ওয়েব সম্পাদনায়ঃ মুহাম্মদ গোলাম হুসাইন
জন্মঃ
উপমহাদেশের স্বনামধন্য আলেমে দ্বীন, মুফতি, হাফেজ মুহাম্মদ শফী উকাড়ভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী শেখ করম ইলাহীর ঔরশে ১৯২৯খৃীষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪৯হিজরিতে পূর্ব পাঞ্জাবের (ভারত) খেমকরণে জন্ম গ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবনঃ
তাঁর স্কুল শিক্ষা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত, ধর্মীয় শিক্ষায় দরসে নিযামী, দাওরায়ে হাদীস ও তাফসীর। দরসে নিযামীর সনদ, দারুল উলুম আশরাফিয়া মাদারিস উকাড়ার শায়খুল হাদীস ওয়াত্ তাফসীর হযরত মাওলানা গোলাম আলী আশরাফী উকাড়ভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে অর্জন করেন। আর হাদীসের সনদ মুহাদ্দিসীনের নিয়মাবলী অনুসারে মাদ্রাসায়ে আরাবিয়্যা ইসলামিয়া আন্ওয়ারুল উলুম, মুলতানের শায়খুল হাদীস ওয়াত তাফসীর গাজ্জালি-এ যামান মাওলানা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাযেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে অর্জন করেন।
বিপ্লবী জীবনঃ
ছাত্র জীবনে তিনি তাঁর মুর্শেদে বরহক، ও অন্যান্য ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের সঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেন এবং ভারত বিভাজন পর্যন্ত একজন নিরলস কর্মী হিসেবে কাজ করে যান। তিনি ১৯৪৭সালে পাঞ্জাব থেকে হিজরত করতঃ চলে আসেন উকাড়ায়। ১৯৫২ – ৫৩সালে শুধুমাত্র শানে মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর উদ্দেশ্যেই পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করেন খতমে নবুওয়াত আন্দোলনে। এ আন্দোলনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দশ মাস যাবৎ সাহীভাল জেলা কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। কারারুদ্ধ অবস্থায় তাঁর প্রথম সন্তান তানভীর আহমদ(৩) ও মুনীর আহমদ (১) ইন্তিকাল করেন।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি সমগ্র দেশে জিহাদের জন্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলে হাজার হাজার টাকা দান করেন। তদুপরি তাঁর তাকরীরের সমাবেশগুলোতে জনগণ হাজার হাজার নগদ টাকা এবং বিভিন্ন মালামাল সামগ্রী দান করতো। সংগৃহীত টাকা ও সম্পদসহ ওলামায়ে কেরাম নিয়ে তিনি আযাদ কাশ্মীরে গমন করতেন এবং অধিকৃত কাশ্মীরের মজলুম মুহাজিরদের ক্যাম্প সমূহে নিজ হাতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতেন। আযাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন সমাবেশে জিহাদের গুরুত্বে، মুজাহিদদের মহত্ত্ব ও শান সম্বন্ধে আবেগাপ্লুত তাকরীর করতেন।
খিতাবতঃ
আল্লামা উকাড়ভী সাহীভালের মুহাজিরীন জামে মসজিদে করাচীর কেন্দ্রীয় মেমন মসজিদ ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদে, আরামবাগ জামে মসজিদ, মসজিদে নূর ও জামে মসজিদ গুলযারে হাবীবের খতীব ও ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ মসজিদসমূহে ধারাবাহিকভাবে তাফসীরে কোরআনের দরস দিতেন। প্রায় ঊনবিংশ বৎসরে নয় পারা কোরআনের তাফসীর বর্ণনা করেছেন। তিনি চল্লিশ বৎসর যাবৎ অসংখ্য মাহফিল ও সমাবেশে দ্বীন ও মাযহাবের বিভিন্ন বিষয়ে তাকরীর করেছেন। তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, সুন্দর উপস্থাপনা ও সুকন্ঠের কারণে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। প্রত্যেক জলসায় হাজার হাজার, কোন কোন মাহফিলে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতো। হয়তো পাকিস্তানের এমন কোন এলাকা নেই যেখানে তাঁর নূরানী তাকরীর হয়নি। এ ছাড়াও তিনি দ্বীন ও মাযহাবের প্রচারের জন্যে মধ্যপ্রাচ্য, উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিন সহস্রাধিক বিধর্মী তাঁর হাতে মুসলমান হয়েছে। তাঁর তাকরীরের প্রভাবে হাজার হাজার মানুষের আক্বিদা ও আমলের সংশোধন হয়েছে।
সাংগঠনিক কর্মকান্ডঃ
তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় , জাতীয় ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে উল্লেখযোগ্য খেদমত আঞ্জাম দেন । তিনি কেন্দ্রীয় জামাআতে আহলে সুন্নাত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতীয় সীরাত কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আঞ্জুমান-এ-আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। আর পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করেছেন- সুন্নী তাবলীগী মিশন, আঞ্জুমান-এ-মুহিব্বানে সাহাবা ওয়া আহলে বায়ত, তানযীমে আয়িম্মা ওয়া খোতবায়ে আহলে সুন্নাত এর মসজিদ সমূহ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা, গবেষণা ও সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় পর্যায়ঃ
১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে করাচীর সবচেয়ে বৃহৎ নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে মাওলানা উকাড়ভীকে মজলিসে শূরা’র একজন সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এ সময়ে তিনি ইসলামী আইন মোতাবেক সংবিধান প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন কমিটির সদস্য ছিলেন। ইন্তিকালের কিছু দিন পূর্বেও কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ বিভাগ পাকিস্তানের প্রধান পরিদর্শক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী বিভাগের সদস্য নিয়োজিত হন। মুসলিম ঐক্য গঠনের নিমিত্তে সমগ্র দেশজুড়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল, আফগান মুজাহিদীন, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত মানুষের সাহায্য তহবিল গঠনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
হজ্বে বায়তুল্লাহঃ
আল্লামা উকাড়ভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ষোলবার হজ্ব এবং উমরা পালন এবং পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারার যিয়ারত লাভে ধন্য হন।
ওফাতঃ
এ স্বনামধন্য খতীব ১৯৭৪ সালে প্রথমবার এবং ১৯৭৫সালে দ্বিতীয়বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ছয়সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৮৪সালের ২০ এপ্রিল তাঁর হাতে গড়া গুলযারে হাবীব জামে মসজিদে তিনি আখেরী খোৎবা দান করেন। ঐ রাতে তৃতীয়বার প্রবল হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিন দিন পর ২১শে রজব, ১৪০৪হিজরী মোতাবেক ২৪শে এপ্রিল, ১৯৮৪ ইংরেজী মঙ্গলবার ফজরের আযানের পর উচ্চস্বরে দরূদ-সালাম পাঠ করতঃ মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে পৌঁছে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বৎসর।
লিখিত গ্রন্থাদিঃ
তিনি ইসলামী আকায়েদ, আদর্শ ও ঐতিহ্যের আলোকে অনেক গবেষণামূলক কিতাব রচনা করেছেন।
(১০) যিকরে জামীল (২) যিকরে হাসীন (৩) রাহে হক্ব، (৪) দরসে তাওহীদ (৫) শামে কারবালা (৬) রাহে আকীদত (৭) ইমামে পাক আউর ইয়াযীদে পলীদ (৮) বরকাতে মীলাদ শরীফ (৯) সাওয়াবুল ইবাদত (১০) নামায মুতারজম (১১) সফীনায়ে নূহ (১২) মুসলমান খাতুন (১৩) আন্ওয়ারে রিসালাত (১৪) মাসআলায়ে তালাকে সালাসা (১৫) নাগমায়ে হাবীব (১৬) মাসআলায়ে সিয়াহ্ খিজাব (১৭) আঙ্গুঠে চুমনে কা মাসআলা (১৮) আখলাক ও আমল (১৯) তা’আরূফে উলামায়ে দেওবন্দ (২০) মীলাদে শফী (২১) জিহাদ ও ক্বিতাল (২২) আয়নায়ে হাকীকত (২৩) মাকালাতে উকাড়ভী (২৪) নুজুমুল হিদায়ত (২৫) মাসআলায়ে বীস তারাভীহ ইত্যাদি।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.