আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন।
প্রশ্নঃ যায়েদ বলেছে মাওলানা আহমদ রেযা খান প্রত্যেক চিঠি পত্রে লিখে থাকেন যে, লিখক ‘আব্দুল মুস্তাফা’ অথচ (মানুষ)আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো বান্দা কিভাবে হতে পারে? আমি নগণ্য উত্তর দিয়েছি,আরে ভাই ! ‘আব্দুল মুস্তাফা’ দ্বারা গোলামে মুস্তাফা বা রাসূলের গোলাম উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে,বান্দা উদ্দেশ্য নয়।
উত্তরঃ
- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُم
অর্থাৎ,তোমারা তোমাদের বিধবাদেরকে বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা উপযুক্ত তাদেরও।১
অত্র আয়াত খানায় আমাদের দাস দাসীদেরকে আমাদের বান্দা বলা হয়েছে।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ فِي عَبْدِهِ وَلَا فَرَسِهِ صَدَقَةٌ–
অর্থাৎ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন,
মুসলমানদের উপর তার বান্দা ও ঘোড়ার ব্যাপারে কোন যাকাত নেই।২
- হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অনেক সাহাবীকে একত্রিত করতঃ সকলের উপস্থিতিতে মিম্বরের উপর স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন,
كنت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وكنت عبده و خادمه
অর্থাৎ আমি সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর সাথে ছিলাম আর আমি তাঁর গোলাম এবং খাদেম।৩
মসনবী শরীফে হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্রয়ের ঘটনায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুজুর সাইয়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর দরবারে আরয করলেন,
گفت ما دو بندگان کوئے تو– کہ دمش آزادہم بروروئے تو
অর্থাৎ তিনি আরো বললেন,আমরা দুইজনই আপনারই গোলাম।আপনার সৌজন্যে তার রক্ত মুক্ত করেছি।৪
- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم
হে মাহবুব !(আপনি আপনার উম্মতদেরকে সম্বোধন করে বলে দিন)হে আমার বান্দারা ! যারা তাদের আত্মার উপর অত্যাচার করেছো,তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব পাপকে ক্ষমা করে দেন।নিশ্চই তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।৫
মসনবী শরীফে রয়েছে,
بندۂ خود و خواند احمد در شاد – جملہ عالم رانجواں قل یعباد
ওহাবী সম্প্রদায়ের হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী সাহেব যখন কিনা সে মুসলমান ছিল (অর্থাৎ কুফুরী প্রকাশের আগে) সে তার ‘হাশিয়ায়ে শামায়িমু ইমদাদিয়্যাহ’তে কুর’আনে কারীমের উদ্দেশ্য এরুপ হবে বলে জোর দিয়েছে যে, “সারা জাহান রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বান্দা।” (উক্তিটির) বাহ্যিক চাকচিক্য পড়ে গাংগুহী সাহেব একে বড় শির্ক বলেছে।অথচ সবচেয়ে বড় শির্কের শিকার হয়েছে গাংগুহী সাহেব নিজেই।‘বারাহিনে ক্বাতিয়ার’ মধ্যে সে পরিস্কারভাবে শয়তানকে খোদার সমকক্ষ মেনে নিয়েছে।(নাউযুবিল্লাহ) যার বিশদ বর্ণনা হারামাঈন শরীফাইনের ওলামায়ে কিরামের ফতোয়া ‘হুসসামুল হারামাইন আলা মানহারিল কুফরী ওয়াল মাইন’ এ রয়েছে।এবং ‘আব্দুল মুস্তফা’ বলা সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আমার লেখা রিসালাহ ‘বজলুস সাফা লিয়াবদে মুস্তফা’ তে বিদ্যমান আছে।
ওহে কাঙ্গাল ! আল্লাহর বান্দা তথা খোদা সৃষ্ট এবং খোদার মালিকানাধীন তো মু’মিন কাফের সকলেই।মু’মিন তো ঐ ব্যক্তিই যেকিনা ‘আব্দুল মুস্তাফা’ (মুস্তাফার গোলাম)।ইমামুল আউলিয়া,অগ্রগণ্য আলেম হযরত সাইয়্যেদুনা সাহল বিন আব্দুল্লাহ তাস্তরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
من لم يرنفسه فى ملك النبى صلى الله عليه وسلم لا يذوق حلاوة الايمان
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে নবীর মালিকানাধীন মনে করবে না সে ঈমানের স্বাদ পাবে না।
আপনারা কি দেখননি ? যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নূর মুবারক সাইয়্যেদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর পেশানীতে(কপালে) আমানত রেখেছিলেন এবং ঐ নূরের সম্মাণার্থে সকল ফেরেশতাগণকে সিজদা করার হুকুম দিলেন।সকলেই সিজদা করেছেন,(কিন্তু)অভিশপ্ত ইবলিশ সিজদা করে নাই।সে কি ঐ সময়ে আল্লাহর বান্দা হওয়া থেকে কর্তিত হয়ে গিয়েছিল? আল্লাহর মাখলুক ও তাঁর মালিকানাধীন ছিল না ? এমন হওয়াটাতো একেবারেই অসম্ভব(অর্থাৎ অবশ্যই সে আল্লাহর বান্দা বা আব্দুল্লাহ ছিল)।বরং নবীর নূরের সম্মানে মাথা নত না করাতে আব্দুল মুস্তাফা(নবীর গোলাম) হয়নি, এজন্য সে চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও প্রত্যাখান হয়েছে।
মানুষের (এ ব্যাপারে) স্বাধীনতা রয়েছে যে,চাই সে আব্দুল মুস্তাফা (নবীর গোলাম) হয় এবং সম্মানিত ফেরেশতাগণের সাথী হয় অথবা তা হওয়া থেকে অস্বীকার করে অভিশপ্ত ইবলিশের সঙ্গী হয়।
[আল্লাহ তায়ালাই অধিক ভালো জানেন]তথ্যপঞ্জিঃ
১ – সূরা নূর,আয়াত-৩২
২ – সহীহ বুখারী,বাবু লাইসা আলাল মুসলিমে ফী আব্দীহি সাদাক্বাতুন,হাদীস-১৪৬৪,সহীহ মুসলিম বাবু লা যাকাতু আলাল মুসলিমে ফী আব্দিহী ওয়া ফারাসিহী,হাদীস-৯৮২/১০(মাকতাবায়ে শামেলাহ),সুনানে নাসায়ী,বাবু যাকাতুল খাইল,হাদীস-২৪৬৮।
৩ – এই হাদীসকে ওহাবী নেতা ইসমাঈল দেহলভী’র বড় দাদা জনাব শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলভী সাহেব হযরত ইমামে আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর রেফারেন্সে ‘ইযালাতুল খিফা’ এবং ‘কিতাবুর রিয়াদিন নাদরা’ এর মধ্যে লিখেছেন।ইমাম আবু হানিফা থেকে তিনি সনদ নেওয়াতে তা গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
৪ – মসনবী শরীফ,আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৫ – সূরা যুমার,আয়াত-৫৩।
Discover more from RoushanDAlil.com
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নূর মুবারক সাইয়্যেদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর পেশানীতে(কপালে) আমানত রেখেছিলেন এবং ঐ নূরের সম্মাণার্থে সকল ফেরেশতাগণকে সিজদা করার হুকুম দিলেন।সকলেই সিজদা করেছেন,(কিন্তু)অভিশপ্ত ইবলিশ সিজদা করে নাই।সে কি ঐ সময়ে আল্লাহর বান্দা হওয়া থেকে কর্তিত হয়ে গিয়েছিল? আল্লাহর মাখলুক ও তাঁর মালিকানাধীন ছিল না ? এমন হওয়াটাতো একেবারেই অসম্ভব(অর্থাৎ অবশ্যই সে আল্লাহর বান্দা বা আব্দুল্লাহ ছিল)।বরং নবীর নূরের সম্মানে মাথা নত না করাতে আব্দুল মুস্তাফা(নবীর গোলাম) হয়নি, এজন্য সে চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও প্রত্যাখান হয়েছে।