মুহাম্মদ মহিউদ্দিন
আমাদের কিবলা কাবা শরিফের দিকের সম্মান ও আদব বজায় রাখা প্রকৃত ও সত্যিকারের মুসলমানের কাজ। যেই কিবলার দিকে মুখ করে আমরা নামায আদায় করি, সেই কিবলার দিকে পা প্রসারিত করে শয়ন করা বা বসাটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কিবলার সম্মান বজায় রাখতে কিবলার দিকে থু থু নিক্ষেপ করতেও রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সহিহ বুখারী শরীফ-এ বলা হয়েছে-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ،. أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ نُخَامَةً فِي قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ فَحَكَّهَا بِحَصَاةٍ، ثُمَّ نَهَى أَنْ يَبْزُقَ الرَّجُلُ بَيْنَ يَدَيْهِ أَوْ عَنْ يَمِينِهِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ الْيُسْرَى.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। তারপর সামনের দিকে(কিবলার দিকে) অথবা ডান দিকে থু থু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে বললেন।
তাছাড়া আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى نُخَامَةً فِي الْقِبْلَةِ، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُئِيَ فِي وَجْهِهِ فَقَامَ فَحَكَّهُ بِيَدِهِ
আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে দিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন।
এই বর্ণনা দু’টি দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কিবলার দিকে থু থু নিক্ষেপ করা সরাসরি প্রিয় রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং নবীজীর কষ্টের কারণ। সুতরাং কিবলার সম্মান বজায় রাখতে কিবলার দিকে থু থু নিক্ষেপ করতে যেখানে রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, সেখানে তিনি কিবলার দিকে পা দেয়ার পক্ষে থাকবেন এটা ভাবাটাও তো চরম মূর্খামী।
এছাড়া শৌচকার্যের সময়ও কিবলার সম্মানকে অক্ষত রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তখন জেনে বুঝে কিবলামুখী হয়ে বা কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করা যাবে না। কারণ এটা কিবলার অসম্মান হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন মুয়াত্তায়ে মালিক-এ এসেছে,
عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ الْأَنْصَارِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ تُسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةُ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ
হযরত মালিক নাফে হতে এবং নাফে জনৈক আনসার সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, শৌচকার্যের সময় কিবলাকে সামনে করিয়া বসিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদিগকে নিষেধ করিয়াছেন।
সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে, কিবলার দিকে এমন কোন অসম্মানিত বিষয়ের সম্পর্ক করা যাবে না যা সকলের নিকট অসম্মানের। যেমন থু থু নিক্ষেপ, শৌচকার্য সহ ইত্যাদি কর্মকান্ড। এখন বিবেকবানদের নিকট প্রশ্ন, আমরা যদি আমাদের মুরুব্বীদের সামনে বা যেই আলেম কিবলার দিকে পা প্রসারিত করতে বৈধ বলেছেন, তারই দিকে পা প্রসারিত করে দিই; তিনি কি এতে সম্মানবোধ করবেন নাকি অসম্মানবোধ। একবাক্যে তিনি হয়তো আমাকে বা আপনাকে বেয়াদব না বলে ক্ষান্ত হবে না। আহ্, আফসোস ! আমরা নিজের সম্মান-অসম্মান খুব ভাল বুঝি, কিন্তু যেই কিবলার দিকে আল্লাহকে খুশি করতে নবী-রাসূল-সাহাবাগণ সহ আমরা সিজদা দিচ্ছি, তারই সম্মান-অসম্মান বুঝি না। অনেকে আবার কিবলার দিকে পা দেয়াকে বৈধ করতে এরকমও বলছে, নবীজী তো সরাসরি নিষেধ করেন নাই। আরে ভাই, নবীজী তো সরাসরি স্বেচ্ছায় পানিতে ডুবে মরতেও নিষেধ করেন নাই। তাহলে কি বলবেন, পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করা বৈধ !
যেমনিভাবে প্রিয় রাসূল আত্মহত্যা মহাপাপ বলে একবাক্যে সব কিছুকে এর মধ্যে এনে সব ধরনের স্বেচ্ছা হত্যাকে নিষেধ করে দিয়েছেন। ঠিক তেমনি, কিবলার সম্মান রক্ষা এবং অসম্মান না করার যাবতীয় সব বিষয়গুলোকে কিবলার দিকে থু থু নিক্ষেপ ও শৌচকার্য না করার দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন। শেফা বা আরোগ্য আখ্যায়িত মু’মিনের মুখের থু থু যদি কিবলার দিকে নিক্ষেপ করা অসম্মান এবং আল্লাহ-রাসূলের কষ্টের কারণ হয়, তবে পা প্রসারিত করাটা কি আল্লাহ রাসূলের সন্তুষ্টের কারণ হবে? আর আল্লাহ-রাসূলকে কষ্ট দিয়ে আপনি কোন জান্নাতে যেতে চাচ্ছেন একবার ভেবে দেখেছেন কি?
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীন-ধর্মের প্রতি আন্তরিক হওয়ার তাওফিক দিন। শয়তানের ডিলারশীপ নেয়া ধর্মব্যবসায়ী হতে আমাদের তিনি হিফাজত করুন। আমিন। বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.