[দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এখানে]
মূলঃ আল্লামা ঈ’ছামানে আল্ হিময়ারী
জেনারেল ডাইরেক্টর – ওয়াক্ফ ও ধর্মীয় বিষয়ক দপ্তর, দুবাই, ইউ.এ.ই.
ভাষান্তরঃ আল্লামা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন আবিদী।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদঃ হাদীস শরীফের আলোকে
মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালনের পক্ষে হাদীস শরীফেও অসংখ্য প্রমাণাদি রয়েছে, নিম্নে এ বিষয়ে দলীল পেশ করা হলো।
- প্রথম দলীলঃ ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের অন্যতম গ্রন্থ মুসলিম শরীফের প্রণেতা ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উক্ত বিশুদ্ধ গ্রন্থের ২য় খন্ড ৮১৯ পৃষ্ঠায় হাদীস সংকলন করেন-
(আরবী ইবারত)
হযরত ক্বাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে জিজ্ঞেস করা হলো সোমবারের রোযা সম্পর্কে। তিনি এরশাদ ফরমান- এটা এমন গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেদিন এ পৃথিবীতে আমার শুভাগমন ঘটেছে এবং ঐ দিনেই আমার উপর কালামে পাক অবতীর্ণ শুরু হয়েছে।
পবিত্র মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে মাহফিল সাব্যস্থের জন্য উক্ত হাদীস শরীফ এমন এক সুস্পষ্ট প্রমাণ, যা দ্বারা আর অন্য কিছু বুঝানোর অপচেষ্টা চলেনা। বিরুদ্ধবাদীরা এর প্রত্যুত্তরে বলে থাকে যে এটা শুধু রোযা পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। তাদের এ বক্তব্য প্রকাশ্য বিরোধিতা ব্যতীত আর কিছুই হতে পারেনা। নির্দিষ্টকরণের কোন প্রমাণ ব্যতিরেকে অত্র হাদীস শরীফ শুধু রোযা পালনের মধ্যে নির্দিষ্টকরণের অপপ্রয়াস মাত্র। (যা শরীয়তের দৃষ্টিতে জঘণ্যতম অপরাধ)। তা সত্বেও মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন শরীয়ত সম্মত হওয়ার ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান।
হযরত আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহমাতুল্লাহি এ ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেছেন-
(আরবী ইবারত)
অর্থাৎ উক্ত হাদীস শরীফে প্রকৃতপক্ষে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বান্দাদের উপর বিশেষ নেয়ামত যে দিনে অবতীর্ণ করেন ঐ দিনেই রোযা রাখা মুস্তাহাব। (আর একথা সর্বজন স্বীকৃত) এই উম্মতের সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হচ্ছে হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আবির্ভাব, পৃথিবীর বুকে তাঁর শুভাগমন, বিশেষ করে তাঁদেরই প্রতি তাঁর পদচারণা। যেমন ফরমানে ইলাহী- “নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।” (আল ইমরান ১৬৪)
মহান দয়ালু খোদার এই বৃহৎ অনন্ত অনুগ্রহের স্মরণে তাঁর বান্দাহদের রোযা পালন এক উত্তম আমল। কালের বিবর্তনে এই মহা নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে আরো উত্তম পদ্ধতি অবলম্বন করা খুবই মঙ্গলজনক। যেমন- বর্তমানের প্রচলিত নিয়মানুসারে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাঁক জমকের সাথে পালন করা। যাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এই উত্তম ইবাদতের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সন্তুষ্টি ও ভালবাসা অর্জন করা। এ জন্য যে কোন শরীয়ত সম্মতপন্থা অবলম্বন করা যায়। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এতে যেন শরীয়ত বিবর্জিত কোন কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।
- দ্বিতীয় দলীলঃ হাদীস শরীফের মাধ্যমে হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মুহাররম মাসের দশম দিনে রোযা রাখা সাব্যস্ত রয়েছে। হাদীস শরীফটি ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (৭/২১৫পৃ.) এবং ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি(১১৩০নম্বরে) উল্লেখ করেন –
(আরবী ইবারত)
“হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওরায় তাশরীফ আনেন, তখন তিনি ইহুদী সম্প্রদায়কে আশুরা বা মুহাররমের দশম তারিখের রোযা পালন করতে দেখেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)তাদের রোযার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তারা বললো- সেই ঐতিহাসিক দিন যেদিন মহান আল্লাহ্ পাক হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এবং বনী ইসরাঈলদেরকে ফেরআউনের উপর বিজয় দান করেছেন, আমরা সেদিনের সম্মান প্রকাশার্থে রোযা পালন করে থাকি। অতঃপর মাহবুবে খোদা এরশাদ ফরমান- তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা আলাইহিস্ সালাম’র অধিক প্রিয় ও হক্বদার। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকলকে ঐ দিনে রোযা পালনের নির্দেশ প্রদান করেন।”
উপরোক্ত হাদীস শরীফ ঐ মুহুর্তের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য সুস্পষ্ট দলীল। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজর আসক্বলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীস শরীফের আলোকে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নিঃসন্দেহে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন শরীয়ত সম্মত। এ বিষয়ে তাঁর একটি ফতোয়া রয়েছে, যা ইমাম হাফেজ সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “হুছনুল মাক্বাসিদ ফী আমালিল মাওলিদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত রয়েছে “আল্ হাউয়ী লিল ফাতাওয়া” নামক গ্রন্থের ১ম খন্ড ১৯৬পৃষ্ঠায়। তিনি এভাবে দলীল পেশ করেন-
(আরবী ইবারত)
অর্থাৎ – “মহান আল্লাহ্ এই মহা নেয়ামত যেদিন প্রদান করে দুঃখ দুর্দশা লাঘব করতঃ অনুগ্রহ করেছেন এর প্রতি লক্ষ্য রেখে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা খুবই মঙ্গলজনক। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুবিধার্থে প্রত্যেক বছর এই গুরুত্বপূর্ণ দিন সকলের সামনে বারংবার ফিরিয়ে আনা হয়। এই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে আল্লাহ্ তায়ালার পাক দরবারে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন- আল্লাহর দরবারে সিজদা করা, রোযা পালন করা, দান-খয়রাত করা ও কোরআন মজীদ তিলাওয়াত করা। আর সে ঐতিহাসিক দিন যে মুহর্তে তাজেদারে মদীনা হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমন ঘটেছে এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কি হতে পারে ?”
- তৃতীয় দলীলঃ সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম পরস্পরের মধ্যে পূর্ববর্তী আম্বিয়া কেরামের জীবনী আলোচনা করতেন। তখন হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনী আলোচনারও পরামর্শ দেন। কেননা তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম আদর্শ ও পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর অধিকারী। অন্যান্য নবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সেই অমীয় বাণীর বাস্তবায়নের নামান্তর। কেননা, এই পবিত্র মাহফিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবনের সঠিক দিক আলোচনা করা হয়।
ছিহাহ্ ছিত্তার অন্যতম প্রাণপুরুষ ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “তুখফাতুল আহওয়াযি” নামক গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি একে গরীব হাদীস বলেও মত প্রকাশ করেন, ইমাম দারমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থের ১ম খন্ড ২৬পৃষ্ঠায় এবং ক্বাজী আয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শেফা শরীফের ১ম খন্ড ৪০৮পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন-
আরবী ইবারত
“হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কতেক সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বসে রইলেন, হুজুরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকটবর্তী তাশরীফ নিয়ে গেলেন, তখন তিনি শুনতে পান তাঁরা পরস্পর আলোচনায় লিপ্ত। তাঁরা একে অপরকে বলতে লাগল যে- আল্লাহ্ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম’কে খলীলরূপে গ্রহণ করেছেন, অপরজন বললেন আল্লাহ্ পাক মূসা আলাইহিস্ সালাম’কে কালীমুল্লাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, অপরজন বললেন- আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম’কে রূহুল্লাহ্ ও কালেমাতুল্লাহ্ আখ্যা দিয়েছেন, আরেকজন বললেন- আল্লাহ্ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম’কে ছফিউল্লাহ্ রূপে কবুল করেছেন। তখন রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে বললেন আমি তোমাদের আলোচনা শুনেছি সাথে সাথে আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। আল্লাহ্ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম’কে খলীলরূপে গ্রহণ করেছেন, হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম‘কে কালীমুল্লাহরুপে গ্রহণ করেছেন, ঈসা আলাইহিস্ সালাম’কে রূহুল্লাহ্ ও কালেমাতুল্লাহ্ আখ্যা দিয়েছেন এবং হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম’কে ছফিউল্লাহ্ উপাধীতে ভূষিত করেছেন। এগুলো সবই সত্য এবং তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু এ কথা স্মরণ রেখ যে, আমি হাবীবুল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর পরম বন্ধু, আবার এতে আমি গর্বিত নই, আর মহা প্রলয়ের দিন লিওয়ায়ে হাম্দ নামক পতাকা আমার হাতেই থাকবে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এবং অন্যান্য সবাই এর নিচে অবস্থান করবেন, এতে আমি গর্ববোধ করছিনা, ক্বিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম আমিই শাফায়াতকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করব আর আমার শাফায়াতই গ্রহণ করা হবে, এতেও গৌরাবান্বিত নই, আর জান্নাতের দরজায় প্রথমে আমিই করাঘাত করবো, তা আমার জন্য সর্বাগ্রে উম্মুক্ত করা হবে। অতঃপর আমি আমার ঈমানদার অভাবগ্রস্থ উম্মতদের নিয়ে প্রবেশ করব, এতেও গর্ব করার কিছুই নেই এবং আমি পূর্বাপর সকলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, এর উপরও আমি গর্বিত নই।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদীস শরীফটি সনদের দিক থেকে শক্তিশালী এর সমর্থনে আরো হাদীস শরীফ রয়েছে, ইমাম বায়হাক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উল্লেখযোগ্য ‘দালাইলুন্ নাবুয়্যত’ নামক গ্রন্থের ৫ম খন্ড ২৭০পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফে উক্ত হাদীস শরীফ বিদ্যমান।
উল্লেখিত বর্ণনা সাহাবী কর্তৃক হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র জীবনী আলোচনা দ্বারা দৃঢ়তা প্রমানিত হয়। আর তা হলো হযরত কা’বউল আহবার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা’র নিকট মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শ্রেষ্ঠত্বের যে আলোচনা করেছেন, আর সে ধরণের গুণাগুণ শুধুমাত্র তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র) জন্যই প্রযোজ্য। হযরত কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রত্যেক সকালে সত্তর হাজার ফেরেস্তার ডানা দ্বারা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‘র) মাযারে আক্বদাছ আচ্ছাদিত হয় আর ঐ ফেরেশতাগণ তাঁর উপর দরুদ পাঠ করেন, যতক্ষন না সন্ধা ঘনিয়ে আসে। আর যখন সন্ধা হয়ে আসে তখন তাঁরা উর্ধ্ব জগতে পাড়ি জমান এবং সত্তর হাজার বিশিষ্ট আরেক দল ফেরেশতার শুভাগমন ঘটে তাঁরা ও পর্ববর্তী ফেরেশতাগণের ন্যায় কার্য সম্পাদন করেন। এভাবে দিবা-রাত্রি সত্তর হাজার ফেরেশতা রওজায়ে পাকের যিয়ারতের মাধ্যমে নিজেকে ধন্য করে থাকেন। শুধু তাই নয় মাটির নিচ থেকেও সত্তর হাজার ফেরেশতা বেরিয়ে খুবই বিনয়ের সাথে আগমন করতঃ তারঁ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকেন। উক্ত হাদীস খানা কাজী ইছমাঈল ইবনে বস্কোয়াল বর্ণনা করেছেন, ইমাম বায়হাক্বী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ‘শো’আবুল ঈমান’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। দারমী নামক গ্রন্থেও রয়েছে, আর ইবনুল মোবারক ‘রাক্বায়েক্ব’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য যে উক্ত হাদীস শরীফটি বিশুদ্ধ।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন “ফাদ্বলুচ্ছালাত আলান্ নাবী”অংশের ৮৩-৮৪পৃষ্ঠা ১০২ পৃষ্ঠা ইবনুল মোবারকের পদ্ধতিতে, এতে ইবনে লুহায়’আ ঐ হাদীসের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ইমাম দারমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর ‘সুনান’ ১ম খন্ডের ৪২০পৃষ্ঠা অন্য পন্থায় বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর সনদে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত রয়েছে ‘আল্ ক্বউলুল বদী’ নামক গ্রন্থের ৫২পৃষ্ঠায়।
- চতুর্থ দলীলঃ হাফেজ ইবনে নাছির উদ্দীন আদ্ দামেশক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘মাওরিদুচ্ছাদী ফী মাওলিদিল হাদী’ নামক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থে বর্ণনা করেন নবীয়ে দো’জাহাঁ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মীলাদের কথা শুনে আবু লাহাব খুশীতে আত্মহারা হয়ে স্বীয় দাসী ছুওয়াইবাকে আযাদ করার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার তার কবরের শাস্তি লাঘব হওয়ার হাদীসটি বিশুদ্ধ। অতঃপর ছন্দাকারে বলেন-
(আরবী ইবারত)
অর্থাৎ – কাফেরের (আবু লাহাব) সাথে যেখানে এ ধরণের আচরণ, যার শত্রুতা এবং ধ্বংসের বর্ণনা কোরআন মজীদে রয়েছে, আর যে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অর্থাৎ তার অবস্থা এরূপ করুণ হওয়া সত্ত্বেও মীলাদুন্নবীর আনন্দ প্রকাশের কারণে প্রত্যেক সোমবার তার শাস্তি হালকা করা হয়। এখন ঐ সৌভাগ্যবান নবীপ্রেমিকদের উত্তম প্রতিদান কি হতে পারে, যে জীবনের প্রত্যেকটি মুহর্ত মীলাদুন্নবী’র আনন্দে উল্লাসে অতিবাহিত করে থাকেন এবং আল্লাহর একত্ববাদের উপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
কোরআন মজীদে বর্ণিত রেকর্ডভুক্ত চিরস্থায়ী জাহান্নামী যদি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমনের আনন্দ প্রকাশের ফলে কবরের কঠিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে, অপরদিকে যারা এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতঃ খুশীর ঢেউয়ে আত্মহারা হয় সাফল্যের আয়োজন করার মাধ্যমে তা প্রকাশ করেন, তাঁদের শুভ পরিণাম কি হতে পারে?
একই ভাবে মতামত ব্যক্ত করেছেন হাদীস ও ক্বারী সম্রাট হাফেজ শামসুদ্দীন ইবনে আলজযরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘ঊরফুত্ তা’রীফ বিল মাওলিদিস্ শরীফ’ নামক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থে। এতে তিনি দৃঢ়তার সাথে এর সত্যতা বর্ণনা করেন।
(চলবে)