শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী
যিনি সত্যিকার অর্থে আলেমে দ্বীন প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর ধর্মীয় জ্ঞানের চিন্তা ভাবনা ইলমে দ্বীনের সেবায় নিয়োজিত রাখতে তাঁকে বাধ্য করে। নিজেও আপাদমস্তক ইলমে দ্বীন হয়ে যান এবং অন্যকেও ইলমে দ্বীনের মাধ্যমে সজ্জিত করেন। সমষ্টিগতভাবে ধর্মীয় জ্ঞান দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমত ইলমে জাহেরী (প্রকাশ্যজ্ঞান) যার আরেকটি নাম হুসূলী (অর্জিত)। দ্বিতীয়ত বাতেনী (অপ্রকাশ্য)। জাহেরী হোক কিংবা বাতেনী উভয় জ্ঞানের জন্য আক্বীদার ক্ষেত্রে পরিপক্ক হওয়া একান্ত আবশ্যক। ইলমে হুসূলীর অধিকারী আলেম শিষ্যত্ব বরণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আর ইলমে হুজূরী ওলামায়ে বাতেন এর কৃপাদৃষ্টির দ্বারাই অর্জিত হয়। হুজূর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেরণের উদ্দেশ্যসমূহ হতে উল্লিখিত দু’টোই প্রধান।
হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃথিবীর বুকে আগমনের উদ্দেশ্য মানবজাতির বিশুদ্ধকরণ এবং পবিত্র কোরআন মজীদ ও হিকমত তথা দর্শনের শিক্ষা দান করণ। বিশুদ্ধ করণের সম্পর্ক বাতেনের সাথে আর হিকমতের সম্পর্ক জাহেরের সাথে। আর পবিত্র কোরআন মজীদ হলো এই দুই জ্ঞানের সমন্বয়কারী।
পীরে তরীকত, রাহবারে শরীয়ত, মা’দানে ফূয়ূজ ও বারাকাত, কুতুবুল ইরশাদ মুরশেদী হযরতুল আল্লামা আলে রসূল সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উদ্দেশ্য ছিল যে আমাদের দ্বীনী শিক্ষা নিকেতন থেকে এমন ওলামা সজ্জিত হোক যারা ইলমে জাহেরী ও ইলমে বাতেনী উভয়ের সমন্বয়কারী হবে এবং আকীদার ক্ষেত্রে পরিপক্ক তথা আক্বায়েদে আহলে সুন্নাতের প্রতিচ্ছবি হবে।
এই অভিলাশ পরিপূর্ণ করার নিমিত্তেই তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য সুন্নী দ্বীনী শিক্ষা নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর সম্মানিত পিতা কুতুবুল আউলিয়া শাহেনশাহে সিরিকোট রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুন্নী দ্বীনী শিক্ষা নিকেতন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। অতঃপর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রসিদ্ধ করণের জন্য অসংখ্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় জামেয়া ক্বাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া, চন্দ্রঘোনায় তৈয়্যবিয়া ওয়াদুদিয়া সুন্নিয়া এবং হালিশহরে তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া -এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
এ সমস্ত শিক্ষা নিকেতন হতে অসংখ্য ছাত্র পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করে স্বদেশ এবং বিদেশে বিভিন্ন শাখায় ও পদে ধর্মীয় এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা মাসলাকে আ’লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রচারার্থে নিয়োজিত রয়েছে যে মাসলাক মূলত হুজূর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই মাসলাক। যার উপর সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন, সলফে সালিহীন এবং সমস্ত আউলিয়ায়ে কামিলীন ছিলেন, রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
সুন্নাতে মুস্তফা
তিনি হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসারী ছিলেন। হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি ক্ষুদ্রতম সুন্নাতকেও বর্জনে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন না।
ইশকে রসূল
তিনি সর্বদা হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইশকে নিমজ্জিত ও নিমগ্ন থাকতেন। মূলতঃ তাঁকে আশেকে রসূলের স্থলে যদি ইশ্বক্বে রসূল বলা হয় তবে বাস্তবিক পক্ষে তারই উপযোগী হবেন এবং তার জীবন্ত নিদর্শন হলো পবিত্র জশনে জুলূস ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে আনুমানিক লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।
যে শোভা যাত্রার দর্শন মাত্রই আরাফাত ময়দানের প্রতিচ্ছবি অন্তরে অঙ্কিত হয়, যেভাবে চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর মুসলমানগণকে একটি ময়দানে সমাগম ঘটিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই নবীরই একজন যোগ্য উত্তরসূরী লাখো মুসলমানগণকে এক শোভা যাত্রায় একত্রিত করান।
কারামাতসমূহ
বস্তুত তাঁর সবচেয়ে বড় কারামাত হলো ঈমান ও আক্বায়েদে আহলে সুন্নাতের উপর দৃঢ়তার সাথে অবস্থান করণ এবং তিনি হলেন সুন্নাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উজ্জ্বল প্রতিকৃতি। কেননা, দ্বীন এবং ঈমানের উপর ইস্পাত পাথরের ন্যায় অনড় থাকাটাই হলো সবচেয়ে বড় কারামাত তথা অলৌকিক ক্ষমতা।
তাঁর অন্যতম আরেকটি বড় কারামাত হলো তাঁর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনী শিক্ষা নিকেতনসমূহ। কেননা এই সমস্ত দ্বীনী শিক্ষা নিকেতন হতে অসংখ্য ছাত্র তাদের পূর্ণাঙ্গ ইলমে দ্বীন অর্জন করে সত্য ধর্মের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
অলৌকিক ক্ষমতা
তিনি নিজেকে গোপনে রাখতে বেশী পছন্দ করতেন এবং কারামাত প্রকাশের বিরোধী ছিলেন। এরপরও অনিচ্ছাকৃত অনেক অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। যেমন-
একদিন সিরিকোট দরবার শরীফে সফরের পূর্বে আমি একটি স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নে দেখতে পাই যে, আমি সিরিকোট পৌঁছলাম এবং হুজূর কেবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র দর্শন লাভে ধন্য হলাম। তিনি আমাকে দেখা মাত্রই আলিঙ্গণ করলেন এবং আমার ললাটে চুমু খেলেন। বাস্তবিকই আমি যখন পরবর্তীতে সিরিকোট শরীফ সফর করি তখন সেই স্বপ্নের কথা হুজূর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে ব্যক্ত করার পূর্বেই তিনি আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং আমার ললাটে চুমু খেলেন এবং বললেন এই হলো আপনার স্বপ্নের সঠিক তা’বীর (অর্থ)।
সিরিকোট শরীফের অন্য আরেক সফরে আমার সাথে হাজ্বী আবদুর রবও ছিলেন। ঢাকা-করাচী এবং করাচী-ইসলামাবাদ যাবার সময় দু’দু’বার বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পরিশেষে হযরাতে কেরামের নিগাহে করমে আল্লাহ্ তায়ালা হিফাজত করেন। পরবর্তীতে সিরিকোট শরীফে পৌঁছার পর উক্ত ঘটনা হুজূর ক্বিবলার সম্মুখে ব্যক্ত করার পূর্বে হুজূর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন আসার পথে কি কোন দূর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল? আমি বললাম- হুজূর! দেখা দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু হযরাতে কেরামের ছদকায় আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে রক্ষা করেন। উল্লিখিত কারামাতসমূহ সম্মানিত পাঠকগণের প্রশান্তির নিমিত্তেই বর্ণিত হল নতুবা তাঁর অসংখ্য অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশের ঘটনা রয়েছে যা তাঁর অনিচ্ছাকৃত বশতঃ প্রকাশ হয়ে গেছে। ইনশা’আল্লাহ্ সময়ের প্রেক্ষিতে তা’ আলোচিত হবে।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.