ইসলামে শিশুর অধিকার

আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী

[বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু লা সাইয়্যিদিল মুরসালিন ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাহবিহী আজমাঈন,আম্মা বাদ]

আজকের শিশু আগামী প্রজন্মের নাগরিক। আজ যারা ছোট, কাল তারা হবে বড়। ভবিষ্যতে তারাই হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার। তাই এ শিশু-কিশোরেরা অনাদর ও অবহেলায় অধিকার বঞ্চিত হয়ে বড় হলে ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নেমে আসবে চরম অশান্তি ও বিশৃংখলা।

সন্তান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিশ্ব মানবতার জন্য এক বিশেষ দান ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক, শ্রেষ্ঠ সম্পদ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পবিত্র কুরআনে শিশুদেরকে পার্থিব জীবনের সৌভাগ্য, সর্বশ্রেষ্ঠ সুসংবাদ ও চোখের প্রশান্তিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে; “ধনৈশ্বর্য এবং সন্তান সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।”(কাহ্ফ-৪৬)। ‘এবং যারা কামনা করে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দান করো এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি যারা হবে আমাদের জন্য নয়নের শীতলতা এবং আমাদেরকে করো মুত্তাকীদের ইমাম।’(সূরা ফুরকান-৭৪ )

ইসলাম শিশু-কিশোরদের অনেক অধিকার দিয়েছে। শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষায় প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের সুমহান জীবনাদর্শের মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য রেখে গেছেন অধিকার সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা। তাদের জন্ম থেকে শুরু করে জীবন চলার পথে আরো অনেক অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। তাই শিশু কিশোরদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আচরণ ছিল অধিক মমতাপূর্ণ।

# শিশু অধিকার বলতে কি বুঝায় ?

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা‘র হাদীস অনুসারে একটি শিশুর জন্মের আগ থেকেই তার অধিকার শুরু হয়ে যায়। তাই ইসলামে শিশু অধিকার বলতে বুঝায়, যে অধিকারসমূহ শিশু মায়ের গর্ভে থাকা থেকে শুরু করে কৈশোর বা শৈশব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আমরা যখন আমাদের জন্য একজন জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচন করতে যাই তখন থেকেই শিশুর প্রতি আমাদের দায়িত্ব শুরু হয়ে যায়। কেননা, শিশুদেরও অধিকার রয়েছে অধিকতর সৎ এবং মহৎ মা-বাবা লাভ করার; যারা তাদেরকে সত্যিকার ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু  আনহু এর মতে, শিশু অধিকার শিশু জন্মের পূর্ব থেকেই শুরু হয়ে যায়। একবার হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু  আনহু-এর শাসনামলে তাঁর কাছে শিশু অধিকার সর্ম্পকিত একটি অভিযোগ এলে তিনি শিশুর তিনটি হক বা অধিকারের কথা বলেছেন।

  • ১ম অধিকার হল: তার পিতা একটা ভাল মায়ের ব্যবস্থা করবে। এটা এজন্য যে, ভাল মায়ের গর্ভে ভাল সন্তান হয়। তাই ভাল সন্তান চাইলে তার জন্য একটা ভাল মায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ২য় অধিকার হল: সন্তানের ভাল নাম রাখতে হবে। কেননা ভাল নামের ভাল প্রভাব হয়, খারাপ নামের খারাপ প্রভাব হয়। এজন্যেই ইসলাম ভাল অর্থপূর্ণ নাম রাখতে গুরুত্বারোপ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র কাছে এমন কেউ যদি আসতেন যার নামের অর্থ খারাপ। তিনি তার ঐ নাম পরিবর্তন করে একটা ভাল অর্থপূর্ণ নাম রেখে দিতেন।
  • ৩য় অধিকার হল: পিতা-মাতা তাকে দ্বীন শিক্ষা দিবে। ইসলামের চেতনা আসে এ ধরনের কথাবার্তা শিখাতে হবে।

# নবজাতকের কানে আজান দেওয়া:

প্রত্যেক নবজাতকের সর্বপ্রথম অধিকার হল জন্মগ্রহণের অব্যবহিত পরেই তার কানে আযানের শব্দমালা উচ্চারণ করা। শিশুকে সর্বপ্রথম যে শব্দগুলো শুনতে হবে তা হল, আল্লাহ তার প্রভু এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসূল। আবু রাফায়ী রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, যখন ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু  আনহা হাসান রাদিয়াল্লাহু  আনহু কে প্রসব করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কানে আজান দেন। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবজাতকের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামতের আদেশ দিয়েছেন। (তাবরানি)

# নবজাতকের নামকরণ:

শিশুর আরেকটি মৌলিক অধিকার হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেয়া। আমাদের সমাজে বর্তমানে এ বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না। প্রায়ই দেখা যায়, ছেলেমেয়েদের অর্থহীন নাম দেয়া হচ্ছে। অথচ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ওপর খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামে পিতা-মাতাদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে তারা সন্তানকে একটি সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম উপহার দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সুন্দর নাম রাখার জন্য পিতা-মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ধরে এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমাদের সন্তানদের ভাল নাম রাখো। (আহমদ, আবু দাউদ) এটিও রাসূলের সুন্নাহ যে, যদি কেউ কোন শিশুর একটি খারাপ নাম কিংবা কোন অবাঞ্চিত নাম রাখে তবে তিনি তা পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখতেন। ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি. বর্ণনা করেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু  আনহু এর এক কন্যার নাম ছিল আসিয়া এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জামীলা।

# তাহনিক ও দোয়াঃ

নবজাতকের তৃতীয় সুন্নত কাজ হলো ‘তাহনিক’অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে সে চর্বিত খেজুরের কিছু অংশ নবজাতকের মুখে লাগানো, যাতে এর কিছু রস তার পেটে পৌঁছে যায়। খেজুর না পেলে মিষ্টি দ্রব্য দিয়েও তাহনিক করা যায়। আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিয়াল্লাহু  আনহু জন্ম গ্রহণ করেন তিনি তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যান। তিনি তাকে কোলে ওঠিয়ে নেন, একটি খেজুর চিবান এবং চর্বিত খেজুরের একটি অংশ তার মুখে রাখেন। অতঃপর তিনি তার জন্যে দোয়া করেন। (বুখারি, মুসলিম)

# আকিকা প্রদান:

আকিকা ইসলামের একটি তাৎপর্যমণ্ডিত সুন্নত। সাধ্য সাপেক্ষে পালন করা মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব। শিশুর উত্তম আদর্শময় নিরাপদ জীবন আকিকার দায়ে আবদ্ধ থাকে। আকিকার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি শিশু তার আকিকার দায়ে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করা হবে, তার নাম রাখা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডিত করা হবে।’ (তিরমিজি, আহমাদ ও নাসায়ী)

উম্মে কারাজ রাদিয়াল্লাহু  আনহা বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, নবজাতক ছেলে হলে দুটি ছাগল এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল জবাই করতে হবে। ছাগল চাই পুরুষ জাতীয় হোক কিংবা স্ত্রী জাতীয়। (আবু দাউদ, নাসায়ী)

ছেলের জন্য দুটি ছাগল জবাই করা এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা মুস্তাহাব। যে কোন নবজাতকের জন্য কেবল একটি মাত্র ছাগল জবাই করারও অনুমতি রয়েছে। আকিকা কেবল নবজাতকের অধিকারই নয়, বরং তা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। আকিকার গোস্ত পরিবারের সদস্য ও বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে বিলি বন্টন করা হয়। এটি পুরো সমাজের মধ্যে একটি আনন্দ ও খুশির উপলক্ষ নিয়ে আসে।

# মায়ের দুধ আল্লাহর খাস নেয়ামত:

মায়ের দুধ পান শিশুর জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ কারণে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশই দেননি, সুনির্দিষ্টভাবে সময়কালও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। “আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। (সূরা আল বাকারা,আয়াত ২৩৩) বুকের দুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন যেমন শিশুর অধিকার নিশ্চিত করেছেন, তেমনি নিশ্চিত করেছেন মায়ের অধিকার। এমনকি মায়ের অবর্তমানে বা অক্ষমতার কারণে যে মা শিশুকে দুধ পান করাবে সেই দুধ মায়ের অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং শুধু মায়ের কর্তব্য হিসেবেই নয়, ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবেও শিশুদের বুকের দুধ পান করানো মায়েদের উচিত। মায়ের দুধ শিশুর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত।

# শিশুর সর্বপ্রথম শিক্ষা:

পিতামাতা তাদের নবজাতককে তাদের জীবনের প্রথম কথা হিসেবে শিক্ষা দিতে হবে কালিমা তাইয়িবা “লা ইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ“ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু  আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ছেলেমেয়েদেরকে জীবনের সর্বপ্রথম উচ্চারিত শব্দ হিসেবে লা ইলাহা ইল্লাহ’ (কালিমা তাইয়িবা) শিক্ষা দাও এবং মানুষকে তাদের মৃত্যুর পূর্বে অনুরূপ বলতে নির্দেশনা দাও। (বায়হাকি)

# উত্তম গুণাবলী শিক্ষা দান:

শিশু বয়সে ইলম শিক্ষা পাথরের উপর অংকনের মত স্থায়ী, আর বৃদ্ধ বয়সে ইলম শিক্ষা পানির উপর দাগ টানার মত অস্থায়ী [বায়হাকী ও মাকাসেদুল হাসানা]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মাতা-পিতা সন্তানের জন্য যা রেখে যায় বা যা উপহার দেয় তার মধ্যে সবচেয়ে ভাল উপহার হল উত্তম আদব।“(তিরমিযী) আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা দান করবে এবং তাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলীতে সজ্জিত করবে। (আবু দাউদ)

দান করা একটি সওয়াবের কাজ। কিন্তু ছেলেমেয়েদেরকে সৎ চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা দেওয়া ইসলামে তার চেয়েও অধিক সওয়াবের কাজ। হজরত সাদ ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির তার সন্তানকে সৎ-চরিত্র ও গুণাবলী শিক্ষা দেয়া এক সা (ওজন পরিমাপের একটি) পরিমাণ দান করার চেয়েও উত্তম। (তিরমিযি) আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতক শিশুই ফিতরাত’ (ইসলাম) এর উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে খৃস্টান, ইয়াহুদী কিংবা অগ্নিপুজারী করে গড়ে তোলে। আমাদের সবার এ কথা মনে রাখতে হবে যে, শিশুরা হচ্ছে মাতা-পিতার নিকট রক্ষিত আমানত। আর এ আমানত সম্পর্কে আখেরাতে তাদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সবাই ধর্মোপদেশক এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দলের বা নির্ভরশীলদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (বুখারি, মুসলিম)

# মিথ্যা ওয়াদা না করাঃ

শিশুদের কোমল ও পবিত্র মনে যদি একবার কোনো খারাপ ধারণা প্রবেশ করতে পারে, তবে তা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে থেকে যায়। তাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশু-কিশোরদের সঙ্গে খেলাচ্ছলেও মিথ্যা বা প্রতারণা করতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে বসা ছিলেন। এমন সময় আমার মা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে কিছু দেয়ার ওয়াদা দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি দিতে ইচ্ছা করেছেন? আমার মা জানালেন যে, তিনি আমাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছে করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যদি তুমি একটি মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে তোমার সন্তানকে আহবান কর, তবে তা তোমার আমল নামায় একটি মিথ্যা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে। (মুসলিম)

# নামাজের আদেশ প্রদান:

আমাদের অধিকাংশ অভ্যাসই সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে গড়ে ওঠে। যদি পিতামাতা এ সময় তাদের ছেলে মেয়েদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিতভাবে আদায়ের শিক্ষা প্রদান করে, আশা করা যায় তা তাদের জীবনে স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সাত বছর হলে নামাজের আদেশ প্রদান কর এবং তারা দশ বছর বয়সে উপণীত হলে এজন্য তাদেরকে প্রহার কর (যদি তারা নামাজ না পড়ে) এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।” (আবু দাউদ)

# কোরান মাজিদ শিক্ষা দেওয়া:

পিতামাতার উচিত তাদের সন্তানদেরকে কোরান মাজিদ শিক্ষা দেওয়া এবং কোরান মাজিদের যথার্থ জ্ঞান দান করা। মু’আয জুহাইনি রাদিয়াল্লাহু  আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“যে ব্যক্তি কোরান মাজিদ শিক্ষা করবে এবং তার নির্দেশনা মেনে চলবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে তার পিতামাতাকে তাজ পরিধান করাবেন। যার উজ্জ্বলতা সূর্য থেকেও অধিক হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করে বলেন, তার নিজের জন্য তোমরা কি প্রতিদান আশা কর? (আবু দাউদ, আহমদ)

# প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের সাথে সমতাসুলভ আচরণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলে ও মেয়ে সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য না দেখানোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রেখ।’ (বুখারি ও মুসলিম ) অসমতার কিংবা অন্যায্য আচরণ করা ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধ। নুমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা তার পিতা তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যান এবং তাকে জানান যে, তিনি আমাকে একটি ক্রীতদাস দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তার সকল ছেলেমেয়েকে একটি করে ক্রীতদাস দিয়েছেন কিনা। আমার পিতা উত্তর দিলেন, তিনি তেমনটি করেন নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহর প্রতি তোমার কর্তব্যকে স্মরণ রেখ এবং তোমার সকল ছেলেমেয়ের ব্যাপারে তাকে ভয় কর। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি একটি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য হতে চাই না।’ (বুখারি, মুসলিম)


Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

মাদকাসক্তি ও আমাদের করণীয়

আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী [বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ওয়াস সালাতু ওয়াস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from RoushanDAlil.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading