শায়খ সৈয়দ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে। তাঁরই ওফাত শরীফের পর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী আলিম-ওলামা একইভাবে জাগতিক ভোগবিলাস, মূর্খতা ও অজ্ঞতায় নিমজ্জিত পথহারা মানুষদেরকে সঠিক পথ তথা জ্ঞান ও ঈমানের সন্ধান দিয়ে চলছেন যুগযুগ ধরে। তাই প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন-
ان العلماء ورثة الأنبياء وأن الأنبياء لم يُورثوا دينارا ولادرهما أنما ورثوا العلم فمن أخذ به اخذ بحظ وافر-
‘‘আলিমগণ হলেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি; বরং রেখে গিয়েছেন জ্ঞান বা ইলমকে। সুতরাং যারা এ জ্ঞানকে গ্রহণ করবে সে যেন এ মিরাছের সিংহভাগের অধিকারী হলো।[তিরমিজী, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ] আর যে সমস্ত মহান মনিষী যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের মশাল হাতে নিয়ে বিশ্বব্যাপি জ্ঞানের আলো বিতরণ করে আসছেন, যুগের মহান সংস্কারক ইমাম আহমদ রেজা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাদের অন্যতম।
তিনি তাঁর সুচিন্তিত মতামত জ্ঞানগর্ভ চিন্তাধারা ও ক্ষুরধার লিখনির মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নব জাগরণ সৃষ্টি করেন। যার জীবন্ত প্রমাণ বহন করছে তাঁর রচিত সহস্রাধিক গ্রন্থ-পুস্তক।
তিনি শুধুমাত্র গবেষণা, ফতোয়া ও পুস্তকাদি রচনায় আত্মনিয়োগ করেননি; বরং সমকালীন বিশ্বের ঘটনা প্রবাহ ও চলমান রাজনৈতিক, সমাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।
তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমেরিকার জ্যোতিষীর বিশ্বব্যাপি আতংক ছড়ানো সেই ‘কিয়ামতের পূর্বাভাস’ এর যৌক্তিক খণ্ডন ও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল প্রমাণিত করতে। তাই তিনি তার সময়ে সৃষ্ট বিভিন্ন ফিতনা-ফেরকা, মতবাদ ও বিভ্রান্তির যথাযথ জবাব প্রদানে সদা তৎপর ছিলেন।
১৯০১ সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ ইং) নিজেকে নবী দাবী করলো, তখন ইমাম আহমদ রেজা তার এই ভ্রান্ত মতবাদ খণ্ডনে স্বতন্ত্র পাঁচটি পুস্তক রচনা করেন-
– جزا الله عدوه بأباءه ختم النبوة.١
السوء والعقاب على المسيح الكذاب-. ٦
قهر الديان على مرتد بقاديان- . ٣
المبين ختم النبيين- . ٤
الجراز الديانى على المرتد القاديانى- . ٥
উল্লেখ্য যে, الجراز الديانى ইমাম আহমদ রেজার সর্বশেষ কিতাব, যা তিনি ইন্তেকালের কয়েকদিন পূর্বে লিখেছেন। তদ্রুপ তিনি স্যার সৈয়দ আহমদ (১৮১৮-১৮৯৮ ইং)’র দাহরিয়া মতবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। الألة القاهرة فى الرد على الكفرة النياشرة- সহ আরো অনেক পুস্তকাবলী রচনা করেন।
এমনিভাবে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ যখন আল্লাহ্ তা’আলা, তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, পবিত্র ক্বোরআন ও সাহাবায়ে কেরামকে (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম) নিয়ে ঈমান বিধ্বংসী নানা মন্তব্য করতে লাগল তখন তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেন-
الأدلة الطاعنة فى أذان الملاعنة- .١
مطلع القمرين فى أبانة سبقة العمرين- .٦
غاية التحقيق فى أمامة على والصديق-.٣
اعالى الأنادة فى تعزية الهند و بيان الشهادة-.٤
رد الرفضة- .٥
সহ প্রায় ২০টির অধিক কিতাব।
অনুরূপভাবে যখন তাসাউফের নামে কিছু সংখ্যক লোক শরিয়ত নির্দেশিত কর্মকাণ্ডকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে এবং বলছে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কিছু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ইসলামের মূল হল একমাত্র তরিকত। তাদের বিভ্রান্তি স্বরূপ উম্মোচন করে তিনি লিখেছেন-
مقال عرفاء باعزاز شرع وعلماء-.١
نقاء السلاقة فى أحكام البيعة والخلافة-.٦
كشف حقائق واسرار دقائق- .٣
الياقوتة الواسطة فى قلب عقد الرابطة-.٤
সহ আরো অনেক পুস্তক। যা তাসাউফ’র প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরার পাশাপাশি তাসাউফের নামে ভন্ডামীর খোলস খুলে দেয়।
এ ছাড়াও যে সমস্ত খ্রিস্টান মিশনারী সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রচার করে মুসলিম যুব সমাজকে ঈমান ও পবিত্র আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে কলম সম্রাট ইমাম আহমদ রেজা কলমের জেহাদ করেছেন-
ندم النصرانى والنفسيم الأيمانى-.١
سيف المصطفى على أديان الافتراء- .٦
কিতাবদ্বয় তার বাস্তব সাক্ষ্য বা প্রমাণ। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তাঁর কলমের জেহাদ অব্যাহত রেখেছেন। ঐ সমস্ত সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যারা ইসলামের মুখোশ পরিধান করে ইংরেজদের কৃপা ও অনুগ্রহ পাবার আশায় ইসলামকে বিকৃত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের সেই ঘৃণ্য অপকর্মের স্বরূপ উম্মোচন করে দিয়ে তিনি বিশ্ব মুসলিম জাতিকে তাদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে সদা সচেষ্ট ছিলেন।
এককথায় ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র জীবদ্দশায় যখনই কোন ফিতনার উদ্ভব হয়েছে সাথে সাথে তিনি তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন এবং সেই ফিতনার মূল চেহরার সাথে বিশ্ব মুসলিমকে পরিচয় করে দিয়েছেন। যার ফলে অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা পোষণকারী ও নবনব ফিতনার জন্মদাতারা ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হির কলমের ভয়ে নিজেদের বদ-আক্বিদা প্রকাশ করার সাহস করেনি।
তাঁর এ মহান সংস্কার মূলক কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত উপমহাদেশ সহ আরব ও আফ্রিকার বরণ্য আলেমগণ তাঁকে ‘‘মুজাদ্দিদ’’র উপাধিতে ভূষিত করেন।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.