প্রফেসর ড. আল্লামা মাসঊদ আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
কখন হতে মাহফিল চলে আসছে ? কে বলবে তা, কাকে জিজ্ঞাস করি… কেউ জানে না তা… কুরসী প্রকাশ হওয়ার লক্ষ বছর পূর্বে এক মাহফিল সাজানো হয়েছিল, প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম যাতে অংশ নেন, রাব্বুল আলামীন বক্তব্য দিলেন আর সেই নবীর আগমন বার্তা দিলেন যার আগমনের পর কেবল উম্মতগণ নয় আম্বিয়াগণেরও স্বীয় অন্তর, প্রাণ ও দুনিয়া তাঁর প্রতি উৎসর্গ করা আবশ্যক হয়ে যায় ।
কুরআনে কারীম খুলুন আর ঐ পবিত্র মাহফিল প্রত্যক্ষ করুন । পড়ুন সেই মাহফিলের ঘোষণা, পড়তে থাকুন । শুনে নিন সেই মাহফিলের আওয়াজ –
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثاقَ النَّبِيِّينَ لَما آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِما مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلى ذلِكُمْ إِصْرِي قالُوا أَقْرَرْنا قالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ
আর স্মরণ করুন ! যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে তাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব, অতঃপর তাশরিফ আনবেন তোমাদের নিকট রাসুল, যিনি তোমাদের কিতাবগুলোর সত্যয়ন করবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্চই তাঁকে সাহায্য করবে । ইরশাদ করলেন , তোমরা কি স্বীকার করলে আর এ সম্পর্কে আমার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করলে ? সবাই আরয করল, আমরা স্বীকার করলাম । ইরশাদ করলেন, তবে (তোমরা) একে অপরের উপর সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম । [১]
যুক্তি দ্বারা অনুধাবন করা যায় যে, যখন এই আজিমুশ্শান মুহাব্বতের অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছে এবং নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের ঘোষণা ও তাঁর বেলাদত শরীফের কথা বলা হয়েছে, তবে নিশ্চিতভাবে ঐ জগত তথা আলমে আরওয়াহ হতে পৃথিবীর বুঁকে এসে প্রত্যেক নবীই স্বীয় উম্মত হতে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন । তাঁর আগমনের কথা বলেছেন, তাঁর বেলাদত শরীফের কথা বলেছেন…বারবার করেছেন…প্রতিটি শহরে, প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মহল্লায়, প্রতিটি গলিতে, প্রতিটি স্থানে অন্তত একটি মাহফিল তো করেছেন তাঁর আগমনের ঘোষণা দিয়ে… তারপরও অন্তত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মাহফিল তো আয়োজন করা হয়েছে… যখন সেই আগত নবীর আগমনের এতই আলোচনা হয়েছে তাহলে তিনি অবশ্যই সমগ্র দুনিয়ার নিকট পরিচিত থাকার কথা… হ্যা, কেন নয়! পৃথিবীর বুকে তাশরীফ আনার পূর্ব হতেই তিনি পরিচিত ছিলেন এবং ভালভাবেই ছিলেন। সেই আগত নবী আগমনের পূর্বেই এমনভাবে পরিচিত হয়েছেন যেমন পিতার কল্যাণে পুত্র পরিচিতি লাভ করেন… শুনুন শুনুন কুরআনে হাকীমে ইরশাদ হচ্ছে-
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি তারা এ নবীকে এমনভাবে চিনে যেমন মানুষ তার পুত্র সন্তানদের চিনে এবং নিশ্চই তাদের একটা দল জেনে বুঝে সত্য গোপন করে । [২]
কুরআনে করীমের সূরা আন’আমে ইরশাদ হচ্ছে-
الَّذِينَ آتَيْناهُمُ الْكِتابَ يَعْرِفُونَهُ كَما يَعْرِفُونَ أَبْناءَهُمُ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ فَهُمْ لا يُؤْمِنُونَ
যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি তারা এ নবীকে চিনে, যেমন তারা আমন সন্তানদের চিনে; যারা আপ্ন প্রাণকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে তারা ঈমান আনেনা । [৩]
এখন তাঁর স্মৃতি (আলোচনার) সকলের অন্তরে গেঁথে গেলে আত্মার সাথে মিশে গেল, তখন অবশ্যই সকলের মুখেই তাঁর আলোচনা হয়েছে , নিজেদের বিপদে তাঁকেই ওসীলা বানিয়েছিল… তাঁকেই নিজেদের আশ্রয় মেনেছিল । কুরআনে এ ব্যাপারে কি ইরশাদ হচ্ছে শুনুন –
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ
এবং এর পূর্বে তারা (ইহুদীরা) সেই নবীর ‘ওসীলা’ ধরে কাফিরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করত, অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত সত্ত্বা তাশরীফ এনেছেন, তখন তাঁকে অস্বীকার করে বসেছে আর আল্লাহর লা’নত প্রত্যেক অস্বীকারকারীর প্রতি ।[৪]
অবশ্যই, কেন হাত পাতব না (তাঁর নিকট), কেনইনা দিন-রাত তাঁর মিলাদ শরীফের আলোচনা ও স্মরণের মাধ্যমে দু’আ করবনা, কেনই বা মাহফিলের আয়োজন করব না, হ্যা, অবশ্যই করব । কেননা মাহফিলের অবস্থা তো কুরআনে হাকীমেই ইরশাদ হয়েছে… মাহফিল আয়োজিত হয়েছে, হাজার হাজার মুসলমান জড়ো হল, একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রদান করা হবে, সকলেই তাজন্যে অপেক্ষমান, সকলে কান পেতে শুনছে, কুরআনে হাকীমে কি ঘোষণা হচ্ছে শুনুন শুনুন-
وَإِذْ قالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يا بَنِي إِسْرائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقاً لِما بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْراةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جاءَهُمْ بِالْبَيِّناتِ قالُوا هذا سِحْرٌ مُبِينٌ
এবং স্মরণ করুন ! যযখন মরিয়ম তনয় ঈসা বললেন, হে বনী ইসরাঈল ! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহরই রসূল; আমার পূর্বেকার কিতাব তাওরাতের সত্যয়নকারী এবং ঐ (সম্মানিত) রসূলের সুসংবাদদাতা হয়ে, যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম আহমদ । অতঃপর যখন আহমদ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে তাশরীফ আনলেন, তখন তারা বলল ‘এতো সুস্পষ্ট যাদু’ । [৫]
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আগত নবী পাকের আগমনের সুসংবাদ শুনিয়েছেন এবং তাতে আনন্দ প্রকাশের রীতিও বাতিয়ে দিয়েছেন । তিনি তাঁর উম্মতদের জন্য রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাত পেতে দু’আ করলেন, হে জমীনে রিযিকদাতা ! আমাদের জন্য আসমান হতে কিছু প্রদান করুন । কুরআনে হাকীমে এর পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা শুনুন আর খুশি উৎযাপনের পদ্ধতি জানুন –
إِذْ قالَ الْحَوارِيُّونَ يا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيعُ رَبُّكَ أَنْ يُنَزِّلَ عَلَيْنا مائِدَةً مِنَ السَّماءِ قالَ اتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (112) قالُوا نُرِيدُ أَنْ نَأْكُلَ مِنْها وَتَطْمَئِنَّ قُلُوبُنا وَنَعْلَمَ أَنْ قَدْ صَدَقْتَنا وَنَكُونَ عَلَيْها مِنَ الشَّاهِدِينَ (113) قالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنا أَنْزِلْ عَلَيْنا مائِدَةً مِنَ السَّماءِ تَكُونُ لَنا عِيداً لِأَوَّلِنا وَآخِرِنا وَآيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ (114) قالَ اللَّهُ إِنِّي مُنَزِّلُها عَلَيْكُمْ
যখন ‘হাওয়ারীগণ’ বলল হে মরিয়ম তনয় ঈসা ! আপনার প্রতিপালক কি এমন করবেন না যে, আমাদের প্রতি আকাশ থেকে একটা ‘খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা’ অবতরন করবেন ? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যদি ঈমান রাখো । (তারা) বলল, আমরা চাই যে, তা থেকে আহার করব এবং তা দ্বারা আমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করবে আর আমরা সচক্ষে দেখে নিব যে, আপনি আমাদেরকে সত্য বলেছেন এবং আমরা সেটার উপর সাক্ষী হয়ে যাব । মরিয়ম তনয় ঈসা আরজ করলেন, হে আল্লাহ, হে প্রতিপালক ! আমাদের জন্য আকাশ থেকে একটা ‘খাদ্য-খাঞ্চা’ অবতারন করুন, যা আমাদের জন্য ঈদ (আনন্দ উৎসব) হবে- আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য এবং আপনারই নিকট থেকে নিদর্শনস্বরূপ। আর আমাদের রিযক দান করুন, আর আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা । আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের জন্য সেটা নাযিল করব । [৬]
লক্ষ্য করুন, আসমান হতে নি’আমতের/খাদ্য খাঞ্চা নাযিল হওয়া যদি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য ঈদ হয় তাহলে কি সকল নি’আমতের মূল আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন কি অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সকলের জন্য ঈদ হবে না কেন ? হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এই নিগুঢ় ভালবাসার মূল রহস্য বোঝার চেষ্টা করুন । ঈদ উৎযাপনের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর নিয়ামতরাজির শুকরিয়া আদায় করা যায় আর তাঁর নি’আমতসমূহ যেন বিস্মৃত হয়ে না যায় । এর দ্বারা এই কথা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহকে ভুলানো সম্ভব নয় । কেননা, যখনই নি’আমতকে স্মরণ করা হবে তখনই নি’আমতদাতাও স্মরণে আসবেন । আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও কুরআনে পাকে বারবার তাঁর নি’আমতের স্মরণের জন্য হিদায়াত করেছেন । [৭] যেমন –
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহর নি’আমতকে স্মরণ কর । [সূরা মায়িদাহ : ১১]
এখন জানের নি’আমত তথা হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুকরিয়া আদায় করা নতুন কিছু নয়, এটাও জরুরী, এই স্মরণ করা মহান আল্লাহর সুন্নাত, নবীগণের সুন্নাত, ফিরিশ্তাদের সুন্নাত, নেককার মুসলমানদের সুন্নাত, রাব্বুল আলামীন নিজেই ইরশাদ করছেন, আমরা বারবার শ্রবণ করি কিন্তু আমল করি না, শুনুন শুনুন ভাল করে শুনুন কি ইরশাদ হচ্ছে –
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا
নিশ্চই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ প্রেরণ করেন । হে ঈমানদারগণ ! তোমরাও দরূদ-সালাম পেশ করো তাঁর উপর । আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের উপর দুনিয়া-আখিরাতে আল্লাহর লা’নত । আর আল্লাহ তাদের জন্য অপমানকর শাস্তি রেখেছেন । [৮]
যারা দরূদ-সালামের জন্য প্রস্তুত নয় তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, আর যারা দরূদ-সালামের জন্য প্রস্তুত তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-
هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا
তিনি এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ তোমাদের উপর দরূদ পড়েন । এই জন্য যে, তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনবে । আর তিনি (আল্লাহ) মু’মিনদের উপর রহমত দানকারী । [৯]
উল্লেখিত আয়াতে দেখা গেল যে, রাব্বুল আলামীন স্বয়ং নিজের হাবীবের স্মরণকারীদের উপর দরূদ পড়েন এবং তাঁর অনুগত ফেরেশ্তারাও দরূদ পড়েন । বস্তুত বুদ্ধিমান জ্ঞানসম্পন্ন লোকদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট ।
প্রত্যেক প্রেমীকই স্বীয় মাহবুবকে স্মরণ তাঁর আলোচনা করার দরুন অন্তরে পুলক ও প্রশান্তি অনুভব করেন । এতে আলোচনাকারীদের প্রতিও ভালোবাসা আসতে থাকে, এটা প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপার । যে এর বিরোধিতা করে সে যাই হোকনা কেন, যেই হোক না কেন প্রেমিক হতে সক্ষম নয় । জ্ঞান-বুদ্ধি ও অন্তর এতাই বলে বারবার । দোন জাহানের বাদশা নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার জন্য তাঁর প্রতি মুহাব্বত রাখা প্রাথমিক শর্ত… এটা আল্লাহর ঘোষণা , খালিক ও মালিক ঘোষণা করেন, শুনুন শুনুন কি ইরশাদ করা হচ্ছে –
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ
আপনি বলুন, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভাইগণ, তোমাদের পত্নীগণ, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের সেই ব্যবসা বাণিজ্য যার ক্ষতি হবার তোমরা আশংকা করো এবং তোমাদের পছন্দের বাসস্থান- এসব বস্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অপেক্ষা তোমাদের নিকট প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত । [১০]
পৃথিবীতে যে সকল বস্তু অন্তরকে আকৃষ্ট করে সবই তো বর্ণনা করা হয়েছে, তবে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য বাকী সব ত্যাগ করে, ভুলিয়ে দিয়ে কেবল তাদেরকেই মনে রাখতে হবে বেশি ভালোবাসতে হবে । কেউ কি প্রেম-ভালোবাসার ইতিহাসে এমনটি শুনেছেন বা পড়েছেন কি যে, কোন প্রেমিক তার প্রিয় মানুষটিকে না নিজে স্মরণ করেছেন না অন্যকে তার স্মরণে বাঁধা প্রদান করেছেন ? আমরা তো এমনটি কোথাও পড়িনি … যে, মাহবুবের আলোচনা শুনে প্রেমিক মুখ কুঁচকে ফেলে, মুখ গোমড়া হয়ে যায়, নাক কুচকায়, নাক ছিটকায়, রাগান্বিত অবস্থায় বিড়বিড় করতে করতে মাহফিল হতে বেড়িয়ে যায়… এতো বড়ই আজব ব্যাপার !
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীদের সুন্নাতের উপর আমল করার আদেশ দিয়েছেন , নেককার মুসলমানদের সুন্নাতের উপর আমল করার হুকুম দিয়েছেন, ফেরেশ্তাদের সুন্নাতের উপর আমল করার হুকুম দিয়েছেন । কোথাও কাফির, মুশরিক, ইহুদী ও নাসারাদের রীতি-প্রথা ও অভ্যাসগুলোকে গ্রহণ ও পালন করার হুকুম দেননি । কিন্তু আজ আমরা সীমালঙ্ঘন করতে কোমর বেঁধেছি । প্রত্যেক কাজকে আমরা নিজেদের তাবেদার বানিয়েছি। কাফির, মুশরিক, ইহুদী ও নাসারাদের বহু কুপ্রথা ও বদঅভ্যাসকে আপন করে নিইয়েছি । তাইতো দেখা যায়, কতগুলি ফেরকাবাজ মোল্লা ইহুদী-নাসারাদের মতী নিজেদের শয়তানী ওয়াছওয়াছা দ্বারা বলতে লাগলো, ইসলামে এসবের [ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পালনের কোন বিধান নেই । নেই এর আওয়াজকে তারা আজ বড় করেছে । ইহুদী-নাসারাদের অভ্যাস অনুসরণ করাকে স্বাভাবিক মেনে তারা সালেহীন উম্মতগণের সুন্নাতকে বাঁধা প্রদান করছে । কোন যুক্তিসংগত কথা মানতে আজ তারা রাজী নয় । এটাই ঈমানের চাহিদা ? না, কখনই না, ঈমানের চাহিদা হল- আল্লাহর হুকুম মানা । আর আল্লাহর হুকুম হলো প্রত্যেক সময় সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মরণ করা, তাঁর উপর দরূদ-সালাম পেশ করা । যেমন করে থেকেন ফেরশ্তা ও নেককার মুসলমানগণ, দাঁড়িয়ে বসে যে অবস্থায় সম্ভব হোক না কেন । এদের অনুসরণেই মুক্তি লাভ করা যায় । আর যারা ইসলামের বিধানে শত্রুতা করবে আমরা ইসলামের স্বার্থে তাদের সাথে শ্ত্রুতা রাখব। আমরা হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা সর্বদাই আন্তরে ধারণ করব । ইহাই হল আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ, একে আমরা সর্বদা সংরক্ষণ করব । আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমীন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন ওয়া আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমায়ীন ।
তথ্যসূত্রঃ
১. আল কুরআন, সূরা আলে ইমরান আয়াতঃ ৮১ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
২. আল কুরআন, সূরা আল বাকারাহ, আয়াতঃ ১৪৬ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৩. আল কুরআন, সূরা আল আন্’আম আয়াতঃ ২০ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৪. আল কুরআন, সূরা আল বাকারাহ, আয়াতঃ ৮৯ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৫. আল কুরআন, সূরা আল সাফ্ফ, আয়াতঃ ৬ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৬. আল কুরআন, সূরা আল মায়িদাহ , আয়াতঃ ১১২-১১৫ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৭. আল কুরআন, সূরা মায়িদাহ: ১১, সূরা আলে ঈমরান : ১০৩, সূরা আ’রাফ :৮৪, সূরা ফাত্বির : ৩ ইত্যাদি দ্রষ্টব্য ।
৮. আল কুরআন, সূরা আল আহযাব , আয়াতঃ ৫৬-৫৭ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
৯. আল কুরআন, সূরা আল আহযাব , আয়াতঃ ৪৩ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
১০. আল কুরআন, সূরা আত তাওবাহ , আয়াতঃ ২৪ অনুবাদ: আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত কানযুল ঈমান ।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.