মুজাহিদে আহলে সুন্নাত ড. আল্লামা মুফতি আশরাফ আসিফ জালালী (মাঃজিঃআঃ)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে হিদায়াতের যে নূরানী ধারা শুরু করেছেন তাঁর প্রাথমিক ফয়েজপ্রাপ্ত দল হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম । সমস্ত সাহাবাগণের মধ্যে চার খলিফা সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে চার খলিফার ক্রম তাঁদের খিলাফতের স্তরের আলোকেই হয়েছে। চতুর্থ খলিফা শেরে খোদা হজরত আলী মুরতজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্বীয় অবস্থান অনুসারে আসীন আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা তাতেই বিধিবদ্ধ । অপরদিকে দুটি দল তাঁরই শান নিয়ে উগ্রতা ও শৈথিল্যতা প্রদর্শন করছে । একদল তাঁর সেসব শানকে অস্বীকার করছে যা তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান করে মহিমান্বিত করেছেন । আরেকদল তাঁর মহিমা বাড়াতে গিয়ে তাঁর শানে এমন বর্ণনার অবতারণা করে যা রাব্বুল আলামীন তাঁকে দান করেননি।
হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে লোকদের এমন মনোভাবের সংবাদ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগেই প্রদান করে দেন । এমনকি খোদ আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে ইরশাদ করেন –
فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَى أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّى بَهَتُوا أُمَّهُ وَأَحَبَّتْهُ النَّصَارَى حَتَّى أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَتْ لَهُ ثُمَّ قَالَ: يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلَانِ مُحِبٌّ مُفْرِطٌ يُقَرِّظُنِي بِمَا لَيْسَ فِيَّ وَمُبْغِضٌ يَحْمِلُهُ شَنَآنِي عَلَى أَنْ يَبْهَتَنِي
আলী, তোমার সাথে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের একটি সাদৃশ্য রয়েছে । ইহুদীরা তাঁর সাথে শত্রুতা করে, এমনকি তার মাতা মরিয়ম আলাইহাস সালামের প্রতি কুৎসা রটনা করে । আর খ্রিস্টানরা তাঁকে ভালোবাসতে গিয়ে তার এমন মহিমা বর্ণনা করে যা তাঁর মধ্যে নেই । অতঃপর মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে নিয়েও দুটি দল ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে । একদল যারা আমার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করবে, এরা আমার এমন গুণাবলি ও মহিমা বর্ণনা করবে যা আমার মধ্যে নেই । অপর দল আমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারী, এদের হিংসা ঐ পর্যায়ে পৌছে যাবে যে এরা আমার প্রতি অপবাদ রটাবে । [১]
এই ধারার সূচনা তখন হয় যখন ইহুদী কুচক্রী আব্দুল্লাহ বিন সাবা মুসলমান বেশ ধারণ করে ফিতনা ছড়াতে আরম্ভ করে । আর সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নির্বাচিত প্রথম খলিফা হিসেবে অস্বীকার করত হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রথম খলিফা ঘোষণা দেয় । প্রসীদ্ধ রাফেজী কিতাব ‘রিজালুল কাশশী’ তে বিস্তারিত লেখা হয় –
وذَکَرَ بعضُ أهلِ العلمِ أنّ عبدالله بنْ سبأ کانَ یهودیّا فأسلمَ والی علیّا عليه السلام و کانَ یقولُ و هو علی یهودیتِه فی یوشع بن نون وصی موسی بالغُلُوّ فقالَ فی إسلامِه بعد وفاتِ رسولِ الله فی علیّ عليه السلام مثل ذالک و کان أوَّل منْ شَهَرَ بِالقولِ بفرضِ إمامَةِ علی
কতেক আলিমের মতে, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ইহুদী ছিল, পরে মুসলমান হয় এবং সে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি ভক্তি ভালোবাসার দাবী করতে শুরু করে । যখন সে ইহুদী ছিল তখন সে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অসি বা প্রতিনিধি ইউশা’ বিন নূনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করত । ইসলাম গ্রহণের পর হুজুর কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়া হতে পর্দা করার পর সে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারেও এরূপ বাড়াবাড়ি করতে থাকে । সেই প্রথম ব্যক্তি যে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে বক্তব্য দেয় । [২]
ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল করীম শাহরাস্তানী তার ব্যাপারে উল্লেখ করেন-
هوَ أوَّلُ مَنْ أظْهَرَ القَولَ بالنَّصِ بِإمامةِ عليّ رضي الله عنه ومِنه انْشَعَبَتْ أصْنَاف الغلُاة
আব্দুল্লাহ বিন সাবাই প্রথম ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম এই প্রচারণা চালানো শুরু করে যে, হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুই নির্বাচিত মনোনীত খলিফা । এরপর এরূপ বাড়াবাড়ির ক্ষেত্রে আরো অনুসারী সৃষ্টি হয় । [৩]
হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে ভক্তি ও হিংসার এই ধারা রাফেজী ও খারেজীদের দ্বারা শুরু হয়ে যায় । বিশেষত রাফেজী ফিরক্বার উদ্ভব এমন এক অসম্ভাব্য ব্যাপার ছিল যে, ইমাম আবু নুয়াইম বিশিষ্ট তাবেঈ মায়মুন ইবন মিহরানের ফয়সালা ফুরাত বিন সায়িব হতে বর্ণনা করেন এভাবে-
قَالَ: سَأَلْتُ مَيْمُونَ بْنَ مِهْرَانَ قُلْتُ: عَلِيٌّ أَفْضَلُ عِنْدَكَ أَمْ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ؟ قَالَ: فَارْتَعَدَ حَتَّى سَقَطَتْ عَصَاهُ مِنْ يَدِهِ، ثُمَّ قَالَ: ” مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنْ أَبْقَى إِلَى زَمَانٍ يُعْدَلُ بِهِمَا، ذَرْهُمَا، كَانَا رَأْسَيِ الْإِسْلَامِ، وَرَأْسَيِ الْجَمَاعَةِ. فَقُلْتُ: فَأَبُو بَكْرٍ كَانَ أَوَّلَ إِسْلَامًا أَمْ عَلِيٌّ؟ قَالَ: وَاللهِ لَقَدْ آمَنَ أَبُو بَكْرٍ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَمَنَ بَحِيرَا الرَّاهِبِ حِينَ مَرَّ بِهِ
আমি হজরত মায়মুন বিন মিহরানের নিকট প্রশ্ন করলাম, আপনার নিকট কে উত্তম হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নাকি হজরত আবু বকর ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ? এ প্রশ্ন শুনে তাঁর মধ্যে শিহরন শুরু হয়ে এমনকি কাঁপতে কাঁপতে তাঁর হাতের লাঠি পড়ে গেল । অতপর তিনি বললেন, আমি জানতাম না যে আমি ঐ সময় পর্যন্ত জীবিত থাকবো যখন তাঁদের উভয়ের বরাবর কাউকে দাঁড় করানো হবে । তাঁদের তুলনা এখানেই রেখে দাও যে, তাঁরা মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের প্রধান সর্দার ও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন । অতঃপর আমি প্রশ্ন করলাম কে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন ? হজরত আবু বকর না হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা ? তিনি বলেন, হজরত সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তো তখনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন যখন তাঁর সাথে পাদ্রী বুহাইরার সাক্ষাৎ হয়েছিল। [৪]
বর্ণিত দলীল রাফেজী ফিরক্বার প্রাথমিক অবস্থান নির্দেশ করছে, কিন্তু এই ফিরক্বাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতে প্রবেশ করে মিশে সুন্নী পরিচয়ে শিয়াবাদের ধারণার অবতারণা রাফেজী -শিয়া ফিরক্বা হতেও মারাত্মক ফিরক্বা বলে মেনে নেয়া যায় ।
মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নিকট অকাট্যভাবে প্রমাণিত । বেলায়াতের যে উচ্চ মক্বামে তিনি অবস্থান করছেন তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস সকলের আছে । তবে বেলায়াতের যে অর্থ রাফেজী ও তাদের প্রেতাত্মারা ধারণ করে এবং প্রচার করে তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা নয় । আর আবহমান কাল ধরে নানা ছলে তাঁর বেলায়াত ও খিলাফাতের যে অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে তাতেও নয় ।
হজরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর বেলায়াতের অর্থ হল, তিনি মুসলমানদের প্রিয়ভাজন ও সাহায্যকারী এবং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন বান্দাহ । হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অবিভাবকত্ব মুসলমানদের জন্য নিদর্শন আর আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অবিভাবকত্ব ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা হজরত আলী ও আহলে বাইত রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমের নির্দেশনা ।
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى أَبِي فَقَالَ أَخْبِرْنِي عَنْ أَبِي بَكْرٍ ؟ قَالَ عَنِ الصديقِ تَسْأَلُ ؟ قَالَ : وَتُسَمِّيهِ الصديقَ ؟ ! قَالَ : ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ ، قَدْ سَمَّاهُ صِدِّيقًا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ فَمَنْ لَمْ يُسَمِّهِ صِدِّيقًا فَلَا صَدَّقَ اللَّهُ قَوْلَهُ اذْهَبْ فَأَحِبَّ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَتَوَلَّهُمَا ، فَمَا كَانَ مِنْ أَمْرٍ فَفِي عُنُقِي
হজরত ইমাম জাফর সাদিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আমার পিতার নিকট এসে প্রশ্ন করল আমাকে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্বন্ধে বলুন, তুমি কি সিদ্দিক [সত্যয়নকারী] সম্বন্ধে জানতে চাইছো ? প্রশ্নকারী বলল আপনিও তাকে সিদ্দিক বললেন !? জবাবে তিনি ফরমান, তোমার মা সন্তান হারানোর শোকে পতিত হোক । তাঁকে সিদ্দিক উপাধি প্রদান করেছে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমার থেকে উত্তম এবং আনসার ও মুহাজিরগণ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। যে কেউ তাঁকে সিদ্দিক মানবেনা আল্লাহ তা’আলা তার কোনো কথাকেই সত্যায়িত না করুক । যাও, হজরত সিদ্দিকে আকব ও ফারূকে আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে ভালোবাসো তাঁদের উর্ধ্বতন মানো । যদি তোমার উপর কোন বোঝা থাকে তা আমার ঘাড়ে দিয়ে দাও । [৫]
মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য হল, হজরত সায়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রথম নির্বাচিত খলিফা । যেখানে রাফেজীদের বিশ্বাস হল প্রথম খলিফা হজরত আলী মুরতাজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ।
প্রফেসর ড. তাহেরুল ক্বাদেরী রচিত “السيف الجلى على منكر ولايت على رضي الله عنه” আস সাইফুল জালী আলা বেলায়াতে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শীর্ষক কিতাবটি অনেকাংশে এই [শিয়াবাদী] মতেরই অনুসরণ করে । এই কিতাব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সামগ্রিক অবস্থানকে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে । আর এই কিতাবে রাফেজীদের অবস্থানকে নানাভাবে শক্তিশালী করেছে । যেমন:
১. এই কিতাবে তিনি বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরবর্তী খলিফা অর্থাৎ সরাসরি তাঁর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন । আর হজরত আলী মরতুজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বেলায়াতের দিক থেকে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিশ হন অর্থাৎ তিনিই বেলায়াতের পরবর্তী কর্নধার। [৬]
প্রফেসর সাহেব তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালান, কেননা আহলে সুন্নাতের মতে সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সর্বোপরি খলিফা, কেবলমাত্র প্রাশাসনিক প্রধান নন তিনি মুসলিম জাহানের নেতা মনোনীত হন । প্রফেসর সাহেব রাফেজীদের মতকে প্রমাণিত করে দেন, কেননা তাদের মতে বেলায়াতের সম্রাট হওয়াই তো খেলাফতের মালিক বনে যাওয়া । ঠিক এমনিভাবে প্রফেসর সাহেব ‘অর্থাৎ’ বলে বেলায়াতের সরাসরি সম্রাট উল্লেখ করেন । যেমনিভাবে রাফেজী মুজতাহিদ আবুল হাসান আল ইরবালী তার ‘কাশফুল গুম্মাহ’ নামক কিতাবের আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত শীর্ষক অধ্যায়ে বিস্তারিত লিখেছে । [৭] আস ‘সাইফুল জালী’ নামক কিতাবে এই রাফেজীদের এই মতকেই প্রাধান্য দেয়া হয় এমনকি প্রফেসর সাহেব তার এই কিতাবের ৮ম পৃষ্ঠায় এই বেলায়াতকে ইমামত হিসেবে মত প্রদান করেন । তার এই বক্তব্যের ফলে রাফেজীরা বগল বাজাতে থাকে এই বলে যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সাথে সম্বন্ধিত একজন ব্যক্তি তার বক্তব্য লেখনীর মাধ্যমে তাদের [শিয়াবাদ] আক্বীদাকে পোক্ত করছে ।
২. বেলায়াতকে তিনি কতেক দিক দিয়ে খেলাফত হতে মহত্বম বর্ণনা করে খেলাফতের মর্যাদা ক্ষীণ করেছেন ।
- তিনি বলেন, খেলাফত জনগণের দ্বারা নির্বাচন হয় আর বেলায়াতের নির্বাচন আল্লাহ পাক হতে।
- খেলাফত যমীনের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য আর বেলায়াত আসমানী হুসন তথা সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দ্বারা দুনিয়াকে আলোকিত করতে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ।
- খেলাফত ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ন করে আর বেলায়াত ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ করে ।
- খেলাফতের ব্যাপ্তি কেবল দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ আর বেলায়াতের ব্যাপ্তি আরশ পর্যন্ত ।
৩. তিনি সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খেলাফতকে রাজনৈতিক বলেছেন আর শেরে খোদা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকে আধ্যাত্মিক বলেছেন । বর্তমান সময়ের ‘রাজনৈতিক’ শব্দ যদি দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধ হতে মুক্তও হয় তবুও মানুষ একে দুনিয়াবী হিসেবেই মেনে নিবে । খেলাফতের আধ্যাত্মিকতার সাথে যখন রাজনীতির তুলণা বা মিশ্রণ করা হলো, তাহলে তা দ্বারা এই কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে খেলাফত কেবল দুনিয়াবী কার্যসম্পাদনেরই নাম । হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন – كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ
বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের উম্মতকে শাসন করতেন । [৮]
রসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অর্পিত এই খেলাফত আধ্যাত্মিকতামুক্ত কি ? সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং স্বীয় ইমামতের স্থানে দাঁড় করিয়ে একথা স্পষ্ট করে দেন যে এই খেলাফতের ধারা ঈমানী ও আধতাত্মিকও ।
৪. খেলাফতকে জাহেরী ও বাতেনী এ দুপ্রকারে ভাগ করেন তিনি, এরপর বাতেনী খেলাফতকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি লিখেন দুনিয়াবী খেলাফত জনগণ দ্বারা নির্ধারিত আর আধ্যাত্মিক খেলাফত আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত ।
খেলাফতের এই দিক ও ফজীলত বর্ণনা করে প্রফেসর সাহেবের বক্তব্য হতে প্রমাণ হয় যে, তিনি কেবল হজরত মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উপর কেবল মাহাত্ম্য প্রদান করেননি বরং; ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর মর্যাদার অবনমনও করেছেন । আর স্বীয় ইজতিহাদ ও বক্তব্য দ্বারা একথা প্রমাণে চেষ্টা করেন যে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হজরত সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে উত্তম (আল্লাহ মাফ করুন) । যেখানে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত উত্তম সেখানে তিনি অন্যদের চেয়ে উত্তম । অথচ এই বক্তব্য তো স্পষ্টভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিশ্বাসের পরিপন্থী এবং রাফেজীদের সমর্থিত মত। এ মন্তব্য সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভুল, কেননা প্রফেসর সাহেবের মতে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট সরাসরি খেলাফত (বেলায়াত) ছিল যা দুনিয়াবী খেলাফত হতে উত্তম । তাহলে তাঁর চতুর্থ খলিফা হওয়ার কী প্রয়োজন ছিল ? কিন্তু তিনি কেবল খেলাফতই গ্রহণ ও নির্বাচিত হননি এ নির্দেশও প্রদান করেন যে, যার বর্ণনা রাফেজীদের কিতাবেই উল্লেখ হয়েছে-من لم يقل لى رابع الخلفاء فعليه لعنة الله
যে ব্যক্তি আমাকে চতুর্থ খলিফা বলে মানে না তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত । [৯]
কিসের উপর ভিত্তি করে তিনি সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকে কেবল প্রশাসনিক খেলাফত আখ্যায়িত করে আধ্যাত্মিকতাকে অস্বীকার করছেন । যেখানে হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا لَهُ وَزِيرَانِ مِنْ أَهْلِ السَّمَاءِ وَوَزِيرَانِ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، فَأَمَّا وَزِيرَايَ مِنْ أَهْلِ السَّمَاءِ فَجِبْرِيلُ وَمِيكَائِيلُ، وَأَمَّا وَزِيرَايَ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ فَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ
প্রত্যেক নবীরই আসমানবাসীদের মধ্য হতে দুজন উজির বা সাহায্যকারী এবং যমীনের আধিবাসীদের মধ্য হতে দুজন উজির রয়েছে । আসমানে আমার দুজন উজির হল জিবরাঈল ও মিকাঈল আলাইহিমুস সালাম এবং যমীনে আমার দুজন উজির হল আবু বকর ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলাআনহুমা । [১০]
শেষ পর্ব পড়ুন- https://wp.me/p7H2z7-gO
তথ্যসূত্রঃ
১. মুসনাদে আহমদ, আহমদ শাকির কর্তৃক তাহকীককৃত ২:১৬৭ হাদীস-১৩৭৬ দারুল হাদীস কায়রো , মিশকাতুল মাসাবীহ কিতাবুল মানাক্বিব,বাবু মানাক্বিবে আলী (রাঃ) হাদীস- ৩১০২ ।
২. মুহাম্মদ বিন উমর কাশশী কৃত রিজালুল কাশশী ১০৯/২৩৪ পৃষ্ঠা ।
৩. মুহাম্মদ বিন আব্দুল করীম শাহরাস্তানী আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১:১৯২/১:১৭৪ পৃষ্ঠা ।
৪. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী কৃত হিলয়াতুল আউলিয়া ওয়া ত্বাবক্বাতু আসফিয়া ৪:৯৩ পৃষ্ঠা দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ ও দারুল কিতাবিল আরাবী হতে প্রকাশিত ।
৫. ইমাম শামসুদ্দিন যাহাভী কৃত সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪;৩৯৫ মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ বৈরুত হতে প্রকাশিত ।
৬. ড. তাহেরুল ক্বাদেরী কৃত আস সাইফুল জালী আলা বেলায়াতে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু পৃষ্ঠা ৬, মিনহাজ পাবলিকেশন্স ।
৭. কাশফুল গুম্মাহ ১:৬২ পৃষ্ঠা ।
৮. সহীহ আল বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া , হাদীস নং-৩৪৫৫, ৬ষ্ঠ খন্ড ১৩৭,১৩৮ পৃঃ হাদীস-৩০৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ।
৯. হাশিম বাহরানী কৃত আল বুরহান ১:১৬৯, শাহ্র বিন আশুর কৃত মানাক্বিবে আলে আলী ইবন আবী ত্বালিব ৩:৬৩ ।
১০. সুনানে তিরমিযী, আবওয়াবুল মানাক্বিব হাদীস নং-৩৬৮০ ।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.