মুহাম্মদ গোলাম হুসাইন
ইয়াজিদ সম্পর্কে সবচেয়ে বড় যেই সাক্ষ্যটি এসেছে, সেটি তার নিজ ঘর হতেই। নিজ ঔরসজাত ছেলের চেয়ে পিতা সম্পর্কে কে-ই বা অধিক জানতে পারে ! আর ছেলেও তো সেই পর্যায়ের, যে কিনা অত্যন্ত সৎকর্মশীল ছিল। এখন দেখুন, মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ(ইয়াজিদের ছেলে মুয়াবিয়া) আপন পিতা ইয়াজিদ সম্পর্কে কি সাক্ষ্য দেয়, যখন ইয়াজিদের এই নেক্ সন্তান মুতাওয়াল্লী হলেন, তখন সে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে নিজ পিতা সম্পর্কে যেই জবানবন্দি দিয়েছে, সেটি হল এই যে-
“আমার বাবা যদিওবা রাষ্ট্রভার হাতে নিয়েছিল, কিন্তু সে সেটার উপযুক্ত-ই ছিল না। সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নাতির সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। অবশেষে তার(ইয়াজিদের) আয়ু ফুরিয়ে আসলো এবন জীবন প্রদীপ নিভে গেল। এখন সে তার কবরে নিজ গুনাহের দায়-দায়িত্ব নিয়ে দাফন হয়ে গিয়েছে”।
এ কথাগুলো বলে সে(মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন-
“যে বিষয়টা আমাদের উপর সবচাইতে অধিক কষ্টদায়ক হয়েছে, সেটা হচ্ছে এই যে- এই কৃত কর্মের খারাপ পরিণতি এবং ভয়ংকর শাস্তি আমাদের জ্ঞাত আছে(আর তা কেনই বা নয়, যেখানে কিনা) সে(ইয়াজিদ) প্রকৃতপক্ষেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নাতিকে শহিদ করেছে, মদ্যপানকে মুবাহ(যেটা করলে সাওয়াব বা গুনাহ কোনটি-ই হয় না) করেছে, বাইতুল্লাহ শরিফকে তছনছ করেছে এবং আমি খিলাফতের স্বাদ-ই গ্রহণ করি নাই, তবে কেন তার(ইয়াজিদের) তিক্ততাকে বহন করবো ? এজন্যই তোমরা তা জেনে রেখো এবং এটাই তোমাদের কাজ। আল্লাহর শপথ ! যদি দুনিয়ায় আজ কল্যাণ থাকে, তাহলে আমরা তার বড় একটা অংশকে অর্জন করে ফেলেছি এবং যদি অনিষ্টতার মধ্যে থাকে, তবে যা কিছু আবু সুফিয়ানের সন্তান(ইয়াজিদ) দুনিয়া হতে অর্জন করেছে, সেটাই যথেষ্ট(অর্থাৎ দুনিয়ার আজকের এই অনিষ্ট অবস্থার জন্য দায়ী আবু সুফিয়ানের আওলাদ ইয়াজিদ) [আস্ সওয়াকে মুহরিকা, পৃষ্ঠা ১৩৪, মিশর হতে মূদ্রিত]
ইয়াজিদ সম্পর্কে ধারনা পাবার জন্য ইয়াজিদ পূত্র মুয়াবিয়া’র বক্তব্য বা জবানবন্দি-ই যথেষ্ট; যার মধ্যে সে সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্টতার সাথে বলে দিয়েছে যে, ইয়াজিদ কেমন ছিল, সে কি কি কুকর্ম করেছিল এবং তার পরিণতি এবং শাস্তি পরকালে কি হবে। এরপরও কেউ যদি ইয়াজিদ প্রীতিতে মত্ত থাকে, তবে সেটার পরিণতি ভোগ করার জন্য তার প্রস্তুত থাকা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা আহলে বাইতের ভালবাসা এবং ইয়াজিদের প্রতি ঘৃণাকে আমাদের অন্তরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি দান করুন। আমিন, বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন।