্রদান ওয়াজিব হয়। মালেকে নেসাব’র ব্যাখ্যা হল- মানুষের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য ও সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এই পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া। মৌলিক চাহিদা বলতে বাসস্থান, আসবাবপত্র, অন্ন, বস্ত্র, চাকর, সফরের বাহন, হাতিয়ার ও পেশার সরঞ্জাম ইত্যাদি।

  • কোরবানীর সময় কখন ?

চান্দ্র মাসের জিলহজ্বের ১০ তারিখ হতে ১২ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ তিনদিন দুই রাত।

  • মাসআলাঃ  যে ব্যক্তি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা এ পরিমাণ অর্থ ব্যতীত এমন কোন সামগ্রীর মালিক হয় যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য পরিমাণ  তাহলে সে ধনী হিসেবে বিবেচিত, তাঁর উপর কোরবানী ওয়াজিব। (আলমগীরী)
  • মাসআলাঃ কোন লোক যদি বলে আমার অমুক কাজটি যদি হয়ে যায়  তাহলে আমি কোরবানী করব। অথবা আল্লাহর কছম এই পশুটিকে আমি অবশ্যই আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানী করব। এই দু’শ্রেণীর লোক ধনী হোক অথবা গরীব হোক তাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব।  – (বাদায়ে – ৫:৬২)
  • মাসআলা কোন ধনী লোক মানতের কোরবানী দ্বারা (ধনী হওয়ার কারণে) ওয়াজিব কোরবানী আদায় হবে না। বরং তার উপর দুইটি কোরবানী ওয়াজিব হবে। একটি মান্নতের অপরটি মালেকে নেসাব হওয়ার কারণে। যদি কোরবানীর দিন শপথ করে তাহলে শপথের কোরবানী দ্বারা ওয়াজিব কোরবানীও আদায় হয়ে যাবে।
  • মাসআলা কোরবানীর পশু ক্রয়ের আগে কোরবানীর পশুর অংশীদার ঠিক করা উত্তম। পশু ক্রয়ের পর অন্য কাউকে অংশীদার বানাতে চাইলে পারবে কিন্তু মাকরূহ।
  • মাসআলাঃ কোন গরীব লোক কোরবানীর নিয়তে কোরবানীর পশু ক্রয় করলে ঐ পশু হারিয়ে যাওয়ার পর যদি আবার ফিরে আসলে ঐ পশুতে অংশীদার নেয়া মাকরূহ।
  • মাসআলা জীবিতের কোরবানী ও মৃত ব্যক্তির (অসিয়তের) কোরবানী এবং আক্বীকাকারী কোরবানীর পশুতে অংশীদার হতে পারবে। কিন্তু শর্ত হলো সবার উদ্দেশ্য যেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হয়। কেউ যেন শুধু মাত্র গোশ্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানী না করে।
  • মাসআলা কেউ যদি তাঁর মৃত মা-বাবা ও দাদা-দাদীর কবরে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে এক অংশ কোরবানী করতে চায় তাহলে পারবে কেননা এতে কোরবানীদাতা একজন কিন্তু সাওয়াবের অংশীদার বেশী।
  • মাসআলা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে অথবা স্ত্রীর অথবা এমন ব্যক্তির যার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব হয়েছে এ ধরণের লোকের ওয়াজিব কোরবানী তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের পক্ষ হয়ে কোন ব্যক্তি যদি কোরবানী করে তাহলে কোরবানীর ওয়াজিব আদায় হবে না। এমনকি তার কোরবানীর পশুর শরীকদার ব্যক্তিদের কোরবানীও হবে না। কিন্তু যার প্রতি বছর কোরবানী করার অভ্যাস আছে তার কোরবানী জায়েয হবে। কিন্তু এ অবস্থায়ও অনুমতি বা পরামর্শ করা বেশী ভাল। -(ফতোয়ায়ে কাজী খান – ২০২পৃঃ)
  • মাসআলা কোন ব্যক্তি কোরবানীর পশু ক্রয় করার পর দেখা গেল কোরবানীর পশুটি হারিয়ে গেছে এমতাবস্থায় আরেকটি পশু ক্রয় করার পর প্রথমে হারিয়ে যাওয়া পশুটিও আবার পেয়ে গেল। এ অবস্থায় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না  হলে অর্থাৎ যার উপর কোরবানী ওয়াজিব হয় নাই। তার উপর দুটিই কোরবানী করে দেয়াই ওয়াজিব। যদি মালেকে নেসাব হয় তাহলে একটি যবেহ করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টির মূল্য যাতে কম না হয়। কম হলে তাহলে সে পরিমাণ অর্থ সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। -(বাদায়ে – ৫ : ৬৬)
  • মাসআলা কোন ব্যক্তির সমস্যার কারণে যিলহজ্বের ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন দুই রাতের মধ্যে যদি কোরবানী করতে সক্ষম না হয় তাহলে তিনদিন পর ভেড়া বা ছাগলের মূল্য পরিমাণ অর্থ সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। যদি মৃত্যু যাত্রী হয় তাহলে অসিয়ত করা অত্যন্ত কর্তব্য।
  • মাসআলা কোরবানী কাযা হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ কোন পশু যবেহ করে তবে তা সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। যদি মূল্য কম হয়েছে বলে মনে হয় তবে যে পরিমাণ মূল্য কম হয়েছে বলে মনে হবে সে পরিমাণ মূল্য সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। ঐ পশুর যে পরিমাণ গোশ্ত নিজে অথবা বন্ধু-বান্ধবদের যে পরিমাণ গোশ্ত খাইয়েছে সে পরিমাণ গোশ্তের মূল্য সদকা করে দেয়া ওয়াজিব।
  • মাসআলা কোরবানীর তিনদিনের ভিতর অর্থাৎ যিলহজ্বের ১০-১২তারিখের মধ্যে কোরবানীর পশুর দাম সদকা করে দেয়া হলে কোরবানীর ওয়াজিব আদায় হবে না এবং সব সময় গুনাহগার থেকে যাবে। কেননা কোরবানী তেমন একটি এবাদত যেমন- নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত। যেভাবে নামাযের দ্বারা যাকাতের ফরজ আদায় হয় না। সেভাবে ছদক্বা দ্বারা কোরবানীও আদায় হয় না।
  • মাসআলা কোরবানীর দিনসমূহের মধ্যে কোরবানীর নিয়তে মোরগ-মুরগী জাতীয় ইত্যাদি জবেহ করা মাকরূহ। -(আলমগীরী – ৪:১০৫)
  • মাসআলা হুজূর আকরম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং তাঁর মৃত উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছেন। তাই এটা সৌভাগ্যের বিষয় হবে যার পক্ষে সম্ভব সে যেন হুজূরের নামে কোরবানী করে। -(বাহারে শরীয়ত)

গরু, উট দ্বারা কোরবানী করলে নফল হিসেবে একভাগ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র নামে কোরবানী দেয়া অনেক উত্তম।

  • কোরবানীর পশুর বয়স

কোরবানীর ছাগল কমপক্ষে একবছর, গরু দুই বছর এবং উট পাঁচ বছর হতে হবে। কোরবানীর জন্য সুন্দর ও নিখুঁত জন্তু বাছাই করা উত্তম। যেসব জন্তু অন্ধ, খোঁড়া এবং জবেহ করার স্থানে যেতে অক্ষম, লেজ, শিং বা কান কাটা বা ভাঙ্গা বা দুর্বল ইত্যাদি কোরবানীর পশু কোরবানীর উপযুক্ত নয়।

  • অংশীদারিত্বে কোরবানীর নিয়ম

গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ইত্যাদি চতুষ্পদ হালাল গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানী করা জায়েয। গরু, মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর প্রত্যেকটিতে এক হতে সাতজনের নামে কোরবানী করা যায়। তবে শর্ত হল সবকটি অংশ একক নিয়তে শুধুমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তে (মাংস খাওয়ার নিয়ত ব্যতীত) ও পরিমাণ সমান হতে হবে। মাংস পাল্লা দিয়ে ওজন করে ভাগ করতে হবে। কোন শরীকদার বেশী পেয়ে থাকলে অন্যরা মাফ করে দিলেও কারো কোরবানী বৈধ হবে না। সম্মিলিত কোরবানীর পশু ক্রয় করার পর তাতে ভাগ বা অংশ অবশিষ্ট থাকলে অন্য লোককে শামিল করতে কোন অসুবিধা নেই। কেউ একা কোরবানী করার মানসে পশু ক্রয় করলেও তাতে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে ক্রয় করার পূর্বে ভাগগুলো ঠিক করে নেয়া উত্তম।

  • কোরবানীর মাংস ও ভাগের শরীয়তী নিয়ম

কোরবানীর মাংস তিনভাগে ভাগ করে এর একভাগ গরীব ও ইয়াতীম- মিসকীনদের দান করা, একভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া অন্য ভাগ নিজে রাখা মুস্তাহাব। কোরবানীর পশু যবেহকারী ও মাংস প্রস্তুতকারীকে কোরবানীর পশুর মাংস থেকে পারিশ্রমিক স্বরূপ দেয়া যাবে না।

  • কোরবানির চামড়া

কোরবানীর পশুর চামড়া, ঝোলা, রশি ও ফুলের মালা প্রভৃতি সদকা করে দিতে হবে। চামড়া নিজের জন্য রাখতে চাইলে রাখতে পারবে, যেমন- জায়নামায, বিছানা, ইত্যাদি বানাতে পারবে। কিন্তু কোরবানীর চামড়া বিক্রি করে এর মূল্য নিজ কর্মে ব্যয় করতে পারবে না। এ টাকা গরীব মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। চামড়া ধর্মীয় মাদ্রাসায়ও সদকা করে দেয়া যায় যদি উক্ত মাদ্রাসায় লিল্লাহ ফান্ড বা মিসকীন ফান্ড থাকে। কোরবানীর পশুর পেটে জীবিত বাচ্ছা হলে সেটিকেও জবেহ করে দিতে হবে। যদি মৃত হয় তাহলে ফেলে দিতে হবে। কোরবানীর উদ্দেশ্যে  ক্রয় করা পশু কোরবানীর পূর্বে বাচ্ছা দিলে সেই বাচ্ছাকেও জবেহ করে দিতে হবে। অথবা বাচ্ছা বিক্রি করে টাকা গুলো সদকা করে দিতে হবে। বাচ্ছা যদি কোরবানীর দিনসমূহে জবেহ করা না হয়, তাহলে সদকা করে দিতে হবে।

  • মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানী

যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়া হয় তাহলে মাংস উপরোল্লিখিত নিয়মে বন্টন করতে হবে। তবে যদি মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানী করা হলে তার সবটুকু সদকা করে দেয়া ওয়াজিব।

  • কোরবানীর পশু যবেহ করার নিয়ম

যবেহ করার নিয়ম জানা থাকলে কোরবানীর পশু নিজ হাতে জবেহ করা মুস্তাহাব। যদি নিজে করতে না পারে তাহলে অন্যের দ্বারা তা সমাধা করা যাবে। তবে জবেহ’র সময় নিজে সামনে থাকা উত্তম। জবেহ’র সময় নিম্নের রগসমূহ কাটার ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।

(ক) শ্বাসনালী (খ) খাদ্যনালী (গ) এবং রক্ত চলাচলের নালীদ্বয়।

বক্ষস্থল হতে গলদেশের মধ্যবর্তী কোন স্থানে জবেহ করা বাঞ্চনীয়। জবেহ’র পূর্বে ছুরী খুব ধারালো করে নিতে হবে। তারপর কোরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ এবং পিছনের দিক উত্তর দিকে রেখে কেবলা মুখী করে শায়িত করে দোয়া পড়বেন।

দোয়াঃ “ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাচ ছামাওয়াতী ওয়াল আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন, ইন্না ছ-লাতী ওয়ানুছুকী ওয়া মাহ্য়ায়ী ওয়ামামাতী লিল্লাহি রাব্বীল আলামীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর।”  বলে কোরবানীর পশু জবেহ করার পর পাঠ করবেন- “আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী (অংশীদার থাকলে- ‘ওয়া মিন’ বলার পর প্রত্যেকে নাম ও বাপের নাম) কামা তাকাব্বালতা মিন খলীলিকা ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।”

এ দোয়া জানা না থাকলে যাদের নামে কোরবানীর হবে তাদের নামগুলো স্মরণ করে মনে মনে নিয়ত করে নিয়ে কোরবানী করলেও দুরস্ত হবে।

  • ঈদুল আজহা নামাযের নিয়ম

যদি নামাযের নিয়ত জানা না থাকে তাহলে এভাবে বাংলায় নিয়ত করবে- আমি ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামায ছয় তাকবীরের সাথে আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামূখী হয়ে এই ইমামের পিছনে ইক্তেদা করছি আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামায শুরু করবে অতঃপর ছানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়াতাবারকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গায়রুকা) পাঠান্তে তিন তাকবীর আল্লাহু আকবর বলে হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে বাঁধবে না। কিন্তু তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বেধে ফেলবে এবং মনযোগ দিয়ে ইমামের ক্বিরাত শুনবে। ক্বেরাতের পর রুকু সিজদার মাধ্যমে এক রাকাতের পরে দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম তিনটি তাকবীর বললে মুক্তাদীগণ তাকবীর বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে প্রত্যেক বারই হাত ছেড়ে দিবে অতঃপর যথারীতি রুকু সিজদার মাধ্যমে ঈদুল আজহার নামায শেষ হবে। নামাযের পর মন দিয়ে চুপচাপ ইমামের খোতবা শ্রবণ করবে ইমাম তাকবীর বলাকালীন মুক্তাদীগণও নিচুস্বরে তাকবীর উচ্চারণ করবে।

  • কোরবানী দিবসের করণীয়

হাদীস শরীফঃ হুজূর আক্বদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন মিষ্টি জাতীয় কিছু আহার করে ঈদগাহে তাশরীফ নিতেন কিন্তু ঈদুল আজহার দিবসে নামায আদায় না করা পর্যন্ত কিছুই আহার করতেন না । -(তিরমিজী, দারমী ও ইবনে মাজা)

মাসআলাঃ ঈদুল আজহার ঐসব বিষয়ই মুস্তাহাব যা ঈদুল ফিতরে ছিল। তবে ঈদুল আজহার ভিন্নতা হলো যে, নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া। (খেলে কোন ক্ষতি হবে না বা মাকরূহ হবে না) ঈদগাহে যাওয়ার সময় বড় বড় আওয়াজে তাকবীর পড়ে যাওয়া, ঈদুল আজহার নামায কোন কারণ বশতঃ ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত দেরী করা যাবে এরপর আর নয়। তবে বিনা কারণে ১০ যিলহজ্ব থেকে বিলম্ব করা মাকরূহ। -(ফতোয়া-এ আলমগীরী)

  • মাসআলাঃ যারা কোরবানী করবে তাদের ১ যিলহজ্ব থেকে ১০ যিলহজ্ব পর্যন্ত দাঁড়ি, চুল না ছাটা ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। -(রদ্দুল মুখতার)

 

  • আইয়ামে তাশরীক

৯ যিলহজ্বের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আছর পর্যন্ত জামাতে শরীক সকল মুক্তাদী ও ইমামের উপর ফরজ নামায আদায়ের পর একবার উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা ওয়াজিব এবং তিনবার পড়া উত্তম। ঈদুল আজহা ও জুমার নামাযের পর পাঠ করা অপরিহার্য।

  • তাকবীর

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হাম্‌দ।

মাসআলাঃ তাকবীর নামাযের সালাম ফিরানোর সাথে পড়া ওয়াজিব। যদি কেউ সালামের পর পর তাকবীর না পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়, অথবা অজু নষ্ট করে ফেলে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দেয়, তবে সে গুনাহগার হবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত বা ভুলবশতঃ হলে পরে পড়ে নিতে হবে। একা নামায আদায়কারীর উপর তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব নয় তবে পড়া উত্তম।

  • আক্বীকা

অনেককেই কোরবানীর সাথে আক্বীকাও আদায় করতে দেখা যায়। তাই নিম্নে আক্বীকা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা হল।

সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার শুকরিয়া স্বরূপ যে জন্তু (গরু-ছাগল) জবেহ করা হয় তাকে আক্বীকা বলে।

  • মাসআলাঃ আক্বীকা করা মুস্তাহাব এবং এর জন্য সন্তান জন্মের সপ্তম দিনই উৎকৃষ্ট যদি সম্ভব না হয় তাহলে সাত দিনের মধ্যে যে কোন দিন আদায় করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
  • মাসআলাঃ আক্বীকা ছেলে সন্তান হলে দুই অংশ আর মেয়ে সন্তান হলে এক অংশ।
  • মাসআলাঃ কোরবানীর সাথে আক্বীকাও সম্পৃক্ত করা যাবে।
  • মাসআলাঃ কোরবানীর জন্তুর জন্য যে শর্ত আক্বীকার জন্তুর জন্যও অনুরূপ শর্ত।
  • মাসআলাঃ আক্বীকার মাংস আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কাঁচা অথবা রান্না করে জেয়াফত আকারে যেকোন ভাবে ব্যবহার করা যায়।
  • মাসআলাঃ আক্বীকার অংশ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সবাই খেতে পারবে; কোন অসুবিধে নেই।
  • মাসআলাঃ আক্বীকার চামড়ার হুকূম কোরবানীর চামড়ার হুকুমের আওতায় পড়বে।

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

আসুন জেনে নিই মক্কা শরিফে দোয়া কবুলের বিশেষ স্থানসমূহ সম্পর্কে

হজের সফর দোয়া কবুলের অপূর্ব সুযোগ। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে দোয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading