মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন –
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِد
আর স্ত্রীদের শরীর স্পর্শ করবে না যখন তোমরা মসজিদগুলোতে ই’তিকাফরত থাকো ।[১]
আরও ইরশাদ হচ্ছে,
وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে (আলাইহিমুস সালাম) তাগিদ দিয়েছিলাম যে, আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো ।[২]
ই’তিকাফ এর পরিচয়
ই’তিকাফ মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি মহান নিমিত্ত । মসজিদে আল্লাহর ওয়াস্তে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাই ই’তিকাফ । ই’তিকাফ অর্থ হল – বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতা, মসজিদে অবস্থান।[৩]
- ইমাম আবুল হুসাইন আহমদ ইবনে মুহম্মদ আল কুদূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –
وَهُوَ اللَّبْثُ فِي الْمَسْجِدِ مَعَ الصَّوْمِ وَنِيَّةِ الِاعْتِكَافِ
রোজা অবস্থায় ই’তিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাই ই’তিকাফ ।[৪]
- ইমাম ওবায়দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
لبث صائم في مسجد جماعةٍ بنية وهو
ই’তিকাফ হল, জামাতে নামায আদায় হয় এমন মসজিদে রোজাদারের ই’তিকাফের নিয়তে অবস্থান করা ।[৫]
রমজান মাসের শেষ দশদিন মসজিদে ই’তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।[৬] ৬- দুররুল মুখতার, হিদায়া, আলমগীরি। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশদিন নিয়মিত ই’তিকাফ পালন করেছেন।তাই তাঁর নিয়মিত আমল থেকেই তা সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত হয় । এই ই’তিকাফের উদ্দেশ্যে রমজানের বিশ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বেই নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। এটি আদায় করতে হবে,আর কেউ আদায় না করলে সকলে গুনাহগার হবে। মহল্লা/শহরের মসজিদে অন্তত একজন আদায় করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে। এছাড়া মান্নতের ই’তিকাফ ওয়াজিব এবং অন্যান্য ই’তিকাফ মুস্তাহাব ও সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ ।[৬]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র ই’তিকাফ
- উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন।[৭]
- উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন, এমনকি তা ততক্ষণ ছিল যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওফাত দান করেছেন এবং এরপর তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণও ই’তিকাফ করেছেন।[৮]
- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয় –
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। আর যে বছর তাঁর বেসাল মুবারক হয় সে বছর তিনি বিশ দিন ই’তিকাফ করেন।[৯]
- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ই’তিকাফ করতেন।[১০]
ই’তিকাফের ফযিলত
- দুই হজ্ব ও ওমরার সাওয়াবঃ
হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنِ اعْتَكَفَ عَشْرًا فِي رَمَضَانَ حَجَّتَيْنِ وَعُمْرَتَيْنِ
যে রমযান মাসে শেষ দশ দিনে ই’তিকাফ করল, সে যেন দুইটি হজ্জ্ব ও দুইটি উমরা আদায় করল।[১১]
- নেকী লাভঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই’তিকাফকারী সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ، وَيُجْرَى لَهُ مِنَ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا
ই’তিকাফকারী নিজেকে গুনাহসমূহ হতে বিরত থাকে এবং নেককারদের সকল নেকী তার জন্য লিখা হয়।(অর্থাৎ সে বাইরে থাকলে যে সকল নেক কাজ করত এগুলোও তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হয়।[১২]
- জাহান্নাম হতে তিন খন্দক পরিমাণ দূরে রাখেঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَمَنِ اعْتَكَفَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ ثَلَاثَ خَنَادِقَ، كُلُّ خَنْدَقٍ أَبَعْدُ مِمَّا بَيْنَ الْخافِقَيْنِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় মাত্র একদিনের জন্য ই’তিকাফে থাকবে, আল্লাহ পাক তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। এক একটি খন্দকের গভীরতা হলো আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের অধিক।[১৩]
- আল্লাহর অনুগ্রাহী হওয়াঃ
তাবেঈ হযরত আতা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
إِنَّ مَثَلَ الْمُعْتَكِفِ مَثَلُ الْمُجرِمِ أَلْقَى نَفْسَهُ بَيْنَ يَدَيِ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ: وَاللهِ لَا أَبْرَحُ حَتَّى تَرْحَمَنِي
ই’তিকাফকারীর উদাহরণ হল ঐ অপরাধীর ন্যয়, যে রহমান রবের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে আরজ করে আল্লাহর শপথ! যতক্ষণ না আমি আপনার রহমতের ভাগী হব ততক্ষণ আমি যাব না ।[১৪]
ই‘তিকাফের শর্ত ও আহকাম
- হাদীস শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত-
السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ: أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً، وَلَا يَمَسَّ امْرَأَةً، وَلَا يُبَاشِرَهَا، وَلَا يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ، إِلَّا لِمَا لَا بُدَّ مِنْهُ، وَلَا اعْتِكَافَ إِلَّا بِصَوْمٍ، وَلَا اعْتِكَافَ إِلَّا فِي مَسْجِدٍ جَامِعٍ
ই’তিকাফ পালনকারীর জন্য এই সুন্নাত পালন করা আবশ্যক, সে যেন কোন রোগীকে দেখতে যাবে না, জানাযার নামাযে শরীক হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না এবং তার সাথে সহবাস করবে না। আর সে যেন বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ হতে বের না হয়। রোযা ব্যতীত ই‘তিকাফ হয় না এবং জামে মসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ শুদ্ধ নয়।[১৫]
- আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –
وَالْكَوْنُ فِي الْمَسْجِدِ وَالنِّيَّةُ مِنْ مُسْلِمٍ عَاقِلٍ طَاهِرٍ مِنْ جَنَابَةٍ وَحَيْضٍ وَنِفَاسٍ شَرْطَانِ
ই’তিকাফের শর্ত দু’টি , ১. মসজিদে ই’তিকাফ করা। ২. নিয়ত করা এমন অবস্থায় যে, ই’তিকাফকারী মুসলিম,প্রাপ্তবয়স্ক, হায়জ ও নিফাসের অপবিত্রতা হতে পবিত্র হবে ।
তবে ই’তিকাফের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত নয় । নাবালেগ যে ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে ও নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান করে তবে বৈধ হবে । এমনিভাবে স্বাধীন হওয়াও শর্ত নয় । গোলাম ই’তিকাফ করতে পারবে তবে মনীবের অনুমতি লাগবে ।[১৬]
- ইমাম আবুল হুসাইন আহমদ ইবনে মুহম্মদ আল কুদূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –
১. ই’তিকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস, স্পর্শ ও চুম্বন হারাম ।
২. এর ফলে বীর্যপাত ঘটলে ই’তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে ।
৩. প্রাকৃতিক প্রয়োজন এবং জুমার উদ্দেশ্য ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না ।
- উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَخْرُجُ مِنْ مُعْتَكَفِهِ إلَّا لِحَاجَةِ الْإِنْسَانِ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া তাঁর ই’তিকাফের স্থান হতে বের হতেন না ।
৪. কল্যাণকর কথাবার্তা ব্যতীত কোন কথা বলবে না। ই’তিকাফকারীর একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ ।
৫. ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে, রাতে কিংবা দিনে সহবাস করলে ই’তিকাফ বাতিল হয়ে যাবে ।
৬. পানাহার ও ঘুম ই’তিকাফ স্থলেই হবে ।
৭. বিনা প্রয়োজনে সামান্য সময়ের জন্য ই’তিকাফকারী বাইরে গেলে ই’তিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে ।[১৭]
ই’তিকাফের জন্য রোজা শর্ত, তবে কেউ কেউ তা শর্ত হিসেবে গন্য করেননি । ইমাম আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে রোজা শর্ত ।[১৮]
ই’তিকাফের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত নয়, বরং জামাত হয় এমন মসজিদেও ই’তিকাফ হবে । জামাত হয়না এমন মসজিদে ই’তিকাফ শুদ্ধ হবে না ।[১৯]
- হযরত হুযাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-
لَا اعْتِكَافَ إِلَّا فِي مَسْجِدِ جَمَاعَةٍ
জামাতবিহীন মসজিদ ছাড়া ই’তিকাফ হবে না।[২০]
এরূপ বর্ণনা মুসান্নাফে আব্দির রাযযাকে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতেও বর্ণিত হয়েছে ।
ইমাম আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়, এমন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ই’তিকাফ শুদ্ধ নয় । কেননা ই’তিকাফ হল সালাতের জন্য অপেক্ষা করার ইবাদত ।[২১]
মহিলারা মসজিদে ই’তিকাফ করা মাকরূহ । তারা ঘরে ই’তিকাফ করবে । এমন স্থানে যে স্থানকে সে নামাযের জন্য নির্ধারিত করেছে ।[২২]
মহিলাদের জন্য ঘরই হল নামাযের স্থান, সুতরাং তারা সেখানেই ই’তিকাফ করবে ।[২৩]
মসজিদে হেরেম শরীফে ই’তিকাফ থাকা সর্বোত্তম। অতঃপর মসজিদে নববী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এ , তারপর মসজিদুল আকসায় অতঃপর যেখানে বড় জামাত হয় ।[২৪]
ই’তিকাফ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েলঃ
১. ই’তিকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা হল একদিন । এটাই বিশুদ্ধ মত ।
২. মানতের ই’তকাফেও রোজা শর্ত । সুতরাং রাতে মসজিদে ই’তিকাফের মানত করা যাবে না,কেননা রাতে রোজা হয়না । এমনিভাবে কেউ রমজানে মানত করেছে,রমজানের রোজাই ই’তিকাফের জন্য যথেষ্ট ।[২৫]
৩. এক মাসের ই’তিকাফের মানত করেছে, তা রমজানে পূর্ণ করতে পারবে না।[২৬]
৪. স্বামী তার স্ত্রীকে ই’তিকাফের অনুমতি দেয়ার পর বাঁধা দিতে চাইলেও বাঁধা দিতে পারবে না ।[২৭]
৫. মুনিব দাস-দাসীকে অনুমতি দেয়ার পরও বাঁধা দিতে পারবে।কিন্তু গুনাহগার হবে । [২৮]
৬. ই’তিকাফকারী বিনা প্রয়োজনে বের হলেই ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে । অজু ও গোসলের ব্যবস্থা মসজিদে না থাকলে বাইরে যাওয়া যাবে । অনুরূপ আজু গোসলের পানির ফোঁটা মসজিদে ফেলাও যাবে না ।[২৯]
৭. শরঈ হাজতের জন্য, জুমার নামায, ঈদের নামায ও আজান দেয়ার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে । মিনারে যাওয়ার রাস্তা বাইরে দিয়তে হলে মুয়াজ্জিন যেতে পারবে । মিনারের রাস্তা বাইরে হলে আযানের সময় ব্যতীত যাওয়া যাবে না।[৩০]
৮. হাজত সারতে গিয়ে বিলম্ব করা যাবেনা । বিনা প্রয়োজনে বিলম্ব করলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে । হাজতের জন্য অতি নিকটতম জায়গায় যেতে হবে । [৩১]
৯. হাজতের জন্য বের হল, পাওনাদার পাকড়াও করলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।[৩২]
১০. জুমার জন্য মসজিদে এমন সময়ে রওনা দিবে,যাতে মসজিদে গিয়ে চার রাকা’ত ক্বাবলাল জুমা’, অন্য মতে দুই রাকা’ত তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও চার রাকা’ত ক্বাবলাল জুম’আ আদায় করতে পারে এবং জুমা’র পর ছয় রাকা’ত নামায আদায় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে।[৩৩]
১১. ই’তিকাফ অবস্থায় হজ্ব অথবা ওমরার ইহরাম বাঁধলে, ই’তিকাফ পূর্ণ করে নিতে হবে । যদি সময় কম থাকে,তবে হজ্ব বাদ যাওয়ার ভয় হলে আগে তা আদায় করবে, পরে ই’তিকাফ শুরু থেকে করবে। [৩৪]
১২. ই’তিকাফকারী ভুলবশত পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে,ই’তিকাফ নয়। ই’তিকাফকারী ঝগড়া বিবাদ করার কারণে ই’তিকাফ ভঙ্গ হবেনা। তবে ই’তিকাফ বরকতবিহীন হবে ।[৩৫]
১৩. ই’তিকাফ পালনকারী ব্যতীত আর কারও মসজিদে পানাহারের অনুমতি নেই । তবে কেউ তা করতে চাইলে অবশ্যই ই’তিকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করতে হবে, আল্লাহর যিকির করতে হবে এরপর সে পানাহার করতে পারবে।[৩৬]
১৪. ই’তিকাফকারীর নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে মসজিদে কেনাবেচা করা জায়েয। তবে মসজিদের কোন জিনিস বেচা যাবে না এবং জায়গাও নষ্ট করা যাবে না। [৩৭]
১৫. ই’তিকাফকারীর সম্পূর্ণ চুপ থাকা মাকরূহ হবে । সে কেবল অপ্রয়োজনীয় ও মন্দ কথা বলা হতে বিরত থাকবে । প্রয়োজনীয় ও কল্যাণমূলক কথা বলতে পারবে।[৩৮]
১৬. ই’তিকাফ পালনকারী মসজিদে নফল ইবাদত, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, হাদীস শরীফ পাঠ, অধিক হারে দরূদ শরীফ পাঠ, দ্বীনি পাঠ গ্রহণ, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, সাহাবা কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও আউলিয়া কিরাম আলাইহিমুর রাহমাহ প্রমুখদের জীবনী অধ্যয়ন এবং দ্বীনি কিতাবাদি অধ্যয়ন করতে পারবে। [৩৯]
আল্লাহ্ পাক আমাদের এই পবিত্র মাসে ই’তিকাফের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দিন । বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন।
- তথ্যপঞ্জি
১- সূরা আল বাক্বারা,আয়াতঃ ১৮৭ , অনুবাদঃ কানযুল ঈমান।
২- সূরা আল বাক্বারা, আয়াতঃ১২৫ , অনুবাদঃ কানযুল ঈমান।
৩- আল মু’জামুল ওয়াফী, রিয়াদ প্রকাশনী।
৪- আল মুখতাসারুল কুদূরী, আল হিদায়াহ।
৫- শরহে বেকায়াহ, জুরজানী আত তা’রীফাত।
৬- দুররুল মুখতার, আলমগীরি।
৭- সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ই’তিকাফ হাদীস নং-১১৭২, মুসনাদে আহমদ-২৬৩৮০
৮- সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল ই’তিকাফ, হাদীস নং-২০২৬/১৯২২, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ই’তিকাফ-১১৭২, সুনানে আবু দাউদ-২৪৬২, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক-৭৬৮২, মুসনাদে আহমদ-২৪৬১৩,২৫৩৫৫
৯- সহীহ বুখারী, কিতাবুল ই’তিকাফ, হাদীস নং- ২০৪৪/১৯৩৯, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ই’তিকাফ-১১৭১, সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সাওম, হাদীস-২৪৬৫
১০- সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল ই’তিকাফ, হাদীস নং-২০২৫/১৯২১, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ই’তিকাফ-১১৭১, মুসনাদে আহমদ-৬১৭২।
১১- বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান, বাবু ফিল ই’তিকাফ হাদীস-৩৬৮১, তাবরানী আল মু’জামুল কবীর-২৮৮৮
১২- সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সিয়াম, বাবু ফি সাওয়াবিল ই’তিকাফ, হাদীস-১৭৮১, দায়লামী মুসনাদে ফিরদাউস-৬৬৩২।
১৩- তাবরানী আল মু’জামুল আওসাত-৭৩২৬, বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান-৩৬৭৯, হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়িদ-১৩৭১৬
১৪- বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান, ই’তিকাফ অধ্যায়, হাদীস-৩৬৮৪
১৫- সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সাওম, হাদীস-২৪৭৩
১৬- দুররুল মুখতার ওয়া রাদ্দুল মুহতার, ২:৪৪১, দারুল ফিকর বৈরুত , আলমগীরি ।
১৭- আল মুখতাসারুল কুদূরী, আল হিদায়া।
১৮- হিদায়া।
১৯- হিদায়া।
২০- তাবরানী আল মু’জামুল কবীর-৯৫০৯, মাজমাউয যাওয়াইয়িদ-৫০২৭]
২১- হিদায়া।
২২- দুররুল মুখতার, বেকায়া।
২৩- হিদায়া।
২৪- জাওহেরাতুন নিরাহ,ই’তকাফ অধ্যায় ১:১৪৬/১৮৮।
২৫- দুররুল মুখতার, রাদ্দুল মুহতার, আলমগীরি।
২৬- আলমগীরি।
২৭- আলমগীরি।
২৮- আলমগীরি।
২৯- দুররুল মুখতার ওয়া রাদ্দুল মুহতার।
৩০- দুররুল মুখতার ওয়া রাদ্দুল মুহতার।
৩১- রাদ্দুল মুহতার, হিদায়া, আলমগীরি।
৩২- আলমগীরি।
৩৩- দুররুল মুখতার ওয়া রাদ্দুল মুহতার, হিদায়া
৩৪- রাদ্দুল মুহতার।
৩৫- আলমগীরি।
৩৬- রাদ্দুল মুহতার।
৩৭- দুররুল মুখতার ওয়া রাদ্দুল মুহতার, হিদায়া।
৩৮- দুররুল মুখতার, হিদায়া।
৩৯- দুররুল মুখতার।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.